এ এম আমিন উদ্দিন

রায় বিরুদ্ধে গেলেই বিচারক খারাপ, এটা ঠিক নয়

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারপতিদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, একজন বিচারককে বিচার করা হয় তার জীবনের অনেকগুলো রায়ের মাধ্যমে। উনি যদি আমার বিরুদ্ধে রায় দেন তাহলে উনি খারাপ বিচারক হয়ে গেলেন- এ ধরনের মনোভাব থাকা উচিত নয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলনের পর সোমবার (২১ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বক্তব্যের রেশ টেনে তিনি বলেন, বিচারক যখন রায় দেবেন তার বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালত আছে, সেই আদালতে যাবেন। বিচারক রায় দিলে তার বিরুদ্ধে কথা বলা আইনজীবী হিসেবে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকার ৯ জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের অনেকের নাম তালিকায় দেখে আমরা হতাশ, জাতি হতাশ।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য আজ বিচারপতিদের তালিকায় দুজন বিচারপতির নাম দেখা যাচ্ছে, যারা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন। আরেকজন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছেন। মনে হয় তাদের পুরস্কৃত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশের ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে।

এর কিছুক্ষণ পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন সভাপতির কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, উনি (ব্যারিস্টার খোকন) বলেছেন কি না জানি না। তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটি তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে বলেছেন। অবশ্যই এটা আইনজীবী হিসেবে বলেননি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচারক যখন রায় দেবেন তার বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালত আছে, সেই আদালতে যাবেন। বিচারক রায় দিলে তার বিরুদ্ধে কথা বলা আইনজীবী হিসেবে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমিন উদ্দিন বলেন, ‘তিনি (মাহবুব উদ্দিন খোকন) নবনিযুক্ত বিচাপতিদের সংবর্ধনা দিয়েছেন। দুই জনকে সংবর্ধনা দেননি, তারা যেহেতু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন, সেহেতু তারা সংবর্ধনা দেননি।

তিনি আরও বলেন, বিচারকার্য পরিচালনা করলে যদি মনে করেন উনারা সংক্ষুব্ধ। সেক্ষেত্রে উনারা তো আপিলই করেছেন। কেন বিচারকদের বিরুদ্ধে বলবেন। এখন কেউ মামলায় হেরে গেছেন, প্রত্যেকে বলবেন এ বিচার ঠিক হয়নি।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগে ৯ জন বিচারপতিকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। নবনিযুক্ত বিচারপতিরা হলেন—বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেন, বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজল, বিচারপতি কাজী জিনাত হক, বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার মিণ্টু, বিচারপতি ড. জাকির হোসেন, বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিন, বিচারপতি ড. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি একেএম জহিরুল হক ও বিচারপতি মাহবুবুল ইসলাম।

রোববার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে তাদের শপথগ্রহণের দিন থেকে অনধিক দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়োগ শপথগ্রহণের দিন থেকে কার্যকর হবে। আজ সোমবার সকালে ওই ৯ বিচারপতি শপথ নেন।