আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বান্দরবান

আদালতের স্মৃতি: আয়নাবাজির গল্প বলছি…

আবদুল্লাহ আল মামুন:

কোন একদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন,১৯৯০ এর ২২(গ) ধারার মামলায় নিবিষ্ট মনে সাক্ষী নিচ্ছি। অভিযুক্ত ৪০/৫০ বছরের শুকনো,লিকলিকে একজন মানুষ। কোন তারিখে গরহাজির থাকেনি। অনেক সময় কাশির দমকে মুখ চেপে বসে পড়ে।

৭ নং সাক্ষী জব্দ তালিকার সাক্ষী। এই সাক্ষীর দোকানের সামনে ঘটনা হয়। সাক্ষী ঘটনার তারিখ,সময়, স্থান বলার পরে বললো- সেদিন সকালে একটা সি এন জি ট্যাক্সিকে…. দাঁড় করায়। ট্যাক্সিতে ডকে দাঁড়ানো লোক আর মহিলাসহ একটা বাচ্চা ছিলো। বাচ্চার শরীরে চোলাই মদের প্যাকেট প্যাঁচানো। কিছু মদ তার পায়ের কাছের ব্যাগে। মহিলা ঐ মদ নিয়ে যাচ্ছিলেন।…তাদেরকে ধরে। মহিলা বলে সে টাকা দেবে। তাকে ছেড়ে দিতে।…ঐ লোককে মদসহ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু ঐ লোক বলছিলো সে মদের কারবার করে না। এই মদ তার নয়। মহিলাকে ২জন…তার দোকানে বসিয়ে রাখে ২ ঘন্টা। এরপর আরেকজন মহিলা টাকা নিয়ে এলে …মহিলা আর বাচ্চাকে ছেড়ে দেয়।এই লোক আসামী না।এই লোক নির্দোষ। মদ মহিলার। এই লোকের নয়।

আমি ট্যারা চোখে তাকিয়ে আছি। মাদকের জেনুইন ঘটনায়ও অনেক সময় জব্দ তালিকার সাক্ষী দেখে নাই,শুনে নাই বলে সাক্ষী দেয় বা দেওয়ানো হয়। আমি নিশ্চিত এই সাক্ষী আসামী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সত্য বলার শপথ নিয়ে কাল্পনিক গল্প ফাঁদছেন। কিন্তু, একটু পরেই নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য হলাম সাক্ষীর বাকী কথা শুনে।

তার আরো বক্তব্য হলো- আজ সে আদালতের বাইরে ঐ মহিলাকে দেখেছেন। মহিলা তাকে দেখে কাকে কাকে যেন ফোন করে কথা বলছিলো (সাক্ষী উত্তেজিত)। মহিলা তাকে চেনার চেষ্টা করছিলো। এখনো ঐ মহিলা কোর্টের বাইরে গাছ তলায় বসে আছে। আমি নড়ে চড়ে বসলাম। মনে হচ্ছিলো ডকে দাঁড়ানো আসামী, কথিত মহিলা এরা সবাই একটা চক্র। আমার কপাল খারাপ। আমার সামনেই কেন এসব উদ্ভট বিষয় হবে? সাক্ষী আসবে। সত্য,মিথ্যা যা বলার বলে চলে যাবে। শেষে দেখা যাবে কি হয়েছে। নিজের ভাগ্যকে কি দোষ দেয়া যায়!

আদালতে থাকা পুলিশকে বললাম ডকের এই সাক্ষীসহ বাইরে যেতে। আর এই সাক্ষীর দেখানো কোন মহিলা যদি দৌড় দেয়,তবে পুরা কোর্ট বিল্ডিং দৌঁড়ায়ে হলেও যেন ঐ মহিলা ধরে আনে।

পুলিশসহ সাক্ষী বের হয়ে যাওয়ার পরে আমার নিজের বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমি এই কথা বলেছি!

আদালতে বসেই সাক্ষী,পুলিশ ফেরার অপেক্ষা করছি। এরপর, ২ মিনিটের মধ্যে শ্যামলা একজন মহিলাসহ সাক্ষী,পুলিশ আদালতে হাজির। মহিলার বয়স ৩০/৩৫. আটপৌরে শাড়ি পরা৷ তখনো পান চিবুচ্ছেন। মাথায় সিঁদুর৷ নাটকীয় ঘটনা নিঃসন্দেহে! কাকতালীয় কি? কি জানি?

সুতরাং, আমি নতুন কাহিনী শোনার জন্য প্রস্তুত হলাম।

মহিলার বক্তব্য হলো সেদিন তিনি মদ পরিবহন করছিলেন। তিনি ১০,০০০ টাকা দিয়ে…থেকে রেহাই পান। কিন্তু …এই নিরপরাধ লোকটাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি…কে বার বার বলেছেন এই লোকটাকে ছেড়ে দিতে। …ওর কাছেও টাকা চায়।লোকটার কাছে ১০০০/১৫০০ টাকা ছিলো। এত কম টাকা…নেয়নি। এই লোকটার জন্য তার খারাপ লাগে। এই লোকের জামিনের জন্য তিনি সুদের উপরে ৮০০০ টাকা ধার নিয়ে লোকটার বোনকে দিয়েছেন। এখনো ঐ টাকার কিস্তি পরিশোধ করছেন। তিনি এই লোকটাকে ধর্মের ভাই ডেকেছেন (কান্না)।

আমি খুব ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করছি কি করবো? কিন্তু বুঝতে পারছিলাম এই লোক নির্দোষ। মহিলা সত্য বলছেন। সাক্ষীটা সত্য বলেছে। আদালতের চারপাশে লোক জমে আছে। সবাই অপেক্ষা করছে এই গল্পের শেষে কি হয়? বাড়ি গিয়ে গল্প করতে হবে। এমন কি আমার কোর্টের স্টাফরাও আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। কোর্ট পুলিশের অফিস থেকে বেশ কয়েকজন এসে বসে আছে। কি হয়? কি হয়?

আমার মাথায় ঘুরছে এই মহিলা অপরাধ করেছে। …টাকা নিয়ে মহিলাকে ছেড়ে দিয়ে ডকের এই লোকটাকে মহিলার জায়গায় চালান দিয়েছে। এই মহিলাকে শাস্তি পেতে হবে। কারণ, এই আয়নাবাজির মূল কারিগর সে৷

এই মামলার আগের ৬ জন সাক্ষীর ৫ জন…। তারা মুখস্থ সাক্ষী দিয়ে গিয়েছে। জব্দ তালিকার আরো একজন সাক্ষী জব্দ তালিকাকে সমর্থন করেনি। আর এই ৭ নং সাক্ষী যার দোকানের সামনে ঘটনা ঘটেছে এবং যিনি পুরো ঘটনা দেখেছেন, তিনি এসেতো কোর্টেই তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন। এই সাক্ষীর বক্তব্যের পরে আর সাক্ষী নেয়া অর্থহীন।

আমি তক্ষুনি সাক্ষ্য পর্যায় শেষ করলাম। ৩৪২ শেষ করে ফর্মালিটি শেষ করে আসামীর দিকে তাকিয়ে তাকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করলাম। সে দু’হাত জোড় করে তার প্রাপ্তি জানালো। তাকে আদালতের পেছনের বেঞ্চিতে বসতে বললাম।

মহিলাকে আসামীর ডকে তোলা হলো। এবার তাকে সব বুঝিয়ে বললাম। তার বক্তব্য লিখতে শুরু করলাম।

সে আজ এই অভিযুক্তের মামলার তারিখেই কেন আদালতে? তার উত্তর হলো সে তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো। আজ এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটু ছায়ার জন্য আদালতে ডুকে গাছের নীচে বসে। এই সময় অভিযুক্ত,সাক্ষী ওকে দেখে। এরপর পুলিশ ধরে নিয়ে আসে? কাকতাল?

সে আরো বলে যখন এই কাজ করে তখন তার পেটে বাচ্চা। স্বামী ছিলো নাপিত। স্বামী মারা গেলে সে দুই বাচ্চা,পেটেরটাসহ সাগরে পড়ে। তার পরিচিত এক লোক এই রাস্তা দেখিয়ে দেয়। বলে-এই কাজ (চোলাই মদ বহন) করতে পারলে আর খাওয়ার চিন্তা করতে হবে না৷ সে একবারই এই কাজ করতে এসেছিলো আর ধরা পড়েছিলো। সে টাকা দিয়ে ছাড়া পেলেও এই লোকটা ( অভিযুক্ত) আটকে যায়। লোকটা টাকা দিতে পারেনি। জেলে যায়। ২ মাসের উপরে জেলে থাকে। লোকটার জন্য তার খারাপ লাগে(কান্না)।

আমি তাকে তার অপরাধ বুঝিয়ে দিয়ে বললাম আমি আজ আপনাকে শাস্তি দেবো। আপনার কারনে এই নিরপরাধ লোকটা জেল খেটেছে। মামলার ঘানি টেনেছে। এই লোককে কে ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে? কে পারবে এই লোকের সময়, এই মামলার পেছনে খরচ হওয়া টাকা ফিরিয়ে দিতে? কেউ কি পারবে তার ২ মাসের উপরে জেলে থাকা সময় ফিরিয়ে দিতে? আপনি পারবেন? আপনিই বলুন কি হলে হবে ন্যায়বিচার? মহিলা তখন কাঠগড়া ধরে থর থর করে কাঁপছেন কান্নার দমকে।

আমি কি করবো? কি হলে হবে ন্যায়বিচার?

এবার,পেছন থেকে অভিযুক্ত হাতজোড় করে দাঁড়ালেন৷ বললেন -জামিন পেয়ে তিনি এই মহিলার বাড়ি গিয়েছিলেন। দেখেন যে, মহিলার জামাই নাই। খাওয়া পরার ঠিক নাই। পেটে বাচ্চা। ২ বাচ্চা ঘরে। মহিলা কি করবে? ওর ঘরের চারপাশে প্লাষ্টিক দেওয়া। সরকারী জায়গায় থাকে। তিনি কার বিচার চাইবেন? ভাগ্যকে দোষ দেওয়া ছাড়া আর কি বলবেন তিনি? এই মহিলা হিন্দু। তিনি মুসলমান। তবুও এই মহিলা তাকে ধর্মের ভাই ডেকেছে। একবেলা খাইয়েছে। তার কাছে পায়ে ধরে মাফ চেয়েছে। তিনি মাফ করেছেন। তিনি আল্লার কাছে বলতেন, একদিন তিনি এই মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পাবেন। ন্যায়বিচার পাবেন কোর্ট থেকে। এই বিশ্বাস তার ছিলো। আজ তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আদালত যদি এই মহিলাকে শাস্তি দেন তবে ওর বাচ্চারা পথে নামবে। না খেয়ে মরবে। তিনি এই মহিলার হয়ে আদালতের কাছে মাফ চাইছেন।

আমার কোর্টে কেন এসব হয়? মনে হচ্ছে, বাংলা সিনেমা চলছে। ক্ষনে ক্ষনে রং আর ঘটনা পাল্টাচ্ছে। আমার ক্ষীণ সন্দেহ- সব সাজানো নয়তো?

একটু কি চোখ কচ কচ করে উঠলো? নাহ! ন্যায়বিচার করতে হবে।

মহিলাটা কাঠগড়ায় মাথা নীচু করে ছিলেন। তিনি শান্ত অথচ দৃঢ় কন্ঠে বললেন -তিনি অপরাধী। অপরাধ তিনি করেছেন। আজ তিনি কোন কিছু ভয় করেন না। যা হয় হবে। আজ আদালত যে শাস্তি দেবেন তিনি তা মাথা পেতে নেবেন। তিনি শুধু একবার ঐ কাজ করেছিলেন। এখন বাবুর্চির সহকারী হিসেবে,বুয়ার কাজ করেন।
সব ঈশ্বরের বিচার। না হলে আজ তিনি কেন এই সময়ে আদালতে এই অবস্থায় পড়বেন? আর ঐদিন কেন এই লোক তার ট্যাক্সিতে থাকবেন? আজ তিনি কোন কিছুর পরোয়া করেন না। তার পাপের শাস্তি তিনি ভোগ করবেন। মহিলার কন্ঠে কিছু একটা ছিলো। আমি কিছু একটা শুনেছি। এমন কিছু যা হয়তো আদালতের এই বিল্ডিং, নথি অনেকদিন শুনেনি,অনুভব করেনি। সম্ভবতঃ সেই জিনিসটা হলো- সত্য।

পিনপতন নীরবতা। আমি কলম হাত থেকে রেখে চিন্তা করছি। কার বিচার? কিসের বিচার? আমি কাকে শাস্তি দেবো? ৩টা পেটকে চালানো এই মহিলাকে জেলে পাঠিয়ে আমি কি ন্যায়বিচার করবো? নাকি মহিলাকে শাস্তি দিয়ে প্রবেশনে পাঠাবো? আর এত সব কাকতালীয় ঘটনা আজ একসাথে একদিনে কেন? কে করছে এসব? কেন করছে? আমাকে কি দেখানোর চেষ্টা চলছে বা কলম দিয়ে কি লেখানো হচ্ছে? কে দেখাচ্ছে? সব কি মিথ্যা? এই সবই কি সাজানো? যা আমার সামনে এসেছে তা কি মিথ্যা? কেন আমার সামনে এই সব আসবে?

ঠিক আছে। আমি তাই করবো যা আমি দেখছি।

লোকটাকে বললাম -যান, আপনার বোনকে নিয়ে বাড়ি যান। এই হিন্দু,মুসলিম দুই ভাই বোন আদালতের গন্ডি ছেড়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হলেন। যে বন্ধনে অদৃশ্য কেউ একজন তাদেরকে বেঁধে দিয়েছে কার সাধ্য সেটা ভাংগে! আমরাতো নগন্য মানুষ মাত্র।

মহিলার বক্তব্যের উপরে আমি ছোট্ট করে লিখলাম- সাক্ষীর বক্তব্য ৫৪০ ধারায় গৃহীত। নীল কাগজের পেছনে লিখলাম – মামলার এজাহারকারী মিথ্যা,হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছেন। আদালতে শপথ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। মূল অভিযুক্তকে ছেড়ে দিয়ে তার জায়গায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলার অভিযুক্ত করেছেন। চালান দিয়েছেন। পরবর্তী তারিখে, তিনি স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কেন তাকে ২৫০ ধারায় শাস্তি দেওয়া হবে না এবং তার কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর নির্দেশ দেওয়া হবে না সে মর্মে কারণ দর্শাবেন।

মৌখিক ভাবে পরের তারিখে আসামী, এই মহিলা আর আজকের সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিলাম। ছবির শেষে যেমন সবার মুখে হাসি থাকে, তেমনি সবার মুখে স্মিত হাসি থাকলো কি?

আমার অনেক সহকর্মী,অগ্রজ,অনুজ বিচারক এজলাসে উঠার আগে ওজু করে নামাজ পড়েন। এজলাস থেকে নামার পরে আবার নামাজ পড়েন। এটা সম্ভবত কোন বিশেষ এবাদত। স্রষ্টার সাহায্য চান বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষমা চান হয়তো। বিচারক জীবনের শুরুর দিকে এজলাসে কখনো কখনো একটা অতিপ্রাকৃত, অস্বাভাবিক বিষয় ঘটতো । এটা ঠিক ইন্দ্রিয় দিয়ে বুঝার নয়। এমন কিছু যা ব্যাখ্যাতীত। আমি যখন খেয়াল করলাম তখন কি মনে করে একটা চিহ্ন পাতায় দিতাম। রায় দেওয়ার সময় দেখতাম চিহ্নের সত্যতা। এই ব্যাখ্যাতীত বিষয় দিনের পর দিন ঘটে চলতো। কিন্তু, সব মামলায় নয়। আমি এমনকি এক পর্যায়ে আমার সাথে কি হচ্ছে এটা নিয়ে ভয় পেতে শুরু করলাম। এই বিষয়টা শুধু এজলাসে ঘটতো। অন্য কোথাও নয়। এটা এমন কিছু যা একটা ইংগিতের মতো। শুধু আমার শরীর বুঝতে পারতো। আমি ঐ ইংগিত চিহ্ন দিয়ে লিখতাম।

