ছগির আহমেদ টুটুল

চেক ডিজঅনার ও তার আইনগত প্রতিকার

ছগির আহমেদ টুটুল: হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,১৮৮১ এর চেক ডিস অনার মামলা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। এখানকার জটিল জটিল বিষয়গুলো ছোট ছোট আলোচনার মাধ্যমে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব। আদালতে চেক ডিস অনারের মামলা সবচেয়ে বেশি পরিমানে হয়ে থাকে। তাই এই সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশি ধারনা থাকা প্রয়োজন।তাতে করে আমরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হয়ে উঠতে পারব।

হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে সাধারনত চেক ডিস অনারের এর অভিযোগে ১৩৮ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।এ ই ধরনের মামলা নালিশী মামলা হিসেবে গণ্য হয়।তার মানে চেক ডিস অনারের এর মামলা কখনো থানায় করা যায় না। এই ধরনের মামলা নালিশের মাধ্যমে সবসময় আদালতে দায়ের করতে হয়।

নালিশী মামলা-
যে সকল মামলা থানায় এফ.আই.আর এর মাধ্যমে ফাইল না করে সরাসরি অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করা হয় তাকে নালিশী মামলা বলে। নালিশী মামলায় ফরিয়াদীকে মামলার খরচ বহন করতে হবে। ফরিয়াদী মানে হল মামলার অভিযোগকারী ব্যক্তি।

চেক ডিসঅনারের (cheque dishonour) মামলা করার কারন:

(১) ব্যাংকের হিসাবে অপর্যাপ্ত তহবিল বা অর্থ থাকলে।তার মানে চেকে যে পরিমান অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে তা অপেক্ষা কম অর্থ হিসাবে থাকা।

(২) যে ব্যক্তি চেক প্রদান করেছে যদি তার স্বাক্ষর না মেলে।

(৩) যদি চেকে উল্লেখিত অর্থের অংক ও কথার গরমিল পাওয়া যায়।

(৪) চেক মেয়াদ উর্ত্তীণ হলে।

(৫) যথাযথভাবে চেক পূরণ করা না হলে।

(৬) চেকে ঘষামাজা করলে।

(৭) চেকে কাটাকাটি থাকলে পূর্ণ স্বাক্ষর দিয়ে তা সত্যকরণ করা না হলে।

চেক ডিসঅনারের মামলা কোথায় দায়ের করতে হবে:

চেক ডিসঅনারের মামলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করতে হয়। মেট্রোপলিটন এরিয়াতে চেক ডিসঅনারের মামলা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়। আর অন্য এলাকাতে এই মামলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়। তারপর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি প্রস্তুত করে বিচারের জন্য দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দিবেন। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী চেক ডিসঅনারের মামলা দায়ের করা হয়।

নোট:একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন,চেক ডিসঅনারের মামলা কখনো চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিংবা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিচার করতে পারবে না। উক্ত আদালত মামলা প্রস্তুত করে দায়রা আদালতে বিচারের জন্য পাঠিয়ে দিবেন। তারপর প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুযায়ী নালিশকারীকে পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষা করার পর যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন নালিশের Primafacie ভিত্তি আছে তাহলে তিনি মামলা আমলে নিয়ে মামলাটি প্রস্তুত করে বিচারের জন্য দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দিবেন। তারপর মামলাটি দায়রা আদালত কর্তৃক বিচার করা হবে।চেক ডিস অনারের মামলা সবসময় সি.আর মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে। কারন এই সকল মামলা সরাসরি আদালতে দায়ের করা হয়ে থাকে।

চেক ডিসঅনার হলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করার পদ্ধতি :

আমরা জানি চেক ডিসঅনারের মামলা কিছুটা দেওয়ানী এবং কিছুটা ফৌজদারী প্রকৃতির। তাই চেক ডিসঅনার হলে দেওয়ানী আদালতে ও মামলা দায়ের করা যায়। দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের ১-৭ বিধিতে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে এরকম বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য দেওয়ানী মামলার ন্যায় সাধারণ পদ্ধতিতে মামলা পরিচালিত হলে অনেক সময়ের অপচয় হবে।তাই চেক ডিসঅনারের মামলা দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের অধীনে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে মামলা পরিচালনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, বিবাদীকে এক্ষেত্রে লিখিত জবাব দাখিল করতে হয় না।

নোটঃ দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের ১ বিধিতে বলা হয়েছে,হস্তান্তরযোগ্য দলিল বিষয়ে মামলা কেবলমাত্র হাইকোর্ট বিভাগ এবং জেলা জজ আদালতে দায়ের করা যাবে। আমরা জানি “চেক (cheque)” একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল। তাই চেক ডিসঅনার হলে দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের অধীনে হাইকোর্ট বিভাগ অথবা জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা করা যায়। মোকদ্দমা দায়েরের ক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারার বিধান বিবেচনায় রাখতে হবে। ১৫ ধারায় বলা হয়েছে,বিচার করার এখতিয়ার সম্পন্ন সর্বনিম্ন আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করতে হবে।তাই বাদীকে এই ধরণের মামলা জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হবে। এক্ষেত্রে বাদী হাইকোর্ট বিভাগকে এই ধরণের মামলা আমলে নিতে বাধ্য করতে পারবে না।[Bengal Techno Consult v. Registrar,2005 BCR 133]

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক ডিসঅনারের মামলা আমলে নিবেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কারণ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-কে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়। আর চীফ মেট্রোপলিটন এলাকায় চেক ডিসঅনারের মামলা আমলে নিবেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। ফৌজদারী কার্যবিধির ৬(৩) (খ) ধারাতে বলা হয়েছে,প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট-কে মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়। তারা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯০(১) ধারা অনুযায়ী চেক ডিসঅনারের মামলা আমলে নিবেন।

চেক নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দেবার সময়:

(১) চেক ইস্যু করার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে।

(২) অথবা এর বৈধতা বিদ্যমান থাকাকালীন সময়ের মাঝে যেটা আগে ঘটে।

চেক ডিসঅনার হলে মামলা করার পদ্ধতি :

চেক গ্রহীতা বা ধারক চেক ডিসঅনারের বিষয়টি জানার পর ১৩৮ ধারার বিধান মোতাবেক ৩০ দিন সময় দিয়ে টাকা পরিশোধের জন্য চেক দাতাকে নোটিশ দিবেন।৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতা চেকগ্রহীতাকে চেকে উল্লেখিত টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে চেকগ্রহীতা এখতিয়ারসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।

(১) সঠিক সময়ের মাঝে নগদায়নের জন্য চেক দাখিল।

(২) চেক দাতাকে নোটিশ প্রদান। চেকটি অপরিশোধিত হয়ে ব্যাংক থেকে ফেরত আসার ৩০ দিনের মাঝে চেক দাতাকে নোটিশ দিতে হবে।নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মাঝে চেক দাতা চেকে উল্লখিত টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তখন চেক গ্রহীতা মামলা করতে পারবে।

চেক ডিস অনারের মামলা করার কারন উদ্ভব:

(১) চেক দাতার নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিন অতিবাহিত হলে।

(২) চেকে উল্লেখিত অর্থ পরিশোধ না করলে। পরবর্তী ৩০ দিনের মাঝে চেক ডিস অনারের মামলা করার কারন উদ্ভব হয়।

যে সময়ের মাঝে চেক ডিস অনারের মামলা করতে হবে:

চেক ডিস অনারের অভিযোগ ১৩৮ সি অনুচ্ছেদের অধীন মামলা দায়ের করার কারন উদ্ভব হওয়ার তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে দায়ের করতে হবে।

নোট: চেক ডিস অনারের মামলা করার সময়সীমা:

চেকগ্রহীতা ব্যাংক থেকে চেকটি অপরিশোধিত হয়ে ফেরত এসেছে, তা জানার ৩০ দিনের মধ্যে চেক দাতাকে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতা চেকগ্রহীতাকে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলো। চেকদাতা টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবার ১ মাসের মধ্যে চেকগ্রহীতা মামলা দায়ের করতে পারবে। তার মানে এখানে চেক ডিসঅনারের মামলা করার মোট সময়(৩০+৩০+৩০)=৯০ দিন।

চেক ডিস অনার হলে শাস্তি বা জরিমানা:

(১) এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড।

(২) অথবা জরিমানা যা চেকে উল্লেখিত টাকার ৩ গুন।

(৩) অথবা উভয়।

নোট: হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮(১) ধারায় চেক প্রত্যাখিত হবার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে চেক ডিসঅনারের শাস্তি হল ১ বছরের কারাদন্ড অথবা চেকে উল্লেখিত টাকার ৩গুন জরিমানা অথবা উভয়। এখন কথা হল চেক ডিসঅনারের শাস্তি যদি চেকে উল্লেখিত টাকার ৩গুন জরিমানা হয়,তাহলে টাকাটা কে পাবে? এক্ষেত্রে চেকগ্রহীতাকে তার দাবীকৃত টাকাটা পরিশোধ করে বাকী টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যাবে। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,১৮৮১ এর ১৩৮(২) ধারার বলা হয়েছে,উপ-ধারা(১) মোতাবেক যেক্ষেত্রে অর্থদন্ড আদায় হয় সেক্ষেত্রে আদায়কৃত অর্থদন্ড হতে চেকে বর্ণিত টাকা যতদুর পর্যন্ত আদায়কৃত অর্থদন্ড হতে প্রদান করা সম্ভব চেকের ধারককে প্রদান করতে হবে। সুতরাং চেকের ধারক বা গ্রহীতা চেকে বর্ণিত টাকার বেশী পরিমান অর্থ পাওয়ার অধিকারী নয়। কোন আদালত চেকে বর্ণিত টাকার তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা করলেও বাদীকে চেকে বর্ণিত টাকা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বাকী টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিবেন।

আপীল:

(১) ১৩৮ ধারায় চেক ডিস অনার মামলায় প্রদও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।

(২) ১৩৮ ধারায় প্রদও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে কোথায় আপীল করা যাবে সে সম্পর্কে ১৩৮ থেকে ১৪১ ধারায় কিছু বলা হয়নি।

(৩) এক্ষেএে ফৌজদারী কার্যবিধির আপীলের বিধান প্রযোজ্য হবে।

(৪) ১৩৮ ধারায় প্রদও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে দায়রা জজ অথবা হাইকোর্ট বিভাগে।

নোট: আপীল সম্পর্কে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন।হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে আপীল সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এক্ষেত্রে CrPC এর আপীলের বিধান কার্যকর হবে। চেক ডিসঅনারের মামলাটি যদি যুগ্ম দায়রা জজ কর্তৃক বিচার হয়,তাহলে দায়রা জজের নিকট ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে। এক্ষেত্রে CrPC এর ৪০৮ ধারার আপীলের বিধানটি প্রযোজ্য হবে। এখানে বলা হয়েছে, যুগ্ম দায়রা জজের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট আপীল করা যাবে।

অন্যদিকে চেক ডিসঅনারের মামলাটি যদি দায়রা জজ অথবা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক বিচার করা হয়, তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে CrPC এর ৪১০ ধারার আপীলের বিধানটি প্রযোজ্য হবে। এখানে বলা হয়েছে,দায়রা জজ অথবা অতিরিক্ত দায়রা জজের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যাবে।

পরিস্হিতি-১:

যদি ১৩৮ ধারায় চেক ডিসঅনারের মামলাটি যুগ্ম দায়রা জজ কর্তৃক বিচার করা হয়। তাহলে ৩০ দিনের মাঝে দায়রা জজের নিকট আপীল দায়ের করতে হবে।

পরিস্হিতি-২

চেক ডিসঅনারের মামলাটি যদি দায়রা জজ কিংবা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক বিচার করা হয়। তাহলে ৬০ দিনের মাঝে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে।

আপীল দায়েরের পূর্বশর্ত:

চেক ডিসঅনারের মামলায় চেকে উল্লেখিত অর্থের সর্বনিম্ন ৫০% জমা দিয়ে আপীল দায়ের করতে হবে। চেক ডিসঅনারকৃত চেকের টাকার ৫০% টাকা যে আদালত শাস্তি সে আদালতে জমা দিয়ে আপীল দায়ের করতে হবে। তার মানে ৫০% টাকাটা বিচারিক আদালতে জমা দিতে হবে, আপীল আদালতে নয়।

