অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম

বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রিলি পর্বের প্রস্তুতি ও একটি বিশেষ কৌশল

অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম:

🌎 দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার অবসান তবে হতে চলেছে! গতকাল নির্ধারিত মিটিং শেষ বার কার কাউন্সিল সভাপতি ও এটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম জানিয়েছেন আসছে নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষা। যদিও তিনি নির্দিষ্ট কোন তারিখ ঘোষণা করেননি কিন্তু বলা হয়েছে পরীক্ষার হল বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে ১৫, ২২ বা ২৯ নভেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। অর্থাৎ এটি একটি শর্তাধীন সম্ভাব্য তারিখ। কিন্তু আমার বিশ্বাস তার এই আশ্বাসের প্রতিফলন ঘটবে এবং নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই হতে পারে পরীক্ষা। তাই যারা এখনও খুব ভাল প্রস্ততি গ্রহণ করতে পারেননি বা এখনও শুরুই করেননি তাদের হাতে এখনও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেছি আমার মনে হয়। তাছাড়া বার কাউন্সিল পরীক্ষার ঘোষিত তারিখের পরিবর্তন হওয়াটাও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অতীত বহুবার এমন হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি আরও কিছুটা সময় বেশি পেতে পারেন। তবে পরীক্ষার্থীদের উচিত নভেম্বর মাসকে টার্গেট করেই ডু অর ডাই প্রিপারেশন নেয়া। আসছে পরীক্ষার সকল পরীক্ষার্থীদের শুভকামনা জানিয়ে মূল লেখা শুরু করছি। এই লেখাটি মূলত বার কাউন্সিল পরীক্ষা বিষয়ক আমার ফেসবুক গ্রুপে কয়েক মাস আগেই প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটি পূর্বেই বহুজনে পড়েছেন। যাদের দেখা হয়নি প্রয়োজনবোধে তারা দেখে নিতে পারেন।

🌎 এবার মূল কথায় আসা যাক! যারা আসন্ন এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা আপনাদের প্রস্তুতির বিষয়সমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করে নিয়ে প্রস্ততি নিতে থাকলে একটা বিশেষ সুবিধা পাবেন। এ উপায় আমি অবলম্বন করেছিলাম। বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাসে থাকা বিষয়গুলোকে A এবং B এই দুইটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নিন। মূল কথা হলো, সিলেবাসে থাকা সাতটি বিষয়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ের ব্যাপ্তি অনেক বড় এবং বাকী চারটি বিষয়ের ব্যাপ্তি তুলনামূলকভাবে বেশ ছোট।

🌎 অর্থাৎ সিপিসি, সিআরপিসি ও দন্ডবিধি এই তিনটি সাবজেক্টের ব্যাপ্তি অনেক বড় এবং এর থেকে প্রশ্ন আসবে ৬০ মার্কস এর। এই বড় তিনটিকে ধরে নিন A ক্যাটাগরি।

🌎 অন্যদিকে সাক্ষ্য আইন, তামাদি আইন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, বার কাউন্সিল অর্ডার এই বিষয়গুলোর ব্যাপ্তি খুবই ছোট। এই ছোট সাবজেক্টগুলোকে ধরে নিন B ক্যাটাগরি।

🌎 B ক্যাটাগরির এই চারটি সাবজেক্ট মিলে A ক্যাটাগরির একটা সাবজেক্টের চেয়ে ছোট। এগুলো থেকে প্রশ্ন আসবে ৪০ মার্কস এর। B ক্যাটাগরির সবগুলো সাবজেক্ট এর সেকশন ও অনুচ্ছেদ সংখ্যা মাত্র ২৯৯টি (তামাদি আইনের অনুচ্ছেদসমূহ বার কাউন্সিল অর্ডার এর বিধিসমূহ বাদে) তামাদি আইনের সকল অনুচ্ছেদ মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা নাই বলে আমার অভিমত। গুরুত্বপূর্ণ তামাদিকাল মনে রাখতে হবে। অন্যদিকে A ক্যাটাগরির শুধুমাত্র সিআরপিসি এর সেকশন সংখ্যা ৫৬৫। এবার এই দুই ক্যাটেগরির ব্যাপ্তির পার্থক্য আপনি সহজেই বুঝে নিন।

🌎 পাশ করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে B ক্যাটাগরির এই ছোট ব্যাপ্তির চারটি সাবজেক্ট এর ৪০ মার্কস। এই চারটি সাবজেক্টই শুরুতে পড়া উচিত এবং এ টু জেড অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পড়া উচিত। লক্ষ্য রাখা উচিত যাতে করে এই ৪০ মার্কস এর মধ্যে অন্ততপক্ষে যেন ৩০ মার্কস নিশ্চিতভাবে পরীক্ষায় পাওয়া যায়। পাশ মার্কস পেতে আপনার আর দরকার হবে মাত্র ২০ মার্কস যা তুলতে হবে ওই A ক্যাটাগরির বড় ব্যাপ্তির তিনটি আইনের ৬০ মার্কস এর মধ্য থেকে। এ কাজটি আপনার জন্য খুবই সহজ ও আরামদায়ক হবে বলেই মনে করি।

🌎 B ক্যাটাগরির ছোট আকারের আইনগুলো খুব ভালভাবে মগজে ও মননে স্থান দিয়ে আত্মস্থ করতে পারলে এবং এখান থেকে অন্ততপক্ষে ৩০ মার্কস তুলে নিতে পারলে আপনার পাশ করার সম্ভাবনা বহুগুণে তরান্বিত হবে। খুব সহজেই আপনি A ক্যাটেগরি থেকে আরও ২০ মার্কস তুলে নিয়ে সেফজোনে স্থান করে নিতে পারবেন।

🌎 মূলকথাঃ যেহেতু B ক্যাটেগরির চারটি সাবজেক্ট মিলে A ক্যাটাগরির একটি সাবজেক্ট এর চেয়েও ছোট সুতরাং আপনি যদি B ক্যাটাগরির সবগুলো সাবজেক্ট খুব ভালভাবে পড়ে নেন এবং ত্রিশ কিংবা তার অধিক মার্কস এখান থেকে তুলতে পারেন তাহলে আপনার পাশ করা অনেক সহজ হবে। অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে, আমার এই লেখার মানে এই নয় যে আপনি A ক্যাটাগরির সাবজেক্টগুলো ভালভাবে পড়বেন না। অবশ্যই সেগুলোও পড়বেন অত্যন্ত ভালভাবে। আমি শুধু বলতে চেয়েছি যে, B ক্যাটাগরির সাবজেক্টগুলো শুরুতে এবং অধিক গুরুত্বের সাথে পড়বেন। এগুলোই আপনার প্রিলি বা এমসিকিউ পাশ করার একটা জাদুকরী টোটকা হিসেবে কাজ করবে বলে আমার মনে হয়।

আমি এ প্রক্রিয়ায় পড়েছি এবং এ উপায় আমার ক্ষেত্রে বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমি আমার সেই অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জন্য এই নির্দেশনামূলক লেখাটি লিখেছি। এই লেখায় একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আপনারা চাইলে আরও অভিনব কোন উপায় বেড় করে তা অনুসরন করতে পারেন। সকলকে আবারও ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

লেখক: আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।