বিচারপতি মো. শওকত হোসেন

পিলখানা হত্যা মামলার রায় প্রদানকারী বিচারপতি শওকত হোসেন অবসরে

৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসরে গেলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন। যিনি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলার হাইকোর্টের রায় প্রদানকারী বেঞ্চে তিন বিচারপতির নেতৃত্বে ছিলেন।

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) তার শেষ কর্মদিবসে তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীদের সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি শওকত হোসেন এক আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন।

বিকেলে ২৪ নম্বর (অ্যানেক্স) আদালত কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানান।

অ্যাটর্নি জেনারেল বিচারপতিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, বিচারপতি হিসেবে আপনার যুগান্তরকারী রায় হলো পিলখানা বিডিআর হত্যা মামলার রায়। আপনি ও আপনার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ বিশ্বের বিচার বিভাগের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ রায় দেন। এ রায়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বিশেষ করে আপনার দেওয়া অংশে অপ্রয়োজনীয় কোনো বাক্য বা বিষয় তুলে ধরেননি। এটি একটি যুগান্তরকারী রায়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলার আপিল শুনানি ও রায়ে সময় দিতে গিয়ে আপনি পরিবার-পরিজনকে ঠিকমত সময় দিতে পারেননি, এ মামলার বিচারকালীন আপনাকে প্রচ্ছন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যেও থাকতে হয়েছে। সর্বোপরি এ যুগান্তকারী রায়ে যাতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত না হতে পারে সেই জন্য আপনার অবসরে যাওয়ার একদিন আগে বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে গেছেন। আপনি ছিলেন আদর্শবান, দায়িত্ববান ও ন্যায়পরায়ণ একজন বিচারপতি। আপনি ধৈর্য ধরে মামলা শুনতেন এবং সব সময় ন্যায় সম্মত বিচার করতে চেষ্টা করতেন। আপনার সততা, দক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতা ছিলো প্রশ্নাতিত, এ কারণে আপনি আইনাঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

বিচারপতি মো.শওকত হোসেন রংপুর জেলার বদরগঞ্জে ১৯৫৩ সনের ১০ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে এসএসসি, ১৯৭০ সালে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (অনার্স) এম.এ (ইংরেজি) ও এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮১ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি জুডিশিয়াল ক্যাডার সার্ভিসে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালের ১ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি, ডেপুটি সলিসিটর, জয়েন্ট সেক্রেটারি এবং সলিসিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বিচারপতি শওকত হোসেন সুপ্রিমকোর্টে রেজিস্ট্রার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।