অ্যাডভোকেট আনোয়ার শাফি ওসামা

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় আসামির সম্ভাব্য পরিণতি

আনোয়ার শাফি ওসামা:

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌনসঙ্গম থেকে উদ্ভূত একটি ধর্ষণ মামলায় আসামির সম্ভাব্য পরিণতি কি হতে পারে? আজকের আলোচনায় মামলার এজাহার, ভিকটিমের জবানবন্দি, মেডিক্যাল রিপোর্ট, বিচার্য বিষয় ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের আলোকে সম্ভাব্য আইনি সিদ্ধান্তে উপনীত হবার চেষ্টা করা হয়েছে।

মামলার এজাহার, ভিকটিমের জবানবন্দি এবং ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
ভিকটিম রিয়া (ছদ্মনাম) এবং আসামী ফয়েজ (ছদ্মনাম) দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। দীর্ঘ দুই বছর হল পরিচয়, অতঃপর প্রণয় এবং পড়াশোনা শেষে পরিণয়ে আবদ্ধ হবেন মর্মে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ। তাদের বিষয়ে উভয় পরিবারের অভিভাবকরাও অবগত ছিল। এরই মাঝে তারা দুইজন বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকার বাইরে যায় এবং সেখানে একটি হোটেলে উঠে একই কক্ষে। সেখানে প্রথমে ভিকটিম রিয়া বিয়েতে আবদ্ধ হওয়া ছাড়া যৌনসঙ্গমে ইচ্ছা প্রকাশ না করলেও পরবর্তীতে উভয়ের একটা বিশেষ অবস্থা যৌন সঙ্গমে লিপ্ত করে। পরের দিন আসামী ফয়েজ হোটেল থেকে বাইরে যাবার কথা বলে বের হয়ে হোটেলে পুনরায় ফিরে না আসলে ভিকটিম আসামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিয়ে অত্র মামলা দায়ের করে।

মেডিক্যাল রিপোর্ট
Breast: Developed with no sign of injury; Nipple: Flat with no sign of injury; Vulva:Developed with no sign of injury; Vagina: Developed with no sign of injury; Hymen: Ruptured; Vaginal Swab: Spermatozoa not found; Labia Majora: Developed with no sign of injury; Labia Minora: Developed with no sign of injury; Marks of violence on the other part of the body: No sign of injury on the other parts of the body.

বিচার্য বিষয়
আসামী ভিকটিমের সাথে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনসঙ্গম করে ধর্ষণের অপরাধ সংঘটন করেছে কিনা।

আইনে ধর্ষনের সংজ্ঞা: বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী, কোন পুরুষ অতঃপর উল্লেখিত ব্যতিক্রম ভিন্ন অপর সকল ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পাঁচটির যেকোন অবস্থায় কোন স্ত্রীলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করলে সে ধর্ষণ করেছে বলে পরিগণিত হবে।

প্রথমত: নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয়ত: নারীর সম্মতি ব্যতিরেকে।

তৃতীয়ত: নারীর সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে মৃত্যু বা জখমের ভয় প্রদর্শন করে নারীর সম্মতি আদায় করা হলে।

চতুর্থত: নারীর সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে, সে নারীর স্বামী নয়, এবং পুরুষটি ইহাও জানে যে, ওী নারী তাকে এমন অপর একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে, যে পুরুষটির সাথে সে আইন সম্মতভাবে বিবাহিত হয়েছে বা বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে।

পঞ্চমত: নারীর সম্মতিক্রমে অথবা সম্মতি ব্যতিরেকে, যতি স্ত্রীলোকটির বয়স চৌদ্দ বৎসরের কম হয়।

ব্যতিক্রম (Exception): কোন পুরুষের কর্তৃক নিজ স্ত্রীর সাথে যৌনসঙ্গম ধর্ষণ বলে পরিগণিত হবে না, যদি স্ত্রী তের বৎসরে নিম্ন বয়স্কা না হয়।

এছাড়া, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী ২০০৩) আইন, ২০০০ এর ধারা- ৯ এ ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে বলা হয়েছে কিন্তু ধর্ষণের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। তবে এ আইনের ধারা- ৯ এর উপধারা-(১) এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, “যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো স্ত্রীলোকের সহিত তাঁহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাঁহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো স্ত্রীলোকের সহিত তাঁহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌনসঙ্গম করে, তাহা হইলে তিনি উক্ত স্ত্রীলোককে ধর্ষণ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।”

যুক্তিতর্ক

এক.
আলোচ্য ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, Victim’s Hymen is ruptured. এক্ষেত্রে আদালত যৌনসঙ্গম হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে পারেন। কেননা Hymen becomes ruptured when sexual intercourse is committed though there are some exceptions.

