সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন

‘মানুষের আহার যেমন জরুরী, আইনজীবীদের জন্য বই তেমন জরুরী’

 

‘নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করার কথা নির্বাচনি ইশতেহারেই বলেছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন এবং আমাকে বারের সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন এভাবেই আইনজীবীদের কল্যাণে তাঁর দায়বদ্ধতার সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরীর বই কেনার জন্য ৩০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর মিলনায়তনে চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বারের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনের হাতে ৩০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল হাসান কচি।

আলাপচারিতার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের স্বার্থে কাজ করার জন্যই নির্বাচন করেছিলাম। সভাপতি নির্বাচিত হবার পর অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ শুরু করি। দেশের সব আইনজীবী সমিতি উন্নয়নের জন্য অনুদান পায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বারের জন্য কোন অনুদানের প্রচলন ছিল না। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে অনুদানের জন্য কোন উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। তো আমি আইনমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করি এবং বারের উন্নয়নের জন্য অনুদান প্রদানে অনুরোধ করি। আইনমন্ত্রী প্রস্তাব শুনে সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যক টাকা দিয়েছেন। এজন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমি উনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

সমিতির উন্নয়নে আইনমন্ত্রী প্রদত্ত এই তহবিল অব্যাহত থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বার সভাপতি বলেন, ‘প্রতিবছরই এ পরিমাণ (৩০ লাখ টাকা) অনুদান অব্যাহত থাকবে। আইনজীবীদের মূল অস্ত্র বই উল্লেখ করে মন্ত্রী সেদিন বলেছেন বই ছাড়া ভালোভাবে মামলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বই পড়ে আইনজীবীরা নিজেদের সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে যেন জনগণকে যথাযথ সেবা প্রদান করতে পারেন সে লক্ষ্যে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি করতে যা যা দরকার তার সব ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।’

বিপুল পরিমাণ টাকার এসমস্ত বই রাখতে সমিতিতে জায়গার সংকট আছে মেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপাতত যেকোনো উপায়ে রাখতে হবে। তবে আইনজীবীদের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে সেখানে পুরো একতলা নিয়ে লাইব্রেরী স্থাপন করতে হবে। লাইব্রেরী বড় হতেই হবে। এর বিকল্প নেই। কারণ বেঁচে থাকার জন্য মানুষের আহার করা যেমন জরুরী আইনজীবীদের জন্য বই ঠিক তেমনই জরুরী।’

সুপ্রিম কোর্ট বারে আইনজীবীদের বসার জায়গা প্রয়োজন। এ সংকট নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ জানিয়ে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে বহুতল আইনজীবী ভবন নির্মাণের বিষয়েও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংকট কাটাতে নতুন ভবন তৈরি করতে একটা পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি আইনজীবীদের স্বার্থে যেকোনো ইতিবাচক কাজে পাশে থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আইনজীবীদের প্রতি মন্ত্রীর সদয় মনোভাব ফের প্রমাণিত হয়েছে।’

আইনজীবীদের নতুন ভবন কয়তলা বিশিষ্ট হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন ভবনটি ১২তলা করার প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ সুপ্রিম কোর্টে ভবন নির্মাণে কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অতিরিক্ত (অ্যানেক্স) ভবন সম্প্রসারণ করে ১২তলায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এ মাপের বাহিরে যাওয়া যাবে না।’

আইনজীবী সমিতির তো নিজস্ব জমি নেই সেক্ষেত্রে করণীয় কি জানতে চাইলে এই আইনজীবী নেতা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ভেতর একটি জায়গা নির্ধারণ করে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব। আশাকরি এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবো।’