কারাবন্দী শিশু (প্রতীকী ছবি)

কারাগারে মায়ের সঙ্গে বন্দি ৩৫১ শিশু

বিভিন্ন অভিযোগে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি আছেন অনেক নারী। তাদের অনেকের সঙ্গেই আছে শিশু সন্তান। কারা বিধান অনুযায়ী, ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মায়ের সঙ্গে কারাগারে অবস্থানের সুযোগ আছে। সেই সুবাদে বন্দি মায়ের সঙ্গে অনেক শিশুর শৈশবও কাটছে কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে। এতে শিশুর মানবিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বৈরী পরিবেশের স্মৃতি নিয়ে তারা কারাগার থেকে বের হচ্ছে বলেও মনে করেন শিশু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী (২৩ জানুয়ারি, ২০২০) বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি মায়েদের সঙ্গে ছয় বছরের কম বয়সী ৩৫১টি শিশু রয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে ১৭২টি ছেলে ও ১৭৯টি মেয়ে শিশু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৫১টি শিশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগের কারাগারগুলোতে ১০৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগের কারাগারগুলোতে ১২৩টি, সিলেট বিভাগের কারাগারগুলোতে ২৩টি, রাজশাহী বিভাগের কারাগারগুলোতে ৪১টি, রংপুর বিভাগের কারাগারগুলোতে ১৭টি, খুলনা বিভাগের কারাগারগুলোতে ২৬টি, বরিশাল বিভাগের কারাগারগুলোতে ৬টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগের কারাগারগুলোতে ১২টি শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে অবস্থান করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ছয় বছরের কম বয়সী শিশুরা সাধারণত মায়েদের সঙ্গেই কারাগারে অবস্থান করে। মায়ের সঙ্গে কারাগারে যাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট শিশুর নাম ও বয়স রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত করা হয়। শিশু তার মায়ের সঙ্গেই নির্ধারিত সেলে থাকে। প্রয়োজন হলে কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। শিশুদের দায়িত্বে থাকেন একজন নারী ডেপুটি জেলার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের খাবার-দাবার ও প্রয়োজনীয় পথ্যও দেওয়া হয়। ডে-কেয়ারে শিশুদের খেলাধুলার সামগ্রীও সরবরাহ করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

শিশুদের কারাগারে রাখার বিষয়ে কারা অধিদফতরের ডিআইজি প্রিজন্স (সদর দফতর) টিপু সুলতান জানান, যেসব মা তাদের সন্তানদের নিজেদের কাছে রাখতে চান, শুধু তাদের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স ছয় বছরের নিচে হলে সঙ্গে রাখার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের সুন্দর পরিবেশে রাখা ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, ‘ছয় বছর পার হয়ে গেলে সেই শিশুকে বাইরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেক্ষেত্রে যদি বাইরে কোনও স্বজন না থাকে, তাহলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ তারা নিয়ে থাকেন। এছাড়া,ছয় বছরের বেশি ও ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের কারাগারে রাখা হয় না। এই বয়সী শিশু-কিশোরদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

বন্দি মায়েদের সঙ্গে কারাগারে থাকা শিশুদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমনিতেই তো কারাগারের পরিবেশ শিশুদের অনুকূলে নয়। ওই পরিবেশ তাদের মনে দাগ কেটে ফেলে। ফলে কম হোক আর বেশি হোক, সেখানকার আচার -আচরণ শিখে ফেলে তারা।’

এসব শিশুর মানসিক বিকাশ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই তাদের মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া তারা শৈশবের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। পরবর্তীতে এই শিশুরা যখন কারাগারের বাইরে আসে, তখন তারা তেমন আচরণই করে। তাছাড়া মা সম্পর্কেও শিশুর একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে পারে। মা যে একজন বন্দি সেটা যেন তারা আঁচ করতে না পারে, কারাগারগুলোতে তেমনই ব্যবস্থা করা উচিত।’ সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন