আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মানববন্ধন

বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্র প্রসারিত করছে: আসক

কার্যকর জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করছে বলে অভিযোগ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর আসাদগেটে এক মানববন্ধনে এ অভিযোগ করা হয়। সকাল ১১টা থেকে শুরু করে ১২টা পর্যন্ত চলা মানববন্ধনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ও বিভিন্ন দাবির বিষয়ে জানান।

আসকের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, মত প্রকাশ ও মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত, নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলছে। কার্যকর জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করছে।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সংগৃহীত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩৬২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলছে যা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা সে যত বড় অপরাধের সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনের শাসনের প্রতি আস্থাহীনতাকে প্রকট করে তুলেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ক্ষমতার অব্যবহারের পথ তৈরি করে দিয়েছে।

বক্তব্যে এ বছর ১৩ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে চার জন ফিরে এসেছে আর একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এসবের পাশাপাশি সম্প্রতি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা এবং এর ধরন চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত এগারো মাসে এক হাজার ৩৫১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এরমধ্যে ৯৪০ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে। ৪৪৩ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছেন এবং ৬৮২ জন শিশু নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

এসব ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের অভাব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে কঠিন করেছে এবং দুর্বৃত্তদের আরও বেশি বেপরোয়া করে তুলছে বলে বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়।

গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও বহুল সমালোচিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অনুরূপ ধারা রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার রোধ হয়নি বরং আরও নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, জনগণের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার সর্বোপরি মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাসমূহ জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সুরক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে কোনও উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে, অথচ টেকসই উন্নয়ন কেবল জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং জনগণের সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিশেষ করে নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তাসহ সব মৌলিক অধিকার, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক হতে বলে জানায় সংগঠনটি।