উচ্চ আদালত
উচ্চ আদালত

তিন মাসের মধ্যে ভোক্তা অধিদফতরকে হটলাইন চালুর নির্দেশ

ভোগ্যপণ্য ও বিভিন্ন সেবা নিয়ে ভোক্তাদের সার্বক্ষণিক (২৪ ঘণ্টা) সেবা দিতে ৩ মাসের মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হটলাইন চালু করতে নির্দেশ ‍দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য কোনো ধরনের অজুহাত ছাড়াই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা করবে। এ বিষয়ে ১৫ অক্টোবর অগ্রগতি জানাতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে হটলাইন চালু করতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়ে জানতে তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ) শামীম আল মামুন।

আদালতে হটলাইন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছিলেন একটি বেসরকারি সফটওয়্যার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাফসান জানি সামি। বিশেষজ্ঞ মতামতে তিনি জানান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুসারে খরচের ওপর নির্ভর করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হটলাইন চালু করা যেতে পারে।

এরপর আদালত শামীম আল মামুনের কাছে বাজেটের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, কমিটির আলোচনায় আউটসোর্সিংয়ের বিষয়টি আসেনি।

এ সময় আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি আপনাদের নজরে কেন আসেনি? আগে বলেছেন আপনাদের লোকবল কম। তাহলে আপনারা কীভাবে এটি স্থাপন করবেন?

এ সময় শামীম আল মামুন ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, আপনারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে স্থাপন করবো।

আদালত বলেন, আউটসোর্সিংয়ে করতে কত দিন লাগবে? জবাবে তিনি বলেন, বাজেট পাওয়ার পর ৩ মাস লাগবে। কারণ ব্যুরোক্রেটিং প্রসেসটা ম্যান্টেইন করতে হবে। এরপর আদালত ৩ মাসের মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হটলাইন চালু করতে নির্দেশ ‍দিয়েছেন।

এর আগে, গত ২০ আগস্ট তাকে হটলাইনে স্থাপনের জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।

২০ আগস্ট শিহাব উদ্দিন খান জানান, গত ১৬ জুন হাইকোর্ট দু’মাসের মধ্যে একটি হটলাইন সেবা চালু করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ আদেশের পর ২০ আগস্ট ভোক্তা অধিকারের আইনজীবী আদালতে একটি আবেদন দিয়ে জানান, এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এ কথা শুনে আদালত বলেন, হটলাইন চালু করতে ৫০ লাখ টাকা লাগবে? এ বিষয়ে ব্যাখ্যা শুনতে আদালত সংশ্লিষ্ট পরিচালককে ২৭ আগস্ট তলব করেন।

১৬ জুন ওই আদেশের পর অধিদপ্তর ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ৪ জুলাই গঠিত ওই কমিটিতে পরিচালক শামীম আল মামুনকে সভাপতি করা হয়। এরপর ১৪ জুলাই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (তৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা) মো. হারুন-উজ-জামান ভূঁইয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে ‌’হটলাইন স্থাপনের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের অনুকূলে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি খাতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রদান’ বিষয়ে একটি চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘রিট মামলায় (৫৩৫০/২০১৯) অধিদপ্তরকে ভোক্তার সার্বক্ষণিক (২৪ ঘণ্টা) সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে দু’ মাসের মধ্যে একটি হটলাইন স্থাপন করার জন্য হাইকোর্ট ১৬ জুন আদেশ দেন। এ আদেশ প্রতিপালনের জন্য পরিচালককে (প্রশাসন ও অর্থ) সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

বিটিআরসি থেকে প্রাপ্ত ধারণা অনুযায়ী হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে একটি হটলাইন স্থাপন করতে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি খাতে মাত্র ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা হটলাইন স্থাপনের ব্যয় নির্বাহের জন্য অপ্রতুল। এ অবস্থায় হটলাইন স্থাপনের ব্যয় নির্বাহে জরুরি ভিত্তিতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামি-দামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের (সাব-স্ট্যান্ডার্ড) পণ্য বাজার থেকে সরাতে করা এক রিটের শুনানিতে গত ১৬ জুন ওই আদেশ দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ৪০৬টি ভোগ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুসারে বিএসটিআই ৯৩ পণ্যের মান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি পণ্যই নিম্নমানের বলে জানায় তারা।

গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান ওই রিট করেন। গত ১২ মে ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন।