প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (ফাইল ছবি)

সুপ্রিম কোর্টের সামনে ভাঙচুরের কারণেই নিরাপত্তা জোরদার: প্রধান বিচারপতি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের সামনে ভাঙচুরের কারণে তার জামিন শুনানিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন— জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এজে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, এসেছিলাম মামলার শুনানি করতে। কিন্তু বাইরের অবস্থা (প্রচুর সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে) দেখে তো আমাদের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে! মনে হচ্ছে,এটা কোনও জঙ্গি বা মৃত্যুদণ্ডের আসামির বিচার।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগের দিন (গত ২৬ নভেম্বর) আপনারা সুপ্রিম কোর্টের সামনে গেটে এসে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন, ভাঙচুর করেছেন, মিছিল-সমাবেশ করেছেন। এজন্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়। মাঠে-ময়দানের বিষয় এখানে আনা ঠিক হবে না। মাঠে-ময়দানের বিষয় মাঠেই থাকুক।’

এরপর জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা মামলার মেরিটে বলতে চাই না। মানবিক কারণে জামিন চাই। তিনি (খালেদা জিয়া) বয়স্ক একজন নারী, অসুস্থ হয়ে হাসাপাতালে রয়েছেন। মানবিক কারণে তার জামিন চাই।আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট নেই। তাই উপস্থাপন করতে পারছি না। নন-অফিসিয়াল একটি রিপোর্ট রয়েছে। তা আমরা উপস্থাপন করতে চাই না। খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে দেখা করেছে। আমরাও গতকাল (বুধবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে দেখা করেছি। তার কাছে মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়েছি। তিনি আমাদের রিপোর্ট দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, অ্যার্টনি জেনারেল তাকে বলেছেন— আদালতের নির্দেশ ছাড়া কাউকে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়া যাবে না।’

এসময় অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি ভিসিকে কিছুই বলিনি।’ তখন জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘আপনি চাইলে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট তলব করতে পারেন।’

এরপর আগামী ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওইদিন ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা’ ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম আয়োজিত কর্মসূচি পালনকালে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়।