রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না হাইকোর্ট

বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না জানিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, পুলিশ তদন্ত করছে। এটাতে আমরা ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।

রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি আদলতের নজরে আনার পর আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এ কথা বলেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

মিন্নির বিষয়ে একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, বাদীর সবচেয়ে আস্থাভাজন হিসেবে মিন্নিকে এক নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে। অথচ তাকে ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে তোলা হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেখা উচিত। তার পক্ষে কোনো আইনজীবীও দাঁড়াচ্ছেন না।

এসময় আদালত বলেন, পুলিশ তদন্ত করছে। এটাতে আমরা ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।

আইনজীবী তখন বলেন, তদন্ত হবে। কিন্তু সে তো সাক্ষী। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

জবাবে আদালত বলেন, সে তো এখন অ্যারেস্ট। পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে স্পিসিফিক অ্যালিগেশন আছে। এখন আপনি কিছু করতে হলে ফৌজদারি নিয়ম মেনে করুন। প্রোপার চ্যানেলে আসুন। আমরা তদন্তে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।

পরে আইনজীবী ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বলতে চেয়েছিলাম মামলার বাদী যিনি, তিনি তার সর্বোচ্চ আস্থাভাজন ব্যক্তিকে এক নম্বর সাক্ষী করেন। সেখানে এক নম্বর সাক্ষীকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে তাকেই উল্টো এ মামলার আসামি বানানো হচ্ছে।

‘আমরা আদালতের কাছে বলেছি, এ মামলার চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামিকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। সেখানে মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণে মামলাটির কার্যক্রম অন্যদিকে চলে যেতে পারে। এ কারণে আমি বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছিলাম।’

গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে বুধবার (১৭ জুলাই) মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. হুমায়ুন। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।

ওইদিন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সঞ্জিব দাস গণমাধ্যমকে জানান, মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তার পক্ষে কোনো ধরনের ডকুমেন্টও আদালতে পেশ করা হয়নি।

আদালতের বারান্দায় উপস্থিত সাংবাদিকদের মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি খু্বই অসুস্থ। যদি তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়, তাহলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।’

আদালতের বারান্দায় বসে সাংবাদিকদের মিন্নির অসুস্থতার কিছু কাগজপত্রও দেখান তিনি।

২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাতের মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে বেশ ক’জন আসামিও।