অ্যাডভোকেট কাজী হেলাল উদ্দিন

কেন আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রয়োজন?

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, আইনজীবীর উপর আক্রমণ, অত্যাচার নির্যাতন বেড়েই চলছে। যেহেতু আদালতে বিচার প্রার্থী বিবাদ মান পক্ষদের নিয়ে আইনজীবীদের কাজ করতে হয়, তাই সাধারণভাবে একটা ঝুঁকির বিষয় থেকেই যায়। ইদানিং  দেখা যায়, মামলার প্রতি পক্ষ মামলায় হেরে গিয়ে  উকিলের উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে। এই প্রতিশোধের মাত্রা হুমকি, অপহরণ, এমনকি হত্যাকাণ্ড  পর্যন্ত গড়ায়। উকিলের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে, উকিলের পরিবারের উপরও তাঁরা চড়াও হয়। আর এর মূল্য দিতে হয়, উকিলকে। যেহেতু একটি বিশেষ পরিবেশে, কাজ করতে হয়, এই জন্য উকিলের নিরাপত্তার বিষয়টি এখন সামনে নিয়ে আশা সময়ের দাবী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উকিলের উপর হামলার মাত্রা বিবেচনায় সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী সরকারী উকিলদের জন্য গানম্যানের ব্যাবস্থা করেছে। কিন্তু সকল উকিলের জন্য নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোন ব্যাবস্থা নেই। তাই উকিলরা অনেকটা অরক্ষিত অবস্থার মধ্যেই পেশাগত কাজ করে থাকেন। কিন্তু এখন উকিলের উপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, খুন, গুম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিষয়টি নিয়ে, আবার ভাবার সময় এসেছে।

কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একটা খবর এসেছিল যে, বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেলকে অজ্ঞাতনামা  ব্যক্তি হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এবিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারন ডায়রি করা হয়েছে। শাহবাগ থানা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেলকে হত্যার হুমকি দিয়ে বেনামী চিঠি প্রেরন এই প্রথম নয়, এর আগেও কয়েক দফা এধরনের চিঠি প্রেরন করা হয়েছিল। এটর্নি জেনারেল বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা। তিনি আদালতে রাষ্ট্রের পক্ষে ওকালতি করেন। তিনি যা করেন সেটা তাঁর দায়িত্ব কর্তব্যের জায়গা থেকে। এজন্য তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কোন মানে হয় না। তবে যারা এধরেনের হুমকি দেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনের যা ব্যাবস্থা আছে তা নেওয়া হয়ে থাকে। আর এটর্নি জেনারেলের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রধারী পুলিশ থাকে। এতো বললাম এটর্নি জেনারেলের কথা। এবার আসি অন্যান্য আইনজীবীদের কথায়। আইনজীবীরা বিবাদমান পক্ষদের নিয়ে আদালতে কাজ করেন। কেউ বাদি পক্ষে, কেউ বিবাদি পক্ষে। আসামি পক্ষে বা ফরিয়াদি পক্ষে। আদালতে আইনজীবীরা যার যার মক্কেলের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। তাই বলে কোন পক্ষ যদি আইনজীবীর উপর চড়াও হন, সেটা অবিম্রস্যকারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। এধরনের আক্রমণ অপরাধও বটে। দণ্ডবিধিতে এধরনের অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির ব্যাবস্থা আছে। কিন্তু আইনজীবীরা যেহেতু মামলার পক্ষদের আইনি সেবা দিতে গিয়ে কারো পক্ষ নেন তাই অনেকে আইনজীবীর উপর ক্ষুব্ধ হন। এই ক্ষোভ থেকে অনেক সময় আইনজীবীদের উপর আক্রমণ করে বসেন। দণ্ডবিধির ধারা অনুযায়ী তাঁর বিচার হয়। কিন্তু এই আইন যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ভুক্তভোগী সহ আইনজীবীরা। আইনজীবীরা আইনজীবী সুরক্ষা আইন চান।

