সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে এক প্রার্থীর পরিবেশবান্ধব ব্যতিক্রমী ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন: পরিবেশবান্ধব ‘বনকাগজে’ এক প্রার্থীর ব্যতিক্রমী প্রচারণা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির দুইদিনব্যাপী নির্বাচন আগামী ১১ ও ১২ মার্চ (বুধ ও বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। সাধারণত সমিতি ও আইনজীবীদের কল্যাণে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারের দ্বারে দ্বারে উপস্থিত হয়ে স্বপক্ষে ভোট প্রার্থনা করে থাকেন প্রার্থীরা। তবে আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে এক প্রার্থীর পরিবেশবান্ধব ব্যতিক্রমী ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার সকলের নজর কেড়েছে।

অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিএনপি-জামাত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের পক্ষে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ওই আইনজীবীর নাম মহসিন কবির রকি। নির্বাচনী প্রচারনায় সাধারণ কাগজের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ‘বনকাগজ’ নামে পরিচিত বিশেষ ধরণের কাগজ ব্যবহার করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মহসিন কবির ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রচার কাজে লক্ষ ছিল টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা। যাতে করে প্রচারটাও হয় আবার পরিবেশও ব্যথা কম পায়। সেই উদ্যেশ্যে আমরা বনকাগজ নামের হাতে বানানো একটি নতুন কাগজে প্রচার কার্ড ছেপেছি।

তিনি বলেন, বনকাগজ একটি বিশেষ ধরনের কাগজ যা হাতে তৈরি এবং ব্যবহারের পর এটি মাটিতে ফেলে একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলে এটা থেকে ৯/১০ দিনের মধ্যে নানান ধরনের সবজি ও ফুলের গাছ উঠে। এখান থেকে গাছ উঠবে গ্রীষ্মের জাত – বড় গোল টমেটো, চেরী টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, ঝাল মরিচ, বিলাতী ধনিয়াপাতা, লালশাক, পাটশাক, ডাটা। ফুলের জাত আছে ডেইজি, মেরিগোল্ড, সূর্যমুখী, মিক্সড পর্তুলিকা, বাটন রোজ, সেলোশিয়া বা মোরগফুল।

অ্যাডভোকেট মহসিন কবির জানান, জাপানি দার্শনিক মাসানোবু ফুকুওকার আবিষ্কৃত পারমাকালচার কৃষি ধারনাকে জনপ্রিয় করার জন্য এই কাগজ তৈরি। পারমাকালচারে কোনো ধরনের রাষায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়না। একই জমিতে একসাথে বহু ধরনের ফসলের চাষ হয়। জমি সকল প্রান প্রাচুর্যে ভরপুর থাকে। সেই রকমই বনকাগজ ফেলে দিলে একই কাগজ থেকে কয়েক রকমের গাছ উঠবে যেখানে এক গাছ আরেক গাছের পুষ্টি সরবরাহ করবে, কীটপতঙ্গ প্রতিহত করবে এবং এ ধরনের কৃষিতে কোনো আগাছা নেই। সবাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে জমি হয়ে উঠে ব্যালেন্সড ইকোসিস্টেম।

তিনি আরও বলেন, বনকাগজ এখনো গবেষক মাহবুব সুমনের নিজের হাতে ক্ষুদ্র আকারে ছোট পরিসরে উৎপাদন হচ্ছে। ছোট পরিসরে এবং তৈরির প্রক্রিয়াটি ব্যাপক শ্রমসাধ্য বলে বনকাগজের দাম বেশী। কিন্তু এই কাগজ থেকে পরিবেশ তথা সকল প্রাণ যেভাবে উপকৃত হয় তাতে এর খরচের চেয়ে বহুগুণ উঠে আসে। ভবিষ্যতে এর বড় পরিসরে উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। তখন খরচও কমবে।

আইনজীবী মহসিন কবির বলেন, নির্বাচনী চর্চায় আমাদের দেশে প্রচার করতেই হয়। যেসব প্রচার ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয় সঙ্গত কারনেই তা সবসময় পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব হয়না তথ্য ও কার্যকর বিকল্পের অভাবে। আমাদের নির্বাচনী কাজের ভেতর দিয়ে আমরা একটা চর্চা শুরু করলাম। সবার ভালবাসা ও সহযোগিতায় একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।