ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও সোনাগাজীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন

‘থানাকে জমিদার বাড়ি মনে করা পুলিশের জন্য এই রায় অশনি সংকেত’

বাদীর মানসিকতা শক্তিশালী থাকলে আসামি শক্তিশালী হলেও ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। একইসঙ্গে এই আইনজীবী বলেছেন, থানাকে জমিদার বাড়ি মনে করেন, তাদের জন্য ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রায় অশনি সংকেত।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ফেনীর সোনাগাজীর থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলার রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বাদী ব্যারিস্টার সুমন এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনকে নিজেদের জমিদার বাড়ি মনে করেন, তাদের জন্য ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রায় অশনি সংকেত। অনেকে মনে করেন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলে রায় পাওয়া যায় না, আজকের রায়ে প্রমাণ হয়েছে তা সঠিক নয়। শুধু ব্যারিস্টার সুমন না, যে কেউ শক্তিশালী মানসিকতা নিয়ে লড়লে ন্যায়বিচার পাবেন।

এ আইনজীবী আরও বলেন, নুসরাতের অনুমতি ছাড়া অন্যায়ভাবে ভিডিও ধারণ এবং পরে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেমকে দুই ধারায় পাঁচ বছর এবং তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মোট আট বছর তাকে কারাগারে থাকতে হবে। পাশাপাশি তাকে নুসরাতের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি মামলা পরিচালনায় সাহস যোগানোর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া সঠিক তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকেও (পিবিআই) ধন্যবাদ জানান সুমন।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় তাকে সাজা দেয়া হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর আমরা তা নিয়ে আপিল করব।’

অপরদিকে, ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, ‘রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’

এর আগে, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ দুই ধারায় মোট আট বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হয় ওসি মোয়াজ্জেমের। একটির পর অন্য সাজা কার্যকর হবে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম ও ছোট ভাই রাসেদুল হাসান রায়হান। এজন্য মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে ধন্যবাদ জানান তারা।

উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলায় নুসরাতের বক্তব্য গ্রহণের সময় তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। পরে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।