১২ কোটি টাকা ফি: আইনজীবীর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট
ঊচ্চ আদালত

মাদক মামলার ট্রাইব্যুনালের গেজেট না হওয়ায় হাইকোর্টের ক্ষোভ

আইন হওয়ার পর ৮ মাস চলে গেলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান অনুসারে মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন না হওয়া এবং এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের জন্য জেলা জজ বা দায়রা জজকে দায়িত্ব দিয়ে গেজেট প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আইন হওয়ার পর এতদিনেও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় প্রশ্ন উঠতে পারে এমন মন্তব্যও করেন আদালত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এক আসামির জামিন শুনানির মামলায় রোববার (২৫ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে জামিন আবেদনকারী মাসুদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আল ফয়সাল সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানিতে আদালত বলেন, গেজেট না হওয়া দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা পজেটিভ আছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে অগ্রগতি জানাবো।

আদালত বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে যে তারা কয়েক মাস আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সাড়া দিচ্ছে না।

এ সময় আদালত আরও বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কাজ রয়েছে। সরকার ইচ্ছে করলে এক ঘণ্টার মধ্যে গেজেট জারি করতে পারে। হাইকোর্ট বলেন, শিশু আইনের অস্পষ্টতা, অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তি নিরসনে আমরা একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছি। ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রায় আড়াই বছর পর আইনটি সংশোধন করা হয়।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন ভেটিং করে বিষয়টি ঠিক করা হবে।

পরে আদালত বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই মাদক মামলার বিচারের জন্য সরকারের উচিত মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনে দ্রুত প্রয়োজনীয় গেজেট জারি করা। আশা করছি আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে এ সংক্রান্ত গেজেট জারি হবে। আমরা সেই সুখবরের প্রত্যাশায় রইলাম।

ইয়াবা ও হেরোইনসহ গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর পুলিশের হাতে আটক হন মাসুদুল হক মাসুদ নামে এক ব্যক্তি। তার জামিনের নথি পর্যালোচনায় হাইকোর্ট দেখতে পায়, মাদক মামলাটি আমলে নিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। আর বিচারের জন্য পাঠিয়েছেন ঢাকা মহানগর তৃতীয় যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে। কিন্তু মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে পারবে। (৪) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, এই ধারার অধীন ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব প্রদান করতে পারবে। কিন্তু এই আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে আদালতকে জানান আসামির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল ফয়সাল সিদ্দিকী।

এরপরই গত ৮ জুলাই মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৪ ধারা কার্যকরে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া কোন এখতিয়ার বলে ঢাকার একটি মাদক মামলা বিচারের জন্য তৃতীয় মহানগর যুগ্ম দায়রা আদালতে পাঠানো হয়েছে সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা তলব করেছিলো আদালত।