হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

প্রধানমন্ত্রীর পদ খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার অগ্রহণযোগ্য-বেআইনী: হাইকোর্ট

প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের ব্যক্তি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পদ খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনী উল্লেখ করে এইরূপ ক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর ‘শেখ হাসিনা সেতু’ সংলগ্ন জমিতে ‘পর্যটন কেন্দ্র’ প্রকল্প বেআইনি ঘোষণা করে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া এই আদেশ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিকভাবে সরকারের সবচেয়ে সম্মানীয় পদ। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের ব্যক্তি কর্তৃক সেই পদটিকে খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার অগ্রহণযোগ্য, বেআইনী এবং গভর্নমেন্ট সার্ভিস রুলস ভঙ্গের শামিল। তাই এহেন কর্মের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হলো।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল এই ‘পর্যটন কেন্দ্র’ প্রকল্পের সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়। কিন্তু মহানন্দা নদী সংলগ্ন ওই প্রকল্প চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিবাসী ও আইনের ছাত্রী রাবেয়া বসরী। একপর্যায়ে হাইকোর্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসককে এই প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত হলফনামা আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।

সেই অনুযায়ী জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে বিস্তারিত হলফনামা আকারে দাখিল করেন। যেখানে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।’ অন্যদিকে এই প্রকল্পের জমি বিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনও হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয়। সেই প্রতিবেদনে ওই প্রকল্প এলাকাকে নদীর জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর এ বিষয়য়ে বিস্তারিত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রাবেয়া বসরী ও নদী রক্ষা কমিশনের আবেদন নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।

আদালত তার আদেশে মহানন্দা নদীর ‘শেখ হাসিনা সেতু’ সংলগ্ন জমিতে “পর্যটন কেন্দ্র” প্রকল্প বেআইনি ঘোষণা করেন। তবে জমি অধিগ্রহণ করে বা মহানন্দা নদীর পাশে কোন খাস জমিতে পর্যটন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বলা আদেশে বলা হয়।’

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ারেস-আল-হারুনী। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর নদী কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কাজী মুহাম্মদ এমদাদুল হক।

এই আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ জেড এম নুরুল হক প্রকল্পটির বিষয়ে বিস্তারিত হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এ ধরনের নির্দেশনার কোনো কাগজপত্র জেলা প্রশাসক আদালতকে দেখাতে পারেননি। কিন্তু আমরা আদালতে নথি উপস্থাপন করে দেখিয়েছি যে, প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তাতে তিনি পর্যটন প্রকল্পটি নদীর জমিতে করতে বলেননি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক বছর আগেই অর্থাৎ ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসক ওই এলাকার জমির প্রকৃতি পরিবর্তনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই হাইকোর্ট তার আদেশে মহানন্দার জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিনা, তা তদন্ত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জনপ্রশাসন সচিবের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। এবং আদালত তার আদেশে বলেছেন, এই কর্মকর্তা একটি জেলার দায়িত্বে পেয়েই যদি প্রধানমন্ত্রীর পদকে ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করার সাহস দেখান, তাহলে তিনি সচিবের দায়িত্ব পেলে কি করবেন?’