অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির

জেনে নিন মিথ্যা মামলার আইনি প্রতিকার

অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির:

প্রিয় পাঠক, লেখার প্রথমে তিনটি অনুগল্প বলে লেখাটা শুরু করছি –

ঘটনা-১
কিছুদিন আগে এক লোক একটি যৌতুকের মামলা নিয়ে আসে যেখানে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহের ২০ বছর পরে যৌতুকের অভিযোগ এনেছে। Prima Facie Case এ এটা স্পষ্টই একটি মিথ্যা মামলা। মামলার পিছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে। কিন্তু যৌতুক কখনোই নয়।

ঘটনা-২
সেদিন এক স্ত্রী তার পরকিয়ার সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সংসার বাঁচাতে পরকিয়া প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা ঠুকে দিলেন।

ঘটনা-৩
বাড়ির পাশে মাদক সেবীদের মাদক সেবনে বাধা প্রদান করায় গৃহকর্তাকে শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দিল মাদক ব্যবসায়ী।

লেখার শুরুতেই ওই তিনটি ঘটনা উল্লেখের কারণ হচ্ছে উপর্যুক্ত মামলাসমূহে আমি ডিফেন্স ল’ইয়ার হিসেবে আছি। ভুক্তভোগীদের দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইনের আশ্রয় লাভের এই সাংবিধানিক অধিকারের অপব্যবহার আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই হচ্ছে। রাষ্ট্র নাগরিকদের শরীর এবং সম্পত্তি রক্ষার্থে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে থাকে।

রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত এই আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে এক শ্রেণির লোক সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। মোটা দাগে অপরাধ দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক ফৌজদারী অপরাধ। দুই দেওয়ানি অপরাধ। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল ফৌজদারী মামলার বাদী রাষ্ট্র। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজে পক্ষ হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যায়। এর ফলে দেখা যায় অনেকেই থানায় মিথ্যা এজহার দায়ের করে। রাষ্ট্র স্বতঃস্ফূর্ত সেই এজহার অনুযায়ী তদন্ত ও বিচার চালিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার থানায় সুবিধা করতে না পেরে আদালতে গিয়ে মিথ্যা জবানবন্দির মাধ্যমে মামলা দায়ের করে। এই ধরনের মিথ্যা এজহার ও মামলা দায়ের ও এক প্রকার ফৌজদারী অপরাধ।

উপরোক্ত তিনটি অনুগল্পের সাথে মিল থাকুক বা না থাকুক দেশে যে মিথ্যা মামলা হচ্ছে এটা অনস্বীকার্য। আবার নাগরিকদের শরীর এবং সম্পত্তি রক্ষার্থে রাষ্ট্র প্রণীত আইনেই আছে মিথ্যা মামলার প্রতিকার। এবার আসুন জেনে নিই, মিথ্যা মামলার আইনি প্রতিকার সম্পর্কে।

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ২৫০ ধারার বিধান অনুযায়ী, ম্যাজিষ্ট্রেট মিথ্যা, তুচ্ছ এবং বিরক্তিকর অভিযোগের ক্ষেত্রে আসামীকে অব্যাহতি বা খালাসের আদেশ প্রদানের পাশপাশি যে ব্যক্তির নালিশ বা সংবাদের ভিত্তিতে অভিযোগ আনয়ন করা হয়েছে সেই ব্যক্তিকে কারণ দর্শাতে বলতে পারেন। ফরিয়াদী বা সংবাদদাতা যে কারণ দর্শাবেন ম্যাজিষ্ট্রেট তা লিপিবদ্ধ ও বিবেচনা করবেন এবং তিনি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আনীত অভিযোগ মিথ্যা, তুচ্ছ বা বিরক্তিকর ছিল তাহলে কারণ লিপিবদ্ধ করে ফরিয়াদী বা সংবাদ দাতাকে বা যেকোন আসামীকে বা তাদের প্রত্যেককে অনধিক ১০০০ (এক হাজার) টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদানের অথবা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট হলে তিনি অনধিক ৫০০ (পাঁচশত) টাকা জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারেন। এছাড়াও ম্যাজিষ্ট্রেট আদেশ দিতে পারেন যে, ক্ষতিপূরণ দিতে আদিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ৬ (ছয়) মাস মেয়াদের কারাদণ্ড ভোগ করবে অথবা অনধিক ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা পর্যন্ত জরিমানা প্রদান করবে।

দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ১৮২ এর বিধান অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি কোন সরকারী কর্মচারীর কাছে এমন কোন খবর দেয়, যা মিথ্যা বলে সে জানে অথবা যা মিথ্যা বলে সে বিশ্বাস করে এবং যা অন্য কারো পক্ষে ক্ষতিকর বা বিরক্তিকর। তবে সে ব্যক্তি ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা ১০০০ (এক হাজার) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

দণ্ডবিধির ২০৯ ধারার বিধান অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি যদি কোন দাবি মিথ্যা বলে জানা সত্ত্বেও প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে কোন ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য আদালতে উপস্থাপন করে তবে সে ব্যক্তি ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে।

দন্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তিকে ক্ষতিসাধনের জন্য উক্ত অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রুজু করার বা অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ উত্থাপন করার কোন সংগত বা আইনানুগ যুক্তি নাই বলে জানা সত্ত্বেও উক্ত অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী মামলা রুজু করে বা অনুরূপ মামলা রুজু করায়, কিংবা উক্ত অন্য ব্যক্তির কোন অপরাধ করেছে বলে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে, তবে সে ব্যক্তি ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবে। এবং যদি অনুরূপ ফৌজদারি মামলায়, মৃত্যুদণ্ডে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, কিংবা ৭ (সাত) বৎসর বা তদূর্ধ্ব মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধ সংঘটনের মিথ্যা অভিযোগ রুজু করা হয়, তবে সে ব্যক্তি ৭ (সাত) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং এতদ্ব্যতীত তাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে।

