শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন (প্রতীকী ছবি)

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার ৪৯৬ শিশু

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

আজ রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘শিশু অধিকার ও বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সংবাদ সন্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) ও বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)।

এসময় এএসডির ডেভেলপমেন্ট অব চিলড্রেন অ্যাট হাই রিক্স (ডিসিএইচআর) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৭১ জন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ হারে, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফারহানা সুলতানা বলেন, অধিকাংশ সময় সম্মান হারানোর ভয় ও প্রভাবশালীদের চাপের মুখে শিশু নির্যাতনের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। ধর্ষণের মামলা করতেও ভয় পান অভিভাবকরা। আবার অনেক সময় দরিদ্র অভিভাবকের পক্ষে দীর্ঘদিন মামলা চালিয়ে নেওয়াও সম্ভব হয় না। অপরাধীর শাস্তি না হওয়ায় সমাজে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

শিশু নির্যাতনের আরও একটি বড় কারণ আইনের ধীরগতি। দ্রুত বিচার কার্যকর না হওয়ায় জামিনের সুযোগ পেয়ে যায় অপরাধীরা। আসামি প্রভাবশালী হলে সঙ্কট আরও বেড়ে যায়। তাদের চাপের মুখে নির্যাতিতরা সমঝোতায় যেতে ও মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়।

এএসডির নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ার প্রধান কারণ নির্যাতনের পরেও আইনের আওতায় আসছে না অপরাধীরা। ফলে একের পর এক শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। আইন থাকলেও অনেক সময় তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া মামলা হলে যে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয় তাতে আইনের ফাঁক-ফোকরে ছাড়া পেয়ে যায় অপরাধী।

জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালে শিশু শ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ২৮ মিলিয়ন। বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে মোট গৃহকর্মীর সংখ্যা ২ মিলিয়ন। এর মধ্যে চার লাখ বিশ হাজার শিশু গৃহকর্মীর কাজে জড়িত, যার মধ্যে ৮৩ শতাংশই মেয়ে। এরাও নানাভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কাজ করছে এএসডি। উন্নয়ন সংস্থাটি শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে প্রত্যাহার করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করছে। পাশাপাশি বয়সভেদে শিশুদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত কাজ থেকে সরিয়ে আনা, বিনোদন ও আনন্দদায়ক খেলাধুলার আয়োজন করা ও রাত্রিকালীন আবাসনের ব্যবস্থা করেছে এসএসডি।

বিএসএএফের পরিচালক আবদুছ সহিদ মাহমুদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুবই কম। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি সুস্পষ্ট। শিশুদের সুরক্ষায় বাজেট বাড়ানো ও তা বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করার আহ্বান জানান তিনি।