রিভিশন দায়ের:

চেক ডিসঅনারের মামলায় রিভিশন দায়ের করা যায়।শুধুমাত্র আইনগত প্রশ্নে রিভিশন দায়ের করা যায়। এখানেও ফৌজদারী কার্যবিধির রিভিশনের বিধান প্রযোজ্য হবে। এখানে বলা হয়েছে,আইনগত প্রশ্নে রিভিশন দায়ের করা যায়। এখন কথা হলো আইনগত প্রশ্ন বলতে আমরা কি বুঝি? যেমন-ব্যাংক থেকে চেকটি অপরিশোধিত হয়ে আসার পর ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতাকে নোটিশ না দেয়া। এটাও একটা আইনগত প্রশ্ন।আবার মামলা করার কারণ আছে কিনা এটাও একটা আইনগত প্রশ্ন। মামলাটি তামাদিতে বারিত কিনা, এটাও একটা আইনগত প্রশ্ন।

১৩৮ ধারার মামলা থেকে আইনগত বিষয় উদ্ভূত হলে ফৌজধারী কার্যবিধির ৪৩৯ ধারা মতে হাইকোর্ট বিভাগে অথবা একই আইনের ৪৩৯ক ধারা মতে দায়রা আদালতে রিভিশন দায়ের করা যায়। আগে একমাত্র হাইকোর্ট বিভাগ রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। ১৯৭৮ সালে Law Reforms Ordinance দ্বারা ফৌজদারী কার্যবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে দায়রা জজকে রিভিশন ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

রিভিশন দায়েরের সময়সীমা:

তামাদি আইনে ফৌজদারী মামলায় রিভিশন দায়েরের সময়সীমা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের case law এর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হবে।উচ্চ আদালত অভিমত প্রকাশ করেন,”ফৌজদারী আপীল মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রচলিত সময়সীমাই রিভিশন মামলা দায়েরের সময়সীমা বলে গণ্য হবে।”

১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ১৫৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,বিচারিক আদালত রায় প্রদানের ৬০ দিনের মধ্যে ফৌজদারী আপীল দায়ের করতে হয়।রিভিশন দায়েরের ক্ষেত্রেও একই সময়সীমা প্রযোজ্য হবে।তার মানে বিচারিক আদালত কর্তৃক রায় প্রচারের ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন দায়ের করতে হবে।

রিভিশন নিষ্পত্তির সময়সীমা:

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪২ক(২) ধারায় বলা হয়েছে,পক্ষগণের উপর নোটিশ জারী হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রিভিশন আদালত রিভিশন কার্যক্রম নিষ্পত্তি করবেন।

নোট: ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯ক(২) ধারায় বলা হয়েছে,কোন পক্ষ কর্তৃক দায়রা জজের নিকট রিভিশন দায়ের করা হলে,এই বিষয়ে দায়রা জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।তার মানে ফৌজদারী মামলায় দ্বিতীয় রিভিশনের কোন সুযোগ নেই।

রিভিউ (Review):

দেওয়ানী মোকদ্দমায় রিভিউ(Review) করার বিধান রয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৪ ধারা এবং ৪৭ আদেশে রিভিউ করার বিধান আছে। ক্রিমিনাল মামলায় রিভিউ করার কোন বিধান নেই। ফৌজদারী কার্যবিধিতে রিভিউ সংক্রান্ত কোন বিধান রাখা হয়নি। তাই ক্রিমিনাল মামলায় রিভিউ করার কোন সুযোগ নেই। তবে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন মামলার সিদ্ধান্ত থেকে দেখা যায়,১৩৮ ধারার চেক ডিসঅনারের মামলা কিছুটা ফৌজদারী এবং কিছুটা দেওয়ানী প্রকৃতির।তার আলোকে চেক ডিসঅনারের মামলায় রিভিউ করা যেতে পারে।

Nizam Uddin Mahmood v. Abdul Hamid Bhuiyan and another[24 BLD (2004)(AD)239] মামলায় সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলায় রিভিউ সংক্রান্ত বিধানের অনুমতি দিয়েছেন।

লেখক- সহকারী জজ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, শরীয়তপুর।