এছাড়া দণ্ডবিধির ১৯৩, ১৯৪, ১৯৫, ১৯৬ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের শাস্তির বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এবং ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ ব্যতীত ও রাষ্ট্র অপরাধ দমনের জন্য বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু বিশেষ আইন প্রণয়ন করেছেন। এসমস্ত বিশেষ আইনের অপপ্রয়োগ রোধে আইন প্রণেতাগণ উক্ত আইনের মাধ্যেই অপপ্রয়োগের শাস্তির বিধান করেছেন। যেমন –

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১৭ ধারায় এই আইন অনুযায়ী মিথ্যা মামলার শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা দায়ের কারী ৭ (সাত) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ধারা ৬ অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করিবার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ৬ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি মিথ্যা অভিযোগ করিলে অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ১ (এক) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধন করিবার উদ্দেশ্যে এই আইনের অধীন মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিলে অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি, কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে এই আইনের কোন ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ দায়েরের কোন ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা অভিযোগ দায়ের করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন। উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২(দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ৩২ ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অধীন আবেদন করিবার আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও আবেদন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৫৪ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি, কোন ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীকে হয়রানি বা জনসমক্ষে হেয় করা বা তাহার ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করিলে, উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷

এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০২ এর ৪০ ধারার বিধান অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিষয়ে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করেন এবং যদি তদন্তক্রমে বা সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা প্রমাণিত হয় যে, অভিযোগটি মিথ্যা বা হয়রানীমূলক, তবে, উক্ত অভিযোগকারী এইরূপ মিথ্যা মোকদ্দমা দায়েরের জন্য অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) বৎসর ও অন্যুন (২) দুই বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ এর ৮ ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের কোন ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান তাহা হইলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করাইয়াছেন উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৭ (সাত) বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ এর ৬ ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংঘটনের কোন ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও তাহার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহা হইলে প্রথমোক্ত ব্যক্তি অন্যুন ২ (দুই) বত্সর এবং অনধিক ৫ (পাঁচ) বত্সর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ এর ২৬ ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিষয়ে কোন মামলা দায়ের করেন এবং যদি তদন্তক্রমে বা সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা প্রমাণিত হয় যে, উক্তরূপ অভিযোগটি মিথ্যা বা হয়রানিমূলক, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, তবে ৩ (তিন) মাসের নিম্নে নহে, বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, তবে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকার নিম্নে নহে, বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন মামলার কার্যক্রমে কোন আদালতে কোন শিশুর সম্পর্কে যদি এমন কোন তথ্য প্রকাশ করেন যাহা মিথ্যা, বিরক্তিকর বা তুচ্ছ প্রকৃতির তাহা হইলে আদালত, প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, যাহার বিপক্ষে উক্ত তথ্য প্রদান করা হয় তাহার অনুকূলে ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোন পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানকারীর প্রতি নির্দেশ প্রদান করিতে এবং অনাদায়ে অনধিক ৬ (ছয়) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করিতে পারিবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ২৮(গ) অনুযায়ী, মিথ্যা জানিয়া বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হইয়া কোন ব্যক্তি ভিত্তিহীন কোন তথ্য, যে তথ্যের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন তদন্ত বা বিচার কার্য পরিচালিত হইবার সম্ভাবনা থাকে, প্রদান করিলে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ (দুই) বৎসর বা অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

এছাড়া টর্ট আইনে কিছু প্রতিকার রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী প্রতিকার পেতে চাইলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে,

  • (ক) বিবাদী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল
  • (খ) পূর্বের মামলার প্রকৃতি দেখে মনে হয় , মামলাটি বাদীর অনুকূলে শেষ হতে পারত
  • (গ) মামলাটি যুক্তিসংগত এবং সম্ভাব্য কারণ ছাড়া করা হয়েছিল
  • (ঘ) মামলাটি বিদ্বেষবশত করা হয়েছিল
  • (ঙ) মামলার ফলে বাদীর ক্ষতি হয়েছে

এই আইন অনুযায়ী বাদী আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, কোন মামলায় যদি কাউকে দণ্ডিত করা হয়, তবে দণ্ডিত ব্যক্তি ঐ দণ্ডাদেশকে বিদ্বেষবশত বলে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না।

মিথ্যা মামলার জন্য বিভিন্ন আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও এর প্রয়োগ আদালত পাড়ায় দেখা যায় না বললেই চলে। এর মূল কারণ পক্ষ সমূহের আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং আমাদের বিচার কার্যের দীর্ঘসূত্রতা। বিচার বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল খুবই কম। রাষ্ট্র কোন এক অজানা কারণে এই বিভাগের লোকবল বৃদ্ধিতে তেমন উৎসাহী নয়।

বিচার বিভাগে লোকবল কম থাকায় মামলার জট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মূল মামলা নিষ্পত্তি করতেই যেখানে সময় পাওয়া যায় না, সেখানে আবার নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাদীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মামলা চালিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন কাজ। কিন্তু এটা এখন অতীব জরুরী বিষয়। কয়েকটি দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করলে দেখা যাবে, সংশ্নিষ্ট এলাকায় বিচারকদের অহেতুক সময় ক্ষেপণকারী মিথ্যা আর হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করার প্রবণতা কমে গেছে।

লেখক: আইনজীবী