ডিজিটাল ওকালতনামা (বুথ)

ডিজিটাল ওকালতনামা: বেড়েছে আয়, কমেছে প্রতারণা

জালিয়াতি ও প্রতারণা ঠেকাতে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ডিজিটাল ওকালতনামা বিক্রি শুরু করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি। প্রথম মাস থেকেই এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। আইনজীবী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, চলতি বছর জানুয়ারিতেই ডিজিটাল ওকালতনামা বিক্রি করে আগের চেয়ে অনেক বেশি আয় হয়েছে।

আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসে প্রায় দুই হাজার কপি ওকালতনামা বিক্রি হয়েছে। যা থেকে আয় হয়েছে ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো, যা গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বেশি।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গাজী শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল ভেন্ডাররা জাল ওকালতনামা তৈরি করে বিক্রি করছে। আমরা হাতেনাতেও তাদের ধরেছি। এতে আইনজীবী সমিতি তথা বারের সকল সদস্যই তাদের বৈধ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ আইনজীবীরাই এই ওকালতনামা ক্রয় করেন, এই টাকা তাদের কল্যাণেই খরচ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘সে কারণেই আমরা জালিয়াতি ঠেকাতে বারের উদ্যোগে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ডিজিটাল ওকালতনামা বিক্রি শুরু করি। এর মধ্যে পূর্বে ক্রয় করা ম্যানুয়েল ওকালতনামাও যা বিক্রি হয়েছে, তা গ্রহণ করা হয়েছে। তবু জানুয়ারিতেই আমরা ১ হাজার ৯৮১ কপি ওকালতনামা বিক্রি করে প্রায় ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৮২০ টাকা আয় করেছি। আগের বছর একই সময়ের চেয়ে এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বেশি আয় করেছে সমিতি।’

এদিকে নতুন ওকালতনামায় আইনজীবীর নাম, নম্বর ও পরিচয় থাকায় বিচারপ্রার্থীদের প্রতারিত হওয়ার পরিমাণও কমেছে। আগে ওকালতনামায় আইনজীবীর দেয়া তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না। এখন ওকালতনামা কেনার সময়ই সেই তথ্য দিতে হচ্ছে। তাই দালাল চক্রের বা আইনজীবী পরিচয়ে প্রতারণা করার সুযোগও এখন থাকছে না, বলে মনে করছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতারা।

ডিজিটাল ওকালতনামায় থাকছে আইনজীবীর ছবি, সমিতিতে তার সদস্য নম্বর ও কিউআর কোড। কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে ওই আইনজীবীর নাম-ঠিকানা এবং তিনি কবে বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়েছেন তা জানা যাচ্ছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তানভীর আহমেদ সজীব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই টাউট চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। ওকালতনামা ডিজিটাল হওয়ার পর থেকে আইনজীবীদের তথ্য বারও যাচাই করতে পারছে। একজন আইনজীবীর তথ্য বা নম্বর ব্যবহার করে অন্য কারও প্রতারণার সুযোগ থাকছে না। এই পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিচারপ্রার্থীরাও আইনজীবীদের তথ্য দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই এখন প্রতারণার অভিযোগও আমরা কম পাচ্ছি।’

ওকালতনামার সঙ্গে জামিননামাও (বেইল বন্ড) বিক্রি হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। আইনজীবী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, একই সময়ে ডিজিটাল বেইল বন্ড বিক্রি করে কত টাকা আয় হয়েছে, সেই হিসাব দেয়া হয়নি। কারণ পূর্বে বিক্রি করা ম্যানুয়েল জামিননামা চালু থাকায় প্রকৃত হিসাব আসেনি। তবে ফেব্রুয়ারিতে সেই হিসাব দেয়া হবে বলেও জানান তারা।

জানুয়ারির শুরুর দিকে ডিজিটাল ওকালতনামা ও জামিননামা বিক্রি শুরু হয়। নতুন এই ওকালতনামা কিনতে একজন আইনজীবীকে নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে তার সদস্য নম্বর বলতে হয়। এরপর প্রিন্ট করে ডিজিটাল ওকালতনামা দেয়া হয়।

ডিজিটাল ওকালতনামা ও জামিননামা বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছে তিনটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত বুথ। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে পূবালী ব্যাংকের পাশে একটি, পুরনো জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের বিপরীতে একটি এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) এলাকায় একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

একজন বিচারপ্রার্থীকে পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ দিতে হলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। এতোদিন কাগজে ছাপানো ওকালতনামা ভেন্ডারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হতো। আর কোনো আসামি আদালত থেকে জামিন পেলে তার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনদারসহ জামিননামা আদালতে জমা দিতে হয়। সেগুলোও এসব ভেন্ডারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হতো। এখন বারের নির্ধারিত বুথ থেকেই ওকালতনামা ও জামিননামা কিনতে হচ্ছে। সূত্র- বাংলানিউজ