প্রথম মাকে বললে তিনি বললেন -নামায পড়। সহধর্মিণীকে বললে বলে -নামাজ কলমারতো ধারে দিয়ে যাও না। নামাজ পড়।

কোন এক ট্রেনিংয়ে শ্রদ্ধেয় একজন অগ্রজ বিচারকের সাথে দেখা। ভাই অসম্ভব ধার্মিক এবং আমার প্রিয় একজন মানুষ। আমি তাকে বললাম। তিনি সাথে সাথে গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন- নামায পড়।তার স্ত্রী আমাদের প্রিয় আপাও কিছু বললেন না। ভাই সাথে আরো অনেক ধর্মীয় কথা বললেন। কাউকে বলতেও মানা করলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না উনি কি বোঝাচ্ছেন। আমি যখন ডেপুটেশনে ( বিচার কাজের বাইরে) ছিলাম এটা কখনোই হতো না। এটা শুধুমাত্র এজলাসে হতো। আমার ঐ অতিপ্রাকৃত বিষয় এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি আগে ভয় পেতাম। কিন্তু, আমি এখন চাই আমার বা আমাদের বোধ বুদ্ধি বিবেচনা যেখানে শুধু মানুষ হওয়ার কারনে সীমাবদ্ধ সেখানে বিচারের সময় আমার বা আমাদের সাথে এমন কিছু ঘটুক। সময়ের সাথে সাথে হয়তো আমার আমিতে আস্তরণ পড়েছে। কলুষিত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু,কলুষ মুক্ত কোন অগ্রজ বিচারক বা আমার ব্যাচমেট বা অনুজ,নবীন কোন বিচারকের সাথে হয়তো এমন কিছু হচ্ছে! এই মিথ্যার জগতে আমি আবার সত্য অনুভব করতে চাই। আমি বুঝতে চাই ন্যায় বিচার কি??

কি করলে হয় ন্যায়বিচার? সামান্য ১০,০০০ টাকার এই শাস্তি কার প্রাপ্য? পেটের দায়ে এই পথে আসা সন্তান সম্ভবা স্বামী হারা এই মহিলার? নাকি নিয়তির ফেরে ঐ ট্যাক্সিতে থমকে গিয়ে আটকে পড়া এই অভিযুক্তের? নাকি টাকার বিনিময়ে আয়নাবাজি করে একজনের জায়গায় আরেকজনকে চালান দেওয়া এজাহারকারীর! আমরা কেন এত সহজে অন্যের জীবনকে ঠুনকো ভেবে প্রবৃত্তির পথে হাঁটি? কেন অন্যের জীবনকে ধবংস করে দেই? এই অধিকার কি স্বয়ং স্রষ্টা মানুষকে দিয়েছেন? না দিয়ে থাকলে মানুষের কিসের এতো অহংকার?

ন্যায় বিচার কাকে বলে? ন্যায়বিচার কোথায়!

এজাহারকারীর কি হয়েছিলো?? যতদূর মনে পড়ছে তিনি স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সন্তোষজনক না হওয়ায় মিথ্যা,হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করায় The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ২৫০ ধারায় তাকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড, সাথে আর্থিক জরিমানা এবং তার কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার আদেশ দেয়া হয়েছিলো।

লেখক- আবদুল্লাহ আল মামুন; অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বান্দরবান।