অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ

দণ্ডবিধির কীভাবে পড়বেন? [পঞ্চম পর্ব]

অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ:

এবার দণ্ডবিধি এর শেষ অংশ। ‘বিবিধ অপরাধ – ২’ শিরোনামে যেটিকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এর বিস্তৃতি দণ্ডবিধির ৪৬৩ থেকে ৫১১ ধারা পর্যন্ত। আমরা এর আগে ‘বিবিধ অপরাধ – ১’ নামে একটি অংশ পড়ে এসেছিলাম যার বিস্তৃতি ছিলো ১২১ থেকে ২৯৮ ধারা পর্যন্ত। তার মানে আমরা আবারো একটু স্মরণ করি যে, দণ্ডবিধিকে আমরা মোট ৫টি ভাগে ভাগ করেছিলাম। সেগুলো নিম্নরূপ ছিলো –

  • প্রথম অংশ : ১-১২০খ : দণ্ডবিধির বেসিক
  • দ্বিতীয় অংশ : ১২১-২৯৮ : বিবিধ অপরাধ – ১
  • তৃতীয় অংশ : ২৯৯-৩৭৭ : দেহ সম্পর্কিত অপরাধ
  • চতুর্থ অংশ : ৩৭৮-৪৬২খ : সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ
  • পঞ্চম অংশ : ৪৬৩-৫১১ : বিবিধ অপরাধ – ২

আবারো স্মরণ করিয়ে দিই যে, এগুলো পরীক্ষার্থীদের পড়া মনে রাখার সুবিধার্থে করা হয়েছে। বাস্তবে এমন কোনো বিভক্তি মূল দণ্ডবিধিতে ঘোষিত আকারে নেই। কিন্তু এভাবে মনে রাখলে ধারা অথবা বিষয়বস্তুভিত্তিক প্রশ্ন মেমোরাইজ করা একদম কঠিন কিছু নয়।

যাইহোক, ‘বিবিধ অপরাধ – ২’ অংশে দণ্ডবিধির কিছু বিবিধ বিষয় ছাড়াও এমন কিছু প্রকৃতির অপরাধের কথা বলা আছে যেগুলো দেখলে সাধারণভাবে মনে হবে এগুলো দেওয়ানি প্রকৃতির বিষয়বস্তু। যেমন ধরুন, ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ পর্যন্ত বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধসমূহ সম্পর্কে আলোচনা আছে। এটি খানিকটা দেওয়ানি প্রকৃতির। কেননা, বিবাহ মূলত একটি চুক্তি। সেই চুক্তি লংঘণে দেওয়ানি দায়-অধিকার ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ ধরনের চুক্তিভঙ্গ বা প্রতারণাকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় ধরা হয়েছে। আবার অপরাধমূলকভাবে চাকুরির চুক্তিভঙ্গের বিষয়ও এখানে আছে। এ অংশের প্রধান অপরাধগুলোর পরিচয় আবারো এখানে তুলে দিলাম।

এখান থেকে মূলত ১৮ অধ্যায় থেকে জালিয়াতি ও তারপরে ২০ থেকে ২৩ অধ্যায়ে মনোযোগ রাখতে হবে। এই অংশ নিয়ে বিশেষ কোনো আলোচনার দরকার নেই। আমরা গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো ও নির্দেশনায় চলে যাই।

গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও পড়ার নির্দেশনা

১. শুরুতে ১৮ অধ্যায়। ধারা হিসেবে এর বিস্তৃতি ৪৬৩ থেকে ৪৮৯ঙ পর্যন্ত। অতি গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ ‘জালিয়াতি’র সংজ্ঞা এই অংশে আছে। ৪৬৩ এবং ৪৬৪ ধারা দুইটি জালিয়াতির সংজ্ঞা সংক্রান্ত ধারা। ৪৬৫ তে এর সাধারণ সাজা। এর বাইরে ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭০, ৪৭১ – এই ৪টি ধারা পড়ে রাখুন ভালো করে। এখান থেকেও টুপ করে প্রশ্ন চলে আসতে পারে।

২. এরওপরে আছে বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধ প্রসঙ্গে। ধারা ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ পর্যন্ত আলোচনা। এর মধ্যে খুবই বিখ্যাত ধারা হচ্ছে ব্যভিচার এর ধারা; ধারা ৪৯৭। অন্যগুলোও দেখে রাখতে হবে অবশ্যই।

৩. এরপর ৪৯৯ থেকে ৫০২ পর্যন্ত মানহানি নিয়ে আলোচনা। এখান থেকে সংজ্ঞায় কিছু ব্যতিক্রমের উল্লেখ আছে। উক্ত ১০ টি ব্যতিক্রমের কথা মনে রাখতে হবে। সাজাগুলো তো অবশ্যই। মানহানির সাজাগুলোর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো বিনাশ্রম কারাদণ্ড। এই তথ্যটি ভুলবেন না।

৪. এরপরে একদম শেষ অংশ থেকে ৫০৩ এবং ৫০৭ থেকে ৫১১ পর্যন্ত সবগুলো ধারা ভালোভাবে পড়ে রাখবেন। ৫০৯ ও ৫১০ ধারা দুইটি একদম ভোলা যাবেনা।

দণ্ডবিধির এই পুরো সিরিজটি কতটা উপকারে দিলো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আপনাদের প্রত্যাশা জানিয়ে কমেন্ট করলে এগুলোকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। ধন্যবাদ।

আজ এটুকুই। শীঘ্রই আসছে ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে আলোচনা। সকল শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থীর জন্য শুভকামনা আমার পক্ষ থেকে।

লেখক : আইনজীবী ও ‘আইনের ধারাপাত – MCQ মডেল টেস্ট বুক’ এর রচয়িতা এবং ফাউন্ডার – juicylaw.com