আমরা বিগত কয়েক বছরে উকিলের উপর হামলা মামলা নির্যাতনের কিছু ঘটনা এখানে তুলে এনেছি। সব ঘটনা এখানে আসেনি। শুধু বিভিন্ন পত্রিকায় যেগুলি এসেছে সেগুলি এখানে তুলে আনা হয়েছে। এছাড়া বহু ঘটনা আছে সারা দেশের বিজ্ঞ আইনজীবীরা সে সব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আছেন।

২ মে ২০২০ খ্রিঃ বরিশাল শহরে টিসিবি’র পণ্য বিক্রয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করার জেরে, আইনজীবী রবিউল ইসলাম রিপ ন কে ৭ সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল। এই ঘটনায় সারাদেশের আইনজীবীরা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় তোলে। পরে ঐ আইনজীবী জামিনে মুক্ত হন।

২০২০ সনের এপ্রিল মাসের ১৬ তারিখ দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হন আইনজীবী তুহিন হাওলাদার। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ঘটনায় তুহিন হাওলাদার হামলাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে উরধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন।

২০২০ সনের মার্চ মাসে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোঃ মিকাইল মিয়া, নিজের পুকুরে খনন কাজ চালানর সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তার নিকট চাঁদা দাবী করে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষণ করে।

২০২০ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ টাংগাইল জজ কোর্টের আইনজীবী এবং টাংগাইল জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোঃ রুহুল আমিনের উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। রুহুল আমিনের পা ভেঙ্গে যায়। তাঁকে টাংগাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২০২০ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ পটুয়াখালীর গলাচিপায় অ্যাড মনি রুল ইসলামের উপর হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ী লুপা ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী। মাথা, বুক ও হাতে গুরুতর জখম হওয়ায় তাঁকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করা হয়।

২০২০ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ  পটুয়াখালি আইনজীবী সমিতির সদস্য  বশিরুল আলমের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে এই ঘটনায় থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

২০২০ সনের জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখ ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে অপহৃত হন কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলামের ছেলে তানজিম আল ইসলাম ও শ্যালক খালিদ হাসান। পরে পুলিশ অত্যান্ত দক্ষতার সাথে অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার ও আসামীদের গ্রেপ্তার করেন। ঐ আসামিরা আইনজীবী ফক্রুলের পরিচিত এবং মক্কেল।

২০১৯ সনের ১২ই ডিসেম্বর পরিচয়পত্র দেখানোর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের গেটে পুলিশ কর্তৃক লাঞ্ছিত ও আটক হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ ফায়জুল্লাহ। পরে তাঁর সহকর্মীদের হস্তক্ষেপে তিনি ছাড়া পান।

২০১৯ সনের ২৩ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার আইনজীবী শফিকুল ইসলামের উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত শফিক কে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

২০১৯ সনের ২৩ আগস্ট শুক্রবার বেলা আড়াই ঘতিকায় মামলার বিবাদী পক্ষের হামলার শিকার হন আইনজীবী মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ভোলার  সিনিয়র সহকারী জজের আদেশ মোতাবেক  উকিল কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

৮ জুলাই ২০১৯ খ্রিঃ টাংগাইল নিজ বাসা থেকে চা পান করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হন টাংগাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মিয়া মোহাম্মদ হাসান আলী রেজা (৭৬)। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে টাংগাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়। নিখোঁজের পর তাঁকে উদ্ধারের দাবীতে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেন তাঁর সহকর্মীরা। ১৩ ই জুলাই ২০১৯ খ্রিঃ টাংগাইল শহরের লৌহ জং নদীতে আইনজীবী হাসান আলী রেজার লাশ পাওয়া যায়।

২০১৯ সনের জুন মাসের ২৬ তারিখ নারায়ন গঞ্জ জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে মামলার প্রতি পক্ষের হামলার শিকার হন আইনজীবী জাস মিন আহম্মদ। পরে তাঁর সহকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন।

২৭ মে ২০১৯ খ্রিঃ মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট আবিদা সুলতানা খুন হয়েছেন। রবিবার বড়লেখা উপজেলার মাধবগুল গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ির ভাড়াটিয়া স্থানীয় মসজিদের ইমাম তানভীর আহমদ পালিয়ে গেলে তাকে সোমবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল বরুনা এলাকা থেকে আটক করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। ​

২৬শে এপ্রিল ২০১৯ খ্রিঃ পঞ্চগড়ে্র  কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হন আইনজীবী পলাশ কুমার রায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ৩০শে এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। কারাগারের মতো একটি সুরক্ষিত স্থানে একজন বন্দীর গায়ে আগুন লাগার ঘটনা এই মধ্যে বেশ আলোড়ন তুলেছে। এই ঘটনায় সায়েদুল হক সুমন নামের একজন আইনজীবী আদালতে বাদী হয়ে একটি রিট দায়ের করেন হাইকোর্টে।

২০১৯ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ পাবনা জেলা জজ আদালত চত্বর থেকে অপহৃত হন আইনজীবী সাইদুল ইসলাম চৌধুরী। একটি মামলার বাদি পক্ষের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা তাঁকে অপহরণ করে। তিনি ঐ মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। পরে পুলিশ ঐ আইনজীবীকে উদ্ধার করে ও আসামীদের গ্রেপ্তার করে।

২০১৮ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বংপুরের আইনজীবী সামছি বেগম মক্কেলের পক্ষে মামলা করতে গিয়ে মামলার বাদী নওরিন  কর্তৃক হামলার শিকার হন। পরে নওরিন কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০১৮ সনের ২৩ মে বুধবার দিনাজপুর বারের আইনজীবী রবিউল আলম দিনাজপুর ডিসি অফিসের স্টাফ দ্বারা লাঞ্ছিত হন। বিষয়টি নিয়ে মামলা করে ডিসি অফিসের কর্মচারীরা। আইনজীবী সমিতিও পাল্টা কর্মসূচী ও আল্টিমেটাম দেয়। আমরাও ফেসবুকে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় তুলি। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয় বলে শুনেছি।

২০১৮ সনের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হামলার শিকার হন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ও তৎকালীন হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জনাব জেড আই খান পান্না। এই হামলার প্রতিবাদে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

২০১৮ সনের ৩০ মার্চ রংপুর বিশেষ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রথিশ ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা খুন হন। তাঁর স্ত্রী দিপা ভৌমিক তাঁর পরকীয়া প্রেমিকের সহায়তায় রথিশকে খুন করেন। পরে আসামি ধরা পড়ে। স্বীকারোক্তি দেয়। এখন বিচার চলছে।

২০১৮ সনের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্য তারিক আহম্মেদ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। এই ঘটনায় প্রতিবাদের উত্তাল হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম আদালত পাড়া। সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তোলেন সারা দেশের আইনজীবী সমাজ।

২০১৮ সনের জুলাই মাসের ১০ তারিখ হামলার শিকার হন বাগেরহাটের চিতলমারির এক আইনজীবীর বাবা (৮০)। আইনজীবী এমরান হুসাইনের পরিবারের সাথে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরোধিতার জের ধরে চেয়ারম্যানের লোকজন এই হামলা চালায়।

২০১৭ সনের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের এক নারী আইনজীবীকে আদালত চত্বরেই জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ ঐ দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করে। এই হামলার প্রতিবাদে ফুসে ওঠে চট্টগ্রামের আইনজীবীরা।

২০১৭ সনের জুনে চাঁদপুর বারের আইনজীবী কুলসুমা বেগমকে বেধড়ক প্রহার করে তাঁর স্বামী সরদার মিশু। পুলিশ মিশুকে গ্রেপ্তার করে।

২০১৮ সনের ২০ জুলাই রবিবার ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী নিউটন চৌধুরীকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। নিউটনকে হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেন ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ আইনজীবীরা।

২০১৭ সনের জুলাই মাসের ২৭ তারিখ মানবাধিকার আইনজীবী মঞ্জিল মোরশেদকে হত্যার হুমকি দেয় আসামীরা। ঐ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাধারন ডায়রি করা হয়।

২০১৭ সনের আগস্ট মাসের ২২ তারিখ নারায়নগঞ্জের সাত খুন মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকনের মেয়ে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা আইনজীবী খোকনের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের মুখে কৌশলে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।

২০১৭ সনের ১২ই জুলাই রাত ১২ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবী এস এম গালিবের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এই সময় গালিবের সহকারীকেও মারধর করে তাঁরা। গালিবের উপর হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতি প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিবাদের ঝড় তোলেন সারা দেশের আইনজীবীরা। আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত আসামীদের জেলহাজতে পাঠায়। মামলাটি এখন বিচারাধীন।

২০১৭ সনের জুন মাসের ২৭ তারিখ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য টি এম মুহিউদ্দিন। মুহিউদ্দিনের উপর হামলার প্রতিবাদে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা সহ মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিবাদের ঝড় তোলে সারা দেশের বিজ্ঞ আইনজীবীরা।

২০১৭ সনের জুলাই মাসের ৩ তারিখ হামলার শিকার হন বরিশাল আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্য মোঃ সালাউদ্দিন মাসুম। একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে এই হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিবাদে তাঁর সহকর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেন।

২০১৭ সনের জুলাই মাসে ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির আইনজীবী মানিক আচার্য ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারের বড় ছেলে আমিনুল ইসলাম কত্রিক হামলার শিকার হন। মানিক আচার্যকে ঝালকাঠি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায় মানিক আমিনুল ইসলামের আইনজীবী ছিলেন।

২০১৭ সনের অক্টোবরের ১৩ তারিখ হামলার শিকার হন বাগেরহাট বারের প্রবীণ সদস্য নুর মোহাম্মদ। নুর মোহাম্মাদকে হত্যার উদ্দশ্যে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ির আঘাতে মারাত্মক জখম করে ফেলে রেখে যায়। পড়ে স্থানীয় জনতা নুর মোহাম্মাদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন করে।

২০১৭ সনের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতের তরুণ আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পি খুন হন। বাপ্পির খুনের সাথে জড়িত ছিল তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিদা। স্ত্রী রাশিদা তাঁর সহযোগীদের দিয়ে বাপ্পির মুখে স্কচটেপ পেচিয়ে, গোপনাঙ্গ কর্তন করে বাপ্পিকে হত্যা করে। রাসিদা বাপ্পি হত্যার কাহিনী বর্ণনা দেয়। এখন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে।

২০১৭ সনের ডিসেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী মোহাম্মাদ শহিদুল আলম। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাদি পক্ষের লোকজন শহিদুলের উপর হামলা চালায়। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি এই হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

২০১৬ সনে লক্ষ্মীপুরে আদালত ভবন নির্মাণ করতে বাধা প্রাপ্ত হলে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয় লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতি। বর্জন কর্মসূচী পালনের মধ্যেই আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে।

২০১৬ সনের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে জেলা প্রশাসকের নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার সদস্যেদের হাতে নিশাত সুলতানা নামে এক নারী আইনজীবী লাঞ্ছিত হন। ঐ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচী পালন করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। পরে মামলা হয়।

২০১৬ সনে খুলনায় এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করায় আইনজীবীকে লাঞ্ছিত করা হয়।

২০১৬ সনের জুন মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে এস পির কক্ষে লাঞ্ছিত হন ঠাকুরগাঁও জেলা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও জেলা জিপি আলতাফুর রহমান খান। বিষয়টি নিয়ে অনেক কিছু হয়। পড়ে এস পি ক্ষমা চান।

২০১৬ সনের ৩ মে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরগুনা জেলা বারের আইনজীবী মইনুল আহসান তালুকদার বিপ্লবকে থানায় নিয়ে নৃশংস নিষ্ঠুর বর্বর নির্যাতন চালায় পুলিশ। এমনকি আইনজীবী বিপ্লবের বাবা নিজের ছেলের খোঁজ নিতে থানায় গেলে সেই বৃদ্ধ পিতাকেও আটকে রাখে বরগুনা থানা পুলিশ। এই ঘটনায় সারা দেশের আইনজীবীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঘর ওঠে। পরে মীমাংসা হয়।

২০১৬ সালের ৮ মার্চ  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন আইনজীবী ইসমাইল হোসেন পলাশ। তিনি ছিনতাইকারির ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

২০১৬ সনের ১০ আগস্ট জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জজ সহ ৪০ জন আইনজীবীকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে বেনামী চিঠি পাঠায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। এবিষয়ে জয়পুরহাট থানায় একটি সাধারন ডায়রি করা হয়। আসামিদের সনাক্ত করা যায়নি।

২০১৬ সনের ২১ নভেম্বর ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ঢাকার নিম্ন আদালতের এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকার ওয়ারী থানা পুলিশ। সকাল ৬টার দিকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালকে। ওই আইনজীবী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভি ও দৈনিক সরেজমিন বার্তার আদালত প্রতিবেদক। গ্রেপ্তারের পর থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতে প্রেরণ করা হলে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মমতাজ বেগম দ্রুত মুক্তির নির্দেশ দেন।

২০১৫ সনের ২৮ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার রামপুরায় নিজ বাসায় খুন হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাহমিদা আকতার বিথুন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আখতারুল আলমের মেয়ে। চোখে মুখে মরিচের গুড়া ছিটানো, গলায় ওড়না পেঁচান কম্বল দিয়ে মোড়ান ও ঘাড় মটকানো অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

২০১৫ সনের ২ মার্চ  সিলেট জেলা জজ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে অ্যাডভোকেট ফয়েজ আহমদ নামের এক আইনজীবী জখম হন। তাঁকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায় যে, অ্যাডভোকেট ফয়েজ আদালতের কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। কোর্ট  চত্বর থেকে বের হওয়ার পর পরই দুই যুবক তাকে পিছন দিক থেকে ছুরিকাঘাত করে। এতে তিনি জখম হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এর পর তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলে তিনি সুস্থ্য হন।

২০১৫ সনের ১৯ মার্চ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দ্বিতীয় তলায় জুডিশিয়াল মুন্সিখানায় জামিননামা দাখিল করতে যান আইনজীবী কবির। কিন্তু মুন্সীখানার কর্মচারী ঐ আইনজীবীর নিকট ঘুষ দাবী করলে এর প্রতিবাদ করেন সেখানে উপস্থিত অপর আইনজীবী জীবন। পরে ঐ কর্মচারী আইনজীবী কবির ও জীবনকে আটকে রাখে। বিষয়টি জীবন মোবাইলে তাঁর সহকর্মীদের জানালে অ্যাডঃ গোলাম রাব্বানি, অ্যাডঃ আনিস, অ্যাডঃ সুবীর নন্দি বাবু  আসেন জীবন ও কবিরকে উদ্ধার করতে। কিন্তু ডি সি অফিসের ৪০.৫০ জন কর্মচারী আইনজীবী সকলকে আটকে রেকে ম্যাজিস্ট্রেটের ইন্দনে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে।

২০১৫ সনের অক্টোবরে এজলাশ চলাকালে আদালতেই হামলার শিকার হন খাগড়াছড়ি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী আব্দুল মোমিন। অপর এক আইনজীবী এই হামলা চালান।

২০১৫ সনের নভেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন হবিগঞ্জের আইনজীবী এনামুল হক এনাম। রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এলোপাতারি কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাস্পাতালে চিকিৎসা দিলে তিনি বেঁচে পান।

২০১৫ সনের নভেম্বর মাসে খুন হন গাজীপুর বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী খন্দকার এনামুল হক বিপ্লব। মামলার আসামি বাব্বি ও তাঁর মা নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাব্বি গাজীপুর জেলা জজ আদালতের শেরেস্তাদার মাসুদুর রহমান ভুঁইয়ার ছেলে। গ্রেপ্তারের পর রাব্বি দাবী করে যে, তাঁর মা নাজমার সাথে শিক্ষা নবিশ বিপ্লবের অবৈধ সম্পর্ক ছিল, তাই তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে রাব্বি ও তাঁর ভাই রবিন ছুরিকাঘাত করে আইনজীবী বিপ্লবকে।

২০১৫ সনে রাজশাহীতে আদালতের বারান্দায় আইনজীবী মখলেছুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন একজন দলিল লেখক। পরে দলিল লেখককে পুলিশ আটক করে।

২০১৪ সনের ২৫ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা আদালতের আইনজীবীকে আটক করে নির্যাতন করে দামুরহুদার জনৈক প্রভাবশালি সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম।

২০১৪ সনের জুলাই মাসের ৭ তারিখ মোবাইল ফোনে  হুমকি দেওয়া হয় সিলেট বারের আইনজীবী মোঃ মখলিছুর রহমানকে। একটি মামলায় বাদি পক্ষে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করলে আসামী পক্ষ মামলা তুলে নেওয়া না হলে ঐ আইনজীবী ও তাঁর স্কুল পড়ুয়া সন্তানকে অপহরণ করার হুমকি দেয়।

২০১৪ সনের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে র‍্যাবের হাতে সাত খুনের একজন ছিলেন নারায়নগঞ্জ বারের আইনজীবী চন্দন সরকার। র‍্যাবের হাট থেকেও নিস্ক্রিতি পায়নি একজন আইনজীবী। এই ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে ছিল।

২০১৩ সনের জুলাইয়ে ফেণী আদালত ভবনে আইনজীবী হুমায়ুন কামাল এক মক্কেলের হাতে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হন। এই ঘটনায় নুরুজ্জামান নামে এই ব্যাক্তিকে আটক করে পুলিশ।

২০১৩ সনের সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখ চাঁদপুর শহরের তালতলায় বসবাসরত আইনজীবী রামকৃষ্ণ সাহা (৫২) মারা যান। সেখানকার স্থানীয় কর্ণফুলি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় তিনি মারা যান বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা। এ ঘটনায় ওই হাসপাতালের এক কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ।

২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলি ও ধারাল অস্ত্রের কোপে খুন হন আইনজীবী মোঃ শাহ আলম। ঐদিন রাত সাড়ে ১১ টায় জায়গা জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

২০১২ সনের জুনে একদিন দুপুরে বাবার সাথে মোটর সাইকেলে করে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যাওয়ার পথে কথা কাটাকাটি হয় তরুণীর। পুলিশ তরুণীকে আটক করে। বিষয়টি জানতে গেলে এক আইনজীবীকে আটকে রেখে প্রহার করে পুলিশ। পরে কোতয়ালি থানায় নিয়ে যায়। আইনজীবী সমিতির হস্তক্ষেপে আইনজীবী ছাড়া পান।

২০১২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাজারীবাগের ভাগলপুর লেনে নিজের ঘরে খুন হয় ঢাকা বারের আইনজীবী মিজানুর রহমান ও আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জের মেয়ে করবী (১২)। পিলখানা মুন্সী আব্দুর রউফ স্কুল ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী করবীকে প্রথমে শ্বাসরোধ এবং পরে গলাকেটে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের ধারণা। মেয়েটি খুন হওয়ার দিনই অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা অ্যাডঃ মিজানুর। এই হত্যা রহস্যের জট খুলতে পারেনি পুলিশ।

২০১১ সনের ২১ মে শনিবার সকালে আইনজীবী উইলিয়াম গমেজ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের নিকট পৌঁছালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তাঁকে মাইক্র গাড়িতে তুলে নেয়। পরে এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে অনেক নির্যাতন করে আবার রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।

২০১১ সনের একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বারের এক আইনজীবীকে লাঞ্ছিত করে পুলিশ। পড়ে সমিতির সভাপতি শেখ হেমায়েত হোসেন ও তাঁর কমিটির হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিরসন হয়। বরখাস্ত করা হয় দুই পুলিশকে।

২০১১ সনের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ  নিহত হন নারায়নগঞ্জ বারের প্রবীণ আইনজীবী মহিউদ্দিন আলতাফ। তাঁর মেয়ে জানান, ঐদিন সন্ধ্যায় একজন আয়কর আইনজীবীর বাসায় যাওয়ার কথা বলে তিনি নিজের বাসা থেকে বের হন। পড়ে নারায়নগঞ্জের রাস্তার পাশে একটি ঝোপের কাছে তাঁর মৃত দেয় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

২০০৯ সনের ১২ অক্টোবর বেলা ১১ টায় গুলি করে হত্যা করা হয় পিরজপুর বারের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন খান মাসুদকে। জানা যায় টাকা নিয়ে বিরধের জেরে প্রতিপক্ষরা তাঁকে খুন করে। বিচারে সাত জনের যাবজ্জীবন কারা দণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

২০০৯ সনের ডিসেম্বর মাসের ২৬ তারিখ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকায় শামসুল হক নামের একজন আইনজীবীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জানা যায়, ওই দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে কে বা কারা শামসুল হকের ঘরের জানালায় আঘাত করতে থাকে। শব্দে শামসুল হকসহ বাড়ির অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। কে শব্দ করল, তা দেখার জন্য বাড়ির লোকজন আশপাশে তল্লাশি চালায়। এরপর সবাই ঘরে ফিরে এলেও শামসুল হক ফেরেননি। তাঁকে খুঁজতে নেমে বাড়ির লোকজন ৫০ গজ দূরে রাস্তায় গিয়ে দেখেন ছুরিকাঘাতে আহত শামসুল হক অস্ত্র হাতে এক যুবককে জাপটে ধরে আছেন। বাড়ির লোকজন ওই যুবককে আটক করে এবং পুলিশে খবর দেয়। ওই যুবকের নাম চান মিয়া। খবর পেয়ে পুলিশ এলে চান মিয়াকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় শামসুল হককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্য রত চিকিৎসক সামসুল্ কে মৃত ঘোষণা করেন।

গাজীপুরে ২০০৮ সালে নিহত হন গাজীপুর বারের আইনজীবী ফিরোজ সোহেল ওরফে সোহেলুর রহমান। আসামীরা গ্রেপ্তার হয়। বিচার হয়। আদালত পাঁচ আসামীর ফাঁসীর আদেশ দেন।

২০০৭ সনের ১১ এপ্রিল রাত সোয়া আটটায় মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঝালকাঠি জেলার সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর হায়দার হোসেন নিহত হন। জেএমবি জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে হায়দারকে হত্যা করে। বিচারে পাঁচ জেএমবি জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।

২০০৭ সনের ১৭ জুলাই রাজধানী ঢাকার শাহবাগের প্রিন্স টাওয়ারে খুন হন ঢাকা বারের আইনজীবী সায়মা খানম। পরে আসামী ফায়জুল ধরা পড়ে। বিচারে ফায়জুলের মৃত্যু দণ্ড হয়।

২০০৫ সনের ২৯ নভেম্বের গাজীপুর আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এক জঙ্গি হামলায় খুন হন আইনজীবী আমজাদ হোসেন, গোলাম ফারুক, নুরুল হুদা ও আনোয়ারুল আজিম সহ মোট আট জন। এই ঘটনায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১০ জঙ্গির ফাঁসীর আদেশ দেন।

আইনজীবীরা বিভিন্ন হামলা মামলা অত্যাচার নির্যাতন গুম খুনের শিকার হলেও আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের রক্ষায় বা ভিকটিম আইনজীবীদের জন্য কিছুই করেন না। এমন কি আইনজীবীদের উপর এই সব হামলা অত্যাচারের কোন খতিয়ান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিকট নেই বা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল করে না। এখন আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন আইনজীবী সুরক্ষা আইন করার জন্য। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সিনিয়র নেতাদের এখন এগিয়ে আসা উচিত এই আইন বাস্তবায়ন করার জন্য।

গবেষণা ও সম্পাদনা- কাজী হেলাল উদ্দিন; অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।