সরকার ও চার পত্রিকাকে এস আলম গ্রুপের আইনি নোটিশ
আইনি নোটিশ

মধ্যরাতে সাংবাদিককে তুলে এনে দণ্ড দেয়ার ঘটনা তদন্তে আইনি নোটিশ

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে রাত ১২টায় ঘর থেকে আটক ও পরে ডিসি কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা করে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনা ঘটেছে কি-না, তা তদন্তের জন্যে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ৬ জনের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মুহিদুল কবির শনিবার (১৪ মার্চ) গ্যারান্টিযুক্ত এক্সপ্রেস পোস্ট (জিইপি) এবং ই-মেলের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রতি এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, টাস্কফোর্স গঠন করা হয় জরুরি কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে। টাস্কফোর্স গঠন করে থাকলে কেন করা হয়েছে, তা নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, মোবাইল কোর্টে সাজা যদি হয়ে থাকে তবে তা কেন এবং অভিযুক্তকে যে স্থান থেকে ধরা হয়েছে সেখানে কেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়নি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সাংবাদিককে ধরে এনে মোবাইল কোর্টে দণ্ড দেয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন জড়িত কি-না তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবি জানানো হয়েছে নোটিশে।

নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মুহিদুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো ব্যাক্তিকে (অভিযুক্তকে) তার ঘর থেকে ধরে নিয়ে ডিসি কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ ধারা-৬ এবং ৭ এর পরিপন্থী বা অবৈধ আটকাদেশ।

তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিসি কার্যালয়ে সাংবাদিককে ধরে এনে দণ্ড দেয়ার ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে নোটিশে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে, নোটিশ পাওয়ার পর আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে। আর তা না হলে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। তবে, আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেছেন, ‘মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পেটানো, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।’

‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নাকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় নিয়েছিল, তা নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আরিফকে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ার বাড়ি থেকে আটকের পর সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

রাতের বেলায় সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার পৌঁছেছেন। তাকে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে তিনি দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আরিফের স্ত্রী মোস্তারিমার অভিযোগ, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তার নিজ নামে একটি পুকুর করেছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি একটি নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। এ সবই তার জন্য কাল হয়েছে।

তবে মোস্তারিমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘আমার নামে কোনা পুকুরের নামকরণ হয়নি। এক বছর আগে এমন প্রতিবেদন করেছিলেন আরিফুল। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। ওটা বিষয় না।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অ্যাজ ইউজুয়াল টাস্কফোর্স অভিযানে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমার একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের কয়েকজন ফোর্স, ব্যাটালিয়ন আনসারের পাঁচজন আর মাদকদ্রব্যের তিনজন ছিলেন। তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান হয়।’

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেছেন, তিনি এলাকায় ছিলেন না। পরের দিন শনিবার দুপুরে কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহিদ তাকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অভিযানের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়।

আবু জাফরের এই বক্তব্য জেলা প্রশাসককে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য কার্যালয়ের পক্ষ থেকেই চাওয়া হয়েছিল। তারপর এরা (ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা) বলেছে যে যাওয়া যাবে। অবশ্য আমি তো কাল ছিলামও না, আমি রৌমারিতে ছিলাম।’

আরিফুলের স্ত্রী রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‌‘শুক্রবার দিবাগত রাতে ঘুমোনোর আয়োজন চলছে, সেই সময়ে দরজায় আঘাত। কে ডাকছে, এ প্রশ্নে কোনো সাড়া নেই। সন্দেহ তাই বাড়ে। আরিফুল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে ফোন দেয়ার যখন চেষ্টা করেছেন, তখনই হুড়মুড় করে দরজা ভেঙে সাত-আটজনের একটি দল ঢুকে পড়ে। তাদের মধ্যে তিনজন জাপটে ধরে আরিফুলকে পেটাতে থাকে। আমাকেও মারার উপক্রম করে, গালিগালাজ চলতে থাকে। একজন আরিফুলকে বলেন, তুই খুব জ্বালাচ্ছিস।’ সূত্র- জাগোনিউজ