বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান (অবঃ)

হাইকোর্ট ডিভিশনের সার্কিট বেঞ্চ : এইতো সময়

বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান:

কোভিড-১৯ এর বিপর্যস্ত সময়ে স্থবির হয়ে পড়া সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের কার্যক্রম চালুর জন্য নতুন অধ্যাদেশের অধীনে চালু হওয়া ভার্চুয়াল কোর্টকে স্বাগত জানাই। এই ব্যবস্থাই একদিন আমাদেরকে নিয়ে ই-ফাইলিং, ই-হিয়ারিং তথা পেপারলেস কোর্ট প্রসিডিং এর দ্বার প্রান্তে। ভার্চুয়াল কোর্ট প্রসিডিং এ বৃহত্তর আইনজীবী গোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে আমাদের এখোনো বহুদূর যেতে হবে। ততদিনে বিচারপ্রার্থী জনগনের দুর্ভোগই শুধু নয় একটি বৃহত্তর আইনজীবী সমাজ ছিটকে পড়বেন তাদের পেশার জগত থেকে। বাংলাদেশের প‌বিত্র সং‌বিধান মোতা‌বেক ন‌্যায়‌বিচার পাওয়ার অধিকার থে‌কে এই জনগোষ্ঠীকে যেমন ব‌ঞ্চিত করা যায় না, তেমনি একজন আইনজীবীকেও তার পেশা থেকে বঞ্চিত করা সকল ন্যায়-নীতির উর্ধে।

সা‌র্বিক বি‌বেচনায় সুপ্রীম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র আপদকালীন সময়ের জন্য সীমিত বিষ‌য়ে প্রতিকার প্রদানের লক্ষ্যে ভার্চ‌্যুয়াল কোর্ট প্রবর্তনের অধ্যাদেশ জারী ক‌রে‌ছেন মহামান্য রাস্ট্রপতি। কিন্তু এই আপদকালের স্থায়িত্ব কতদিন? আপদকাল দীর্ঘস্থায়ী হলে এই ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবস্থা কি চলতেই থাকবে? আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ এ এর কোন উত্তর নেই।

উল্লেখিত অধ্যাদেশে আদালত বলতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সব অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি বলতে অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির আদালতের বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় উপস্থিত থাকা বা অংশগ্রহণ বোঝানো হয়েছে। অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে- মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত কিংবা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদানকালে পক্ষগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা প্রদানের জন্য বিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় আসামিকে জেলখানায় রেখে, আইনজীবীকে বাসায় রেখে ও সাক্ষীকে অন্য জায়গায় রেখে ভিডিও কনফারেন্সিং ও অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করে বিচারকার্য করা সম্ভব হবে। এটাই হল এই অধ্যাদেশের মূল বিষয়।

ইতোমধ্যে  এটি যে সম্ভব সেটি ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করে মাননীয় বিচারপতি মহোদয়গন দেখিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে হাইকোর্ট ডিভিশনের তিনটি বেঞ্চ জামিন ও অতি জরুরী বিষয় সমুহ ভার্চুয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে শুনানী করছেন এবং সম্ভবতঃ মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় আরো কিছু বেঞ্চ এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।

আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ এ এই পদ্ধতি কত দিনের জন্য বলবৎ থাকবে সেটি বলা না হলেও দীর্ঘদিনের জন্য আপাততঃ এ ব্যবস্থা আদালতের একমাত্র পদ্ধতি হতে পারেনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষনা মতে করোনা পরিস্থিতি আগামী তিন বছর নাগাদ সারা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করতে পারে। আজকের এই গ্লোবাল ভিলেজ এর পৃথিবীর যে কোন স্থানের যেকোনো বিপর্যস্ততা মুহুর্তে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং আমাদেরকে এখনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে হবে কিভাবে আমরা বিচার ব্যবস্থাকে সর্বোত্তম পর্যায়ে সচল রাখতে পারি।

করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার আশংকার প্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনার কোন বিকল্প নেই সেটি এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রমানিত হয়েছে। বিজ্ঞ আইনজীবীদের কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পেশা নিরবিছিন্ন চলমান রাখতে ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতি অবদান রাখছে। অপরদিকে ভার্চুয়াল কোর্ট প্রসিডিং এর বিরুদ্ধবাদী বিজ্ঞ আইনজীবী মহোদয়গনের আপত্তির কারণ সমুহও অবজ্ঞাযোগ্য নয়। নুন্যতম ৮০% আইনজীবী, বিচারক, বিচারকার্যে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগন কম্পিউটার ও ল্যাপটপ তো দুরের কথা হাতের স্মার্ট ফোনটি শুধু ভয়েস কল ও ফেসবুক ব্যাতিত অন্য কোন বিষয়ে ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন নি। এই অবস্থায় হঠাৎ বিচারকার্যে প্রযুক্তির এই উচ্চাঙ্গ ব্যবহার বিষয়টিতে তারা অসুবিধা বোধ করবেন সেটা অবশ্যই যৌক্তিক। অপরদিকে প্রযুক্তিগত অপ্রতুলতার বিষয়টিত রয়েছেই। এই কারনে ৮০% বিজ্ঞ আইনজীবীর আপত্তির প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দিলে ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতি ইনক্লুসিভ বা জনপ্রিয় হবেনা এবং একসময় এটি হয়তো আন্দোলনের বিষয়বস্তুতে পরিনত হয়ে সমগ্র ব্যাপারটিকে আরো জটিলতর করে তুলবে।

তবে এই পদ্ধতি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ধুময়ামান আপত্তির কারনে যদি এই পদ্ধতি বাতিল করা হয় এবং কোন এক সময়ে নরমাল কোর্ট ব্যবস্থা চালু করে দেয়া হয়, তবে এর পরিনতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। তার কারনটি কি?

এর একমাত্র কারন হচ্ছে সাধারনভাবে আমাদের আদালত প্রাঙ্গণ জনারণ্য থাকা। আমাদের জনসাধারণের নিয়ম-নীতি অমান্য করার প্রবনতার হার কতটা বেশি সেটা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লক ডাউন কিছুটা শিথিল করার পরই দৃশ্যমান হয়েছে। একারনেই আদালতের নরমাল কার্যক্রম পরিচালনা শুরুর আগে আমাদেরকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জনাধিক্যতা কমিয়ে ফেলার বিষয়টি অবশ্যই বিষয়টি গভীর গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখতে হবে।

এই প্রেক্ষিতে আমার নিজস্ব কিছু প্রস্তাবনা এ স্থলে তুলে ধরতে চাই, সেটা মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় ও আইন মন্ত্রী মহোদয় বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

ক. আদালত প্রাঙ্গনের জনধিক্যতা অবশ্যই নিরসন করতে হবে:

আদালত প্রাঙ্গণ ও কোর্টরুমের জনাধিক্যতা করোনা বিস্তারের জন্য সহায়ক হওয়ায় প্রথমেই আদালত প্রাঙ্গণকে জনারন্য অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে। বিচারপ্রার্থী জনগনকে আদালত প্রাঙ্গনে,বার এসোসিয়েশন ভবন ও আদালত কক্ষে আসতে নিরুৎসাহিত করতে বিজ্ঞ আইনজীবীদের মুখ্য ভুমিকা গ্রহন করতে হবে। এমন কি আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে আদেশ প্রচার করতে হবে। আদালত প্রাঙ্গনে জনাধিক্য কমে গেলে অবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন হবে।

অতঃপর বিভিন্ন আদালতে নিম্ন প্রস্তাবিত মতে নিয়ন্ত্রিত সীমিত নরমাল কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।

হাইকোর্ট ডিভিশনে অনুসরনীয় নীতি-

১. বিজ্ঞ আইনজীবীগন তাদের মক্কেলকে শুধুমাত্র নিজ বাসভবনের চেম্বারে সুরক্ষিত পন্থায় সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্রিফ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করবেন। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতি ভবনে তার মক্কেলকে আসতে নিরুৎসাহিত করবেন। প্রয়োজনীয় আলাপাদি ফোনে, ক্ষুদে বার্তায় ও ই-মেইলে সেরে নেবেন।

২. সুপ্রীম কোর্ট অঙ্গনে ও কোর্ট রুমে বিচারপ্রার্থী জনগনের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