দুই.
এখন দেখার বিষয় হলো যৌনসংঙ্গম কি ভিকটিমের সম্মতি ব্যাতিরেকে নাকি সম্মতিসহ। এ বিষয়ে আলকপাত করা যাক- নারীর জীবনে সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ হলো তাঁর সতীত্ব। তাই এ মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করা প্রতিটি নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। কাজেই কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর সম্মতি ব্যতিরেকে তাঁর সতীত্ব হরণ করতে আসে তখন পুরুষ লোকটি যেমন যৌনসঙ্গমের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তেমনি স্ত্রীলোকটিও তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সতীত্বকে রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা (resist) করবেন অর্থাৎ ভিকটিম এবং আসামীর মধ্যে ধস্তাধস্তি (struggle) হবেই। আর এ অবস্থায় স্ত্রীলোকটির শরীরের কোনো না কোনো অংশে আঘাত বা জখম বা ক্ষতের চিহ্ন থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। আর এ ক্ষত চিহ্নগুলো মেডিকেল রিপোর্ট দ্বারা সমর্থিত হলেই তা হবে ধর্ষণের অপরাধ প্রমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, “Victim’s vagina, breast, nipple, vulva, labia majora, labia minora and the other parts of the body have no sign of injury.” অর্থাৎ কোনো ক্ষত চিহ্ন নাই। এক্ষেত্রে আদালত ধরে নিতে পারেন যে, যৌনসঙ্গমটি ভিক্টিমের সম্মতি ব্যতিরেকে নয় বরং সম্মতি সহকারেই হয়েছিল। আর যদি সম্মতি ব্যতিরেকে হতো তাহলে অবশ্যই ধস্তাধস্তি হতো যার ফলে ভীকটিমের শরীরে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যেতো। কেননা, According to Modi’s Medical Jurisprudence and [59 DLR (2007), 301], “ the body specially the face, breasts, chest, lower part of abdomen, limbs and back should have marks of violence as a result of struggle (ধস্তাধস্তি). If such marks are not found on the body of a grown up women who is able to resist (বাধা প্রদান করা) in that case it may be presumed that no struggle was taken place.”

তিন.
এছাড়া আসামি এটাও দেখাতে পারে যে, মেডিকেল রিপোর্টে যেহেতু Vaginal Swab অংশে “Spermatozoa (শুক্রাণু) not found” উল্লেখ আছে সেহেতু কোনো যৌনসঙ্গম সংঘটিত হয়নি। এক্ষেত্রে পালটা যুক্তি হিসেবে ভিকটিম [18 DLR (1966), page no. 67] মামলার রেফারেন্স দিতে পারেন যেখানে উচ্চ আদালত বলেছেন, “যৌনাঙ্গে পুরুষ বীর্য পাওয়া না গেলে এটা প্রমাণ করে না যে, যৌনসঙ্গম হয়নাই। কারণ তাঁরা তা ধৌত বা মুছে ফেলতে পারে। আবার যৌনাঙ্গে পুরুষবীর্য পাওয়া গেলে যৌনসঙ্গম যে হয়েছে তার চূড়ান্ত প্রমাণ হতে পারে কিন্তু ধর্ষণ নয়”।

চার.
আলোচ্য ঘটনায় মামলার এজাহার ভীকটিমের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, “আসামী ফয়েজ ভিকটিম রিয়াকে বিয়ে করবে বলে মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং উক্ত প্রতিশ্রুতির কারণেই ভিকটিম আসামীর সাথে ঢাকার বাইরে বেড়াতে যায় এবং একটি হোটেলে উঠে। সেখানে প্রথমে ভিকটিম বিয়েতে আবদ্ধ হওয়া ছাড়া যৌনসঙ্গমের ইচ্ছা প্রকাশ না করলেও পরবর্তীতে তাদের একটা বিশেষ অবস্থা যৌনসঙ্গমে লিপ্ত করে। পরের দিন আসামী জাস্টিন হোটেল থেকে বাইরে যাবার কথা বলে বের হয়ে হোটেলে পুনরায় ফিরে না আসলে ভিকটিম আসামীর বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ দায়ের করে”।

এক্ষেত্রে ভিকটিম এই যুক্তি দেখাতে পারে যে, যেহেতু আসামী বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্মতি আদায় করে পরবর্তিতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে সেহেতু আসামি প্রতারণা করেছে যার ফলে উক্ত যৌনসঙ্গম ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।

