জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

জোরদার হচ্ছে ভেজালবিরোধী অভিযান

রমজান বা বিশেষ উপলক্ষ ছাড়াই এবার জোরদার হচ্ছে ভেজালবিরোধী অভিযান। পরিকল্পনা আছে বাজার তদারকিতেও বিশেষ জোর দেওয়ার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

সম্প্রতি হাইকোর্টের আদেশে ৫২টি পণ্য বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা, ভেজালবিরোধী অভিযান ও বাজার তদারকি অভিযানগুলো বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, রমজান মাসে বেশ কয়েকটি নামিদামি ব্র্যান্ড ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা গুনতে হয় এ অভিযানের কারণে। যেসব সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ এসব অভিযান পরিচালনা করে, তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

এসময় আড়ং, পারসোনা, দূরপাল্লার আন্তঃনগর বাস ও ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ৫২টি পণ্য বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আলোচনায় আসে অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়। তাদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে খোদ উচ্চ আদালত।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ বলবতে প্রতিষ্ঠিত এ অধিদফতরের বয়স যত বেড়েছে, তার সঙ্গে বেড়েছে অভিযান ও জরিমানার সংখ্যা। আগের যেকোনো বছরের তুলনায় সদ্য শেষ অর্থবছর, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুরো দেশে অধিদফতর মোট ৭ হাজার ৩৪৩টি অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে বাজার তদারকি ও ভেজালবিরোধী অভিযানও রয়েছে। এসব অভিযানে দণ্ডের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হয় ১৯ হাজার ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানকে। আর জরিমানা আদায় করা হয় ১৪ কোটি ৮১ লক্ষ ৪২ হাজার ১৫০ টাকা।

এছাড়াও, অধিদফতরের কাছে অভিযোগ করেন ৭ হাজার ৫১৫ জন ভোক্তা। যার মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয় ৭ হাজার ১৮৫টি অভিযোগ। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৪৬৮টি। আর, অভিযোগ থেকে আরোপিত দণ্ডের মাধ্যমে আদায় করা হয় ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা।

অভিযোগকারী ভোক্তার মধ্যে ১ হাজার ৪৬১ জন ভোক্তা আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ পেয়েছেন, যার আর্থিক মূল্য ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩২৫ টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে সংস্থাটি জমা করেছে মোট ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৫২৫ টাকা।

গত ৫ মে থেকে শুরু করে ৪ জুন ঈদুল ফিতরের আগের দিন পর্যন্ত এ সংস্থাটি মোট অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ১৯১টি। অভিযান ও ভোক্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজার ২৭৩টি। শুধু এক মাসেই অধিদফর ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করে। একই সময় সরকারি কোষাগারে মোট ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ৩৭৫ টাকা জমা করে অধিদফতর।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এমন পদক্ষেপে খুশি সাধারণ জনগণও। আর, সেখান থেকেই আগামীতে কঠোর অভিযানের অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন বলে জানান অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন গণমাধ্যমকে বলেন, এ অভিযান আরও জোরদার করা হবে। শুধু নির্দিষ্ট দিবস বা উপলক্ষ নয়, যখনই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যাবে, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, গত রমজান মাসে আমাদের একটি প্রশ্ন বারবার শুনতে হয়েছে যে, শুধু রোজার সময়ই কেন আমরা অভিযান করি? কিন্তু, বাস্তবতা মোটেও এমন না। সারাবছরই ভেজালবিরোধী অভিযান বা বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করা আমাদের রুটিন কাজ। রমজান শেষে এখনও কিন্তু আমরা নিয়মিত এসব পরিচালনা করছি, আগামীতেও করবো।

মাসুম আরেফিন আরও বলেন, পণ্য ও সেবার নতুন নতুন ধরন সৃষ্টি হয়েছে, আর সে অনুযায়ী নতুন নতুন ব্যবসায়ী ও গ্রাহক শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য ও সেবা বিক্রয় করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি, যেন আইন লঙ্ঘন না হয়। এসব অভিযান কিন্তু আগে হতো না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, গ্রাম এখন শহরে পরিণত হচ্ছে। আমরা অভিযান গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রসারিত করতে চাই, যেন প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ এর উপকারিতা পায়। কাজেই, আমরা এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, যতদিন না বাজার থেকে গ্রাহক হয়রানি ও আইন লঙ্ঘন বন্ধ হচ্ছে, ততদিন আমাদের অভিযান বন্ধ হবে না, বরং দিন দিন তা আরও বাড়বে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক যে, এসব অভিযানের কারণে গ্রাহক, ব্যবসায়ীসহ আপামর জনগণের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে ও তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠছেন। বাংলানিউজ