৩. সুপ্রীম কোর্ট ভবনে সীমিত ব্যাক্তিবর্গ প্রবেশ করবে। আগের মতোই সুপ্রীম কোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী সুপ্রীম কোর্ট ভবনের সবকটি প্রবেশ দ্বার রক্ষা করবে। টেম্পারেচার মিটার দিয়ে প্রবেশকারীকে চেক করতে হবে। করোনা দুষিত সন্দেহ হলে তাকে ভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা।

৪. হলফনামা প্রদান ও একই সাথে মামলা ফাইলিং এর জন্য একজন আইনজীবি সহকারী ও হলফকারী, হলফনামা সেকশনে যেতে পারবেন। প্রতি দফায় সম্পুর্ন সুরক্ষিত ৫/১০ জন ঐ সেকশনে গিয়ে কাজ সেরে চলে আসলে পরবর্তী ব্যাচকে যেতে দেয়া হবে। (এ কারনে হলফনামা সেকশনের স্থান পরিবর্তন করা যেতে পারে।)

৫. প্রতিটি আদালতের জন্য প্রদত্ত ই-মেইল এড্রেসে মেনশন স্লিপ পাঠাতে হবে। মেনশন স্লিপ মুভ করার প্রয়োজন পড়বেনা। মাননীয় বিচারপতি মহোদয় মেনশন স্লিপের গুরুত্ব বুঝে মামলাটি কজলিস্ট ভুক্ত করবেন।

৬. প্রতিটি কোর্টে মাননীয় বিচারপতি মহোদয় নিজ হাতে ১০/১৫ মামলা কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এর মধ্যে মোশন ও অন্যান্য শুনানীর মামলা থাকবে।

শুধুমাত্র এই ১০/১৫ টি মামলার দু’পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী মহোদয়গণ সংশ্লিষ্ট আদালত কক্ষে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।

৭. কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত মামলা মুলতবি প্রার্থনা করা যাবেনা।

৮. আদালত কক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।

৯. আদালতের বেঞ্চ ও অফিস কক্ষে মাক্সিং, সোশ্যাল ডিস্টেনসিং, স্যানিটেশন ইত্যাদি মান্য করে কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মচারীদের যাতায়াতের বাসেও একই পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

১০. ক্রমান্বয়ে ই-ফাইলিং, ক্যাশলেস কোর্ট ফি পরিশোধ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।

আপীলেট ডিভিশনে অনুসরনীয় নীতি-

১. হলফনামা ও ফাইলিং এর জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনের জন্য প্রস্তাবিত নীতি অনুসরন করতে হবে।

২. ১ ও ২ নং আদালতের দৈনিক কজলিস্টে ১৫/২০ টা করে মামলা অন্তর্ভুক্ত হবে। এসব মামলায় মুলতবি প্রার্থনা করা যাবেনা।

৩. কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত মামলার আইনজীবী মহোদয়গণ শুধু কোর্ট রুমে ঢুকতে পারবেন।

৪. চেম্বার আদালতেও একই নীতি অনুসরন করতে হবে।

৫. আদালত কক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।

ঢাকা জেলা মহানগরী দায়রা ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অনুসরনীয় নীতি-

১. বিজ্ঞ আইনজীবিগন ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে তার মক্কেলকে আসতে নিরুৎসাহিত করবেন। প্রয়োজনীয় আলাপাদি ফোনে, ক্ষুদে বার্তায় ও ই-মেইলে সেরে নেবেন।

২. আদালত প্রান্গনে বিচার প্রার্থী  জনগনের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। প্রত্যেক গেটে পুলিশের কঠোর প্রহরা থাকতে হবে।প্রবেশ বিষয়ে পুলিশের বানিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. প্রতিটি আদালত, তাদের দৈনিক কজলিস্টে মামলার পরিমান কমিয়ে ১০/১৫ টার অধিক রাখবেন না। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবী এসব মামলায় কোনরূপ মুলতুবি প্রার্থনা জানাবেন না।

৪. কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত মামলার সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবিরাই শুধু আদালত কক্ষে প্রবেশ করবেন।

৫. আসামীদের ভার্চুয়াল প্রডাকশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিজিক্যাল প্রডাকশন নিশিদ্ধ করতে হবে।