এই যুক্তির আইনত সমর্থন যোগ্যতা যাচাই করতে গেলে দেখা যায়- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী ২০০৩) আইন, ২০০০ এর ধারা- ৯(১) এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, “যদি কোনো পুরুষ ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো স্ত্রীলোকের সহিত প্রতারণামূলকভাবে তাঁহার সম্মতি আদায় করিয়া যৌনসঙ্গম করে তাহা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে”। কিন্তু এখানে “প্রতারণা” শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, আবার বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তীতে বিবাহ না করলে সেটা যে প্রতারণা হবে বা সেক্ষেত্রে যৌনসঙ্গম ধর্ষণ বলে গণ্য হবে এ সম্পর্কেও অত্র আইন সম্পূর্ণ নিরব।

এখন প্রশ্ন হলো মৌখিকভাবে বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তীতে বিবাহ না করলে সেটা আদৌ প্রতারণার পর্যায়ে পড়বে কিনা? Jayanti Rani Panda VS State of West Bengal 1984, Cri.L.J. 1535 মামলায় উচ্চ আদালত বলেছেন যে, “If a full grown girl consents to the act of sexual intercourse on a promise of marriage, it is an act of promiscuity (বিশৃংখল কার্যকলাপ) on her part.”

সুতরাং উপরোক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে বলা যায় যে, বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তীতে বিবাহ না করলে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিবাহের প্রতিশ্রুতির কারণে যৌনসঙ্গম করাটা আদৌ প্রতারণার পর্যায়ে পড়বেনা বরং এটা ভিকটিমের বাছবিচারহীন জীবনযাপন, বিশৃংখল কার্যকলাপ এবং অসচেতনতাকে নির্দেশ করে।

এছাড়া আইনের দৃষ্টিতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী তাঁর ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারে এমনকি স্বেচ্ছায় কোনো পুরুষের সাথে যৌনসঙ্গম করলেও তা অবৈধ যৌনসঙ্গম হবে যেহেতু বিবাহ বহির্ভূত, কিন্তু তা অপরাধ বলে গণ্য হবেনা। [10BLD (HCD) 119, 23DLR, 126]

পাঁচ.
বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর বিবাহ করা বা বিবাহ করেছে বলে বিশ্বাস জন্মানো এ দুটোর মধ্যে আকাশ আর পাতাল ফারাক বিদ্যমান। কেননা, বিবাহ পরবর্তী যৌনসঙ্গম হলো বৈধ। অন্যদিকে, বিবাহের প্রতিশ্রুতির কারণে যদি যৌনসঙ্গম করে তাহলে সেটা হবে অবৈধ যৌনসঙ্গম যেহেতু তা বিবাহ বহির্ভূত যদিও সেটা সম্মতি সহকারে করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

আর জেনে বুঝে অবৈধ যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়াটা কখনো প্রতারণার পর্যায়ে পড়বেনা। তবে আসামী যদি প্রতারণার মাধ্যমে ভিকটিমকে আসামীর আইনত বিবাহিত স্ত্রী বলে বিশ্বাস জন্মাইয়া সম্মতি আদায়ক্রমে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতো তখন সেটাকে “প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করিয়াছে” বলা যেত। কেননা এক্ষেত্রে ভিকটিম নিজেকে আসামীর আইনসম্মত বিবাহিত স্ত্রী বলে বিশ্বাস করে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আবেদ আলী বনাম রাষ্ট্র [34DLR (1982), 366] মামলায় উচ্চ আদালত বলেছেন যে, “আসামী কর্তৃক কোনো স্ত্রী লোককে শুধুমাত্র বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিলে তদ্দ্বারা কোনো স্ত্রী লোকের মনে এ ধারণা জন্মাতে পারেনা যে সে আসামীর আইনত বিবাহিত স্ত্রী”।

আইনানুগ সিদ্ধান্ত
আলোচ্য ঘটনায় ভিকটিম রিয়া সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থাৎ শিক্ষিত, মেধাবী একজন ছাত্রী এবং একজন সাবালিকা স্ত্রীলোক বটে। যেকোনো কাজেই সম্মতি দেয়ার আইনত অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু যেহেতু নারীর জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তাঁর সতীত্ব যা রক্ষার জন্য সচেতন হওয়া প্রত্যেক নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সেহেতু বিয়েতে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত আসামী ফয়েজের সহিত ভিকটিম রিয়ার ঢাকার বাইরে বেড়াতে যