বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলতি বছরে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মামলা নিষ্পত্তির আশা আইনমন্ত্রীর

চলতি বছরে (২০২০ সালে) পাঁচ থেকে ছয় লাখ মামলা নিষ্পত্তি করা হবে বলে আশা প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘লক্ষ্য থাকবে নতুন বছরে কম করে হলেও ৫ থেকে ৬ লাখ মামলা কমানো। আমরা সেইভাবে বিচারিক প্রোগ্রাম, আদালতের লোকবল প্রস্তুতির চেষ্টা করছি।’

আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারি জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্য থাকবে নতুন বছরে কম করে হলেও ৫ থেকে ৬ লাখ মামলা কমানো। আমরা সেইভাবে বিচারিক প্রোগ্রাম, আদালতের লোকবল প্রস্তুতির চেষ্টা করছি। আমরা একটা সিস্টেম চালু করেছি। যেটা হচ্ছে জাস্টিস অডিট। প্রত্যেক তিন বছর আমরা একটা হিসাব নিই। শুধু যে মামলা সেটা না। কী প্রকারের মামলা, কোন বিষয়ে বেশি মামলা হচ্ছে। সেসব বিষয়ে একটা ধারণা নিয়ে থাকি।

আনিসুল হক বলেন, এখানে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মামলার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটার সঙ্গে কিন্তু কিছুটা পার্থক্য আছে। সেখানের হিসাব হচ্ছে ৩১ লাখ। এটা যাই হোক। এটা মামলার জট। আমাদের এই বছর লক্ষ্য থাকবে অন্ততপক্ষে ৫ থেকে ৬ লাখ মামলা কমানো। আমরা সেইভাবে বিচারিক যে প্রোগ্রাম, আদালতের লোকবল সেইভাবে করার চেষ্টা করছি। আমরা মামলা কমানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা অবাস্তব না।

মন্ত্রী বলেন, বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি অবশ্যই আরও জোরদার করা হবে। বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, জনগণের কাছে এটার পরিচিতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যেসব মামলা আপসযোগ্য সেই সব মামলায় যেন আদালত বলেন, এ মামলা বাইরে নিষ্পত্তি করে ফেলেন। সেই উদ্যোগ যেন আদালত থেকে নেওয়া হয়। সেই বিষয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বিচারকদেরও আমরা এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে আইনজীবীদের মতবিরোধ রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় না আইনজীবীদের মধ্যে খুব একটা অনীহা রয়েছে। বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি যদি কার্যকর হতে থাকে এবং জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে, তাহলে আইনজীবীরা এটার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে থাকবেন বলে আমার মনে হয় না।

গত ১০ বছরে জনগণের বিচার বিভাগের ওপর আস্থা বেড়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আর একারণেই মামলা বাড়ছে বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এর আগে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা। সবার কাজের ধরন ভিন্ন হলেও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। সেই লক্ষ্য হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের সবাইকে এক লক্ষ্য এক প্রেরণায় কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিচারকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আপনারা অন্যের অনুকরণীয় হবেন এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আপনাদের কাজ করতে হবে। সততার ভিত্তিতে চারিত্রিক দৃঢ়তার সঙ্গে আপনাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আপনাদের লোভ-লালসার কারণে সাধারণ মানুষের মনে যেন বিচার বিভাগ সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ক্ষোভ এবং হতাশা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়। মনে রাখতে হবে আপনাদের বিচারক হয়ে ওঠার পেছনে দেশের গরীব-মেহনতী মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবদান রয়েছে। আপনাদের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে এসব মানুষের শেষ ভরসাস্থল।

এর আগে আইনমন্ত্রী সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। চার মাস মেয়াদী ৪০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে মোট ৪৫ জন সহকারী বিচারক এবং সমতুল্য বিচার বিভাগীয়  জুডিসিয়াল কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক বিচারপতি খন্দকার মুসা খালেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।