ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ

আইনজীবী না পাওয়ায় সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছে মিন্নি

আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করা হলেও তার পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণ থেকে আইনজ্ঞ সকল মহলে বয়ে যাচ্ছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে আইনগত কিংবা সাংবিধানিক দিক বিবেচনায় মিন্নির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগে কোনও বাধা নেই বলে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ।

অপরাধীর পক্ষে আইনজীবী না দাঁড়ানোর কোন যুক্তি আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার আশরাফ জানান, ‘একজন অপরাধীর পক্ষে আইনজীবী না দাঁড়ানোর কোন যুক্তি নাই। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩(১) অনুযায়ী “গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।” এছাড়াও  আপীল বিভাগের এক রায়ে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা আছে। অর্থাৎ আইন এবং সংবিধানে বলা আছে, যেকোনও ব্যক্তি অপরাধী হোক বা না হোক, তিনি আইনগত প্রতিকার পাবেন। তবে তার অর্থ না থাকলে সরকার তাকে আইনজীবী দেবে। এজন্য আদালতে মিন্নির পক্ষে আইনজীবী না দাঁড়ানোর ফলে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।’

অভিযোগ আছে বরগুনা আইনজীবী সমিতির কোনো আইনজীবী মিন্নির পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হয়নি এক্ষেত্রে বার কাউন্সিল কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘অবশ্যই বার কাউন্সিলের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। শুধু আইনজীবী নয়, এই ঘটনায় বরগুনার জেলা প্রশাসকও (ডিসি) অভিযুক্ত হবেন কারণ রাষ্ট্রের পক্ষে সকল মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। যেহেতু কোন আইনজীবী মিন্নির পক্ষে দাঁড়ায়নি সরকারের পক্ষে থেকে তিনি উদ্যোগী হয়ে মিন্নির এই সাংবিধানিক অধিকার আদায় করে দিতে পারতেন। মিন্নি  অপরাধী হলেও তার পক্ষে আইনজীবীদের দাঁড়ানো উচিত ছিল। অপরাধী যেই হোক, তার পক্ষে আইনজীবী দাঁড়াবে না, এটা সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিরোধী এবং বার কাউন্সিল ও মানবাধিকারবিরোধী। আমাদের দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষেও আইনজীবী নিয়োগ হয়েছে। তাহলে মিন্নি কেন আইনজীবী পাবেন না? আমি মনে করি এটি বরগুনা আইনজীবী সমিতির দুর্বলতা।’

রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নি প্রধান সাক্ষী, অথচ পুলিশ বলছে মিন্নি রিফাত হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে ‘দোষ স্বীকার’ করেছেন, এ মামলায় ন্যায় বিচারের বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী, এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার আশরাফ বলেন, ‘মিন্নি “দোষ স্বীকার” করেছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তা মোটেও উচিৎ কাজ নয়। কারণ সাক্ষ্য আইনের ২৪-৩২ ধারা অনুযায়ী পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তির আইনগত কোন ভিত্তি নাই। পাশাপাশি তদন্তাধীন মামলায় অন্য আসামীরা কি বলেছেন বা মিন্নি ‘দোষ স্বীকার’ করেছেন সংবাদ মাধ্যমে পুলিশ সুপারের এমন বক্তব্য বিচারের আগেই আসামিকে অপরাধী বানিয়ে দেয়। যা ন্যায় বিচারের পথে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া একজনের বিরুদ্ধে একটি খবর প্রকাশিত হলো, আর তাতেই সে অপরাধী হয়ে গেলো, এটা ঠিক না। মামলা শুরুর পর সাক্ষী আসবে, শুনানি হবে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর নির্ধারণ হবে মিন্নি অপরাধ করেছেন কিনা। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন তাই এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে চাইনা। আদালতেই বিষয়টি ফয়সালা হবে। তবে আমি শতভাগ আশাবাদী এ মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে, প্রকৃত আসামীরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পাবে। যেন আর কেউ এমন নৃশংস অপরাধ করার সাহস না পায়।’