সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত সাংবাদিক আরিফুলের জামিন

ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা পাওয়া কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জামিন পেয়েছেন। তবে এই জামিন চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি বা তিনি কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেননি বলে নিশ্চিত করেছেন আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার।

আজ রোববার (১৫ মার্চ) তাঁকে জামিন দেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা।

আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে শুনতে পাই আরিফুলের জামিন হয়ে গেছে। কারাগারে গিয়ে শুনলাম জামিন নিয়ে হাসপাতালে চলে গেছেন আরিফুল। কে আবেদন করল, কখন করল, কিছু জানি না।’

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ২৫ হাজার টাকার মুচলেকায় আরিফুলের জামিন হয়েছে। আবেদন কে করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সুজাউদ্দৌলা বলেন, ‘কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।’

গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে এনে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি টাস্কফোর্সের।

বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুরুজ্জামান লাবু এখন আছেন কুড়িগ্রামে। তিনি আরিফুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে বলেন, আজ সকালে কারা কর্তৃপক্ষ একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে (আরিফুলকে) বলেন, তোমার পরিবারের পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হচ্ছে। স্বাক্ষর করো। আরিফুল সেখানে স্বাক্ষর করেন।

তিনি আরও জানান, আবেদনটি আসলে করেছেন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব। আর আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয় সাখাওয়াত হোসেনকে।

নুরুজ্জামান বলেন, বাংলা ট্রিবিউন বা পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করার আগেই এটা করে ফেলা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।

সাংবাদিক আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদারের অভিযোগ, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে একদল লোক দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে ‘তুই খুব জ্বালাচ্ছিস’ বলে আরিফুলকে পেটাতে থাকে। এ সময় তাঁকেও গালাগাল করা হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন মিলে টেনেহিঁচড়ে আরিফুলকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে জামাও পরতে দেয়নি। সকালে তিনি জানতে পারেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আরেক দফা মারধরের পর সাজানো অভিযোগে আরিফুলকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনার পর গতকাল দেশজুড়ে আলোচনা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকালই কুড়িগ্রামে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার পৌঁছান।

জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন আজ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরিফুল স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ায় থাকেন। গত শুক্রবার রাতে সেই বাড়িতেই অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা।

তিনি দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়েছে। আর আরিফুল ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দোষ স্বীকার করায় তাঁকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আরিফুলকে তুলে নেওয়ার বিবরণ দিয়ে তাঁর স্ত্রী বলেন, শুক্রবার রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সে সময় দরজায় আঘাত। একপর্যায়ে আরিফুল যখন সদর ওসিকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই সবাই ঢুকে পড়ে। এই অভিযানে অন্তত ৪০ জন ছিল।

তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন কিছুদিন আগে একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করেন। এ নিয়ে আরিফুল রিপোর্ট করেন। এ ছাড়া জেলায় নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে জেলা প্রশাসকসহ অনেকে ক্ষুব্ধ হন।

অবশ্য জেলা প্রশাসক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘আমার নামে কোনো পুকুরের নামকরণ হয়নি। এক বছর আগে এমন প্রতিবেদন করেছিলেন আরিফুল। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘অ্যাজ ইউজুয়াল টাস্কফোর্স অভিযানে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের কয়েকজন ফোর্স, ব্যাটালিয়ন আনসারের পাঁচজন আর মাদকদ্রব্যের তিনজন ছিলেন। মাদকদ্রব্যই আমাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছিল।’