৬. মামলা, বেল পিটিশন ফাইলিং ইত্যাদির জন্য একেক বারে ৫/১০ জন আইনজীবী/আইনজীবী সহকারীকে কোর্টের অফিসে ঢুকতে দেয়া যেতে পারে। এ কারনে ফাইলিং সেকশন স্থানান্তর করা যেতে পারে।

৭. আদালত কক্ষে  উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।

অন্যান্য জেলা আদালতে অনুসরণীয় নীতি-

উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি প্রয়োজনানুসারে পরিমার্জিত করে অন্যান্য জেলা আদালতে অনুসরন করা যেতে পারে।

আদালত প্রাঙ্গণে বর্তমানের লোকারণ্য অবস্থা পরিহার করার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে জনগনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বিজ্ঞ আইনজীবীগণ তাদের মক্কেলকে আদালত প্রাঙ্গনে আসতে নিরুৎসাহিত করলে অর্ধেক কার্য সমাধা হয়ে যাবে। জনাধিক্যই আমাদের প্রধান সমস্যা। আদালত প্রাঙ্গনে এটি নিয়ন্ত্রন করা গেলে বাকিটা বিজ্ঞ আইনজীবীগণ সামলে নিতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। বিজ্ঞ আইনজীবী মহোদয়গণ ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার সকল বিধান মেনে চললে এবং আদালত ভবনের মুল প্রবেশ গেটে স্যানিটাইজারের সরবরাহ থাকলে এবং কোর্ট কর্মচারীরা দিনে ৩/৪ বার কোর্টের সকল স্থানে স্যাভলন স্প্রে করলে এই ভাইরাসটি আদালত প্রাঙ্গনে দমন করা সম্ভব হবে। সম্ভবত এই মরন ভাইরাসটি আমাদের নিত্য সঙ্গী হতে চলেছে এবং এ কারনেই আমাদেরকেও নতুনভাবে আমাদের আদালত প্রান্গনকে এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সাজিয়ে নিতে হবে।

খ. সার্কিট বেঞ্চ চালু করে সুপ্রীম কোর্ট ভবনের জনারন্য কমানো-

আমাদের সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের বিভাগীয় শহর গুলিতে হাইকোর্ট ডিভিশনের সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে। এই অনুচ্ছেদটি নিম্নরুপ:

THE SUPREME COURT

  1. Seat of Supreme Court:

The permanent seat of the Supreme Court shall be in the capital, but sessions of the High Court Division may be held at such other place or places as the Chief Justice may, with the approval of the President, from time to time appoint.

উল্লেখিত অনুচ্ছেদের বিধান অনুসরনে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা গেলে একদিকে যেমন বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট ভবনে জনাধিক্য কমানো যাবে, তেমনি ঢাকামুখী জনস্রোত ঠেকাতে এটি কিছুটা হলেও অবদান রাখবে। অপরদিকে মফস্বল পর্যায়ে হাইকোর্ট ডিভিশনে প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা সম্পন্ন একদল নতুন মেধাবী আইনজীবী মহোদয়গণ গড়ে উঠবেন, যাদের মধ্য থেকে পরবর্তিতে কেউ কেউ রাজধানীতেও সেবা দেয়ার সুযোগ পাবেন। সকল মেধাবী আইনজীবীরা শুধু ঢাকাতেই থাকবেন, সে প্রবনতাও এই সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কমে আসতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে জাতির এই পবিত্র দলিলের প্রতিটি অনুচ্ছেদই জাতির পিতার অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলেই আমরা জানি। ঢাকা ব্যতিত সমগ্র দেশের শহরগুলো তাদের নিজ মাটিতে হাইকোর্ট ডিভিশনের সেবা যেন পেতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই জাতির পিতা সংবিধানের মূল ১০০ ধারায় সার্কিট বেঞ্চের এই বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পয়তাল্লিশ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতির পিতার সে স্বপ্ন আমরা পুরন করতে পরিনি। আজকের এই আপদকাল আমাদেরকে হয়তো সে সুযোগ এনে দিয়েছে। আমরা কি সে সুযোগটি গ্রহণ করব?

আমার এই প্রস্তাবসমূহ কি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে?

লেখক- বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান (অবঃ)

justicerahmanretd@gmail.com; www.justicerahman.webs.com