পুলিশ (প্রতীকী ছবি)
পুলিশ (প্রতীকী ছবি)

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি, প্রতিবাদের মুখে পুলিশ সদস্য ক্লোজড

রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুই ব্যক্তিকে পুলিশ ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে সাংবাদিকসহ এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে পিছু হঠে পুলিশ।

রাজধানীর আজিমপুরের শাখত বাড়ি বটতলা এলাকায় শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরে ওই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করার ঘোষণা দেন স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

দুই সাংবাদিকসহ প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বাসায় ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর আলম ও মো. রিয়াদ নামের দুই ব্যক্তি৷বাসার কাছে পৌঁছাতেই টহলে থাকা পুলিশের সদস্যরা তাঁদের ডাকেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে ইয়াবা বড়ি দিয়ে তাঁদের ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন তাঁরা। ওই সময় প্রতিবাদ জানাতে গেলে দুই সাংবাদিককেও মারধর-হেনস্তা করেন সেখানে আসা স্থানীয় থানার এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানালে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে ঘটনায় জড়িত এক পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করার ঘোষণা দেন৷

‘ক্লোজড’ পুলিশ সদস্য হলেন লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ। আর ওই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা হলেন একই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশনস) আসলাম উদ্দিন। মারধর ও হেনস্তার শিকার দুই সাংবাদিক হলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির সাংবাদিক ফখরুল শাহীন৷

ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া সাংবাদিক, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজন পুলিশের সদস্য আসলাম ও আবুল কালাম আজাদ দুজনের অপসারণ দাবি করেন। তবে লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শুধু কালামকে ক্লোজ করার ঘোষণা দেন। পরে ফিরে যাওয়ার সময় সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘সাংবাদিকরা ফোন করেছেন। ফরমালিটি মেইনটেইন করতে তো আসতেই হয়।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিক কাজী মোবারক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কনভেনশন হলে তাঁর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফিরতে মধ্যরাত হয়ে যায়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি থেকে আসা তাঁর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও ভাতিজা মো. রিয়াদ রাত একটার দিকে গাড়িতে করে আজিমপুরের বটতলা এলাকায় বাসার সামনে এলে ওই ঘটনা ঘটে৷

মোবারকের অভিযোগ, ‘বটতলা এলাকায় লালবাগ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও ভাতিজা মো. রিয়াদের কাছে এসে এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জানতে চান৷তাঁরা বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বললেও কালাম তাঁদের গাড়িতে উঠতে বলেন। বলা হয়, তাঁদের কাছে ইয়াবা আছে৷একপর্যায়ে বড় ভাইকে মারধরও করা হয়৷’

মোবারক আরও বলেন, মারধরের ঘটনার একপর্যায়ে তাঁদের গাড়িটি বটতলা এলাকায় পৌঁছালে গাড়ি থেকে নেমে তিনি পুলিশ সদস্যদের কাছে নিজের ভাইকে মারধর করার কারণ জানতে চান৷এর মধ্যে লালবাগ থানার ওসি (অপারেশনস) আসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। তখন এনটিভির সাংবাদিক ফখরুল শাহীন মুঠোফোনে ছবি তুলতে গেলে তাঁকে থাপ্পড় দেন আসলাম। একপর্যায়ে মোবারকের কলার চেপে ধরে তাঁকে গাড়িতে তোলার চেষ্টাও করেন তিনি৷তবে আসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে৷সাংবাদিক জানলে এমনটা হতো না৷’

এরই মধ্যে খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ছাত্রলীগের ২৫-৩০ নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থী। ঘটনায় জড়িত দুই পুলিশ সদস্যের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তাঁরা৷ ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পর চারটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লালবাগ থানার ওসি সাংবাদিকদের বলেন, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি ও অসদাচরণের অভিযোগে থানার এসআই আবুল কালাম আজাদকে ক্লোজ করা হয়েছে৷ বিক্ষুব্ধ লোকজন আসলাম উদ্দিনেরও অপসারণ দাবি করতে থাকেন। পরে আসলামকে নিয়ে ওসি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যাওয়ার সময় এক সহকর্মীর সঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷ সাংবাদিকরা ফোন করেছেন৷ ফরমালিটি মেইনটেইন করতে তো আসতেই হয়।’

এদিকে বটতলার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেছেন, ওই এলাকায় রাতে টহলরত পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই সাধারণ মানুষকে মাদকের অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোসহ নানানভাবে হয়রানি করে থাকেন। থানায় ধরে নিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পরে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়, অনেকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মিথ্যা মামলাও। প্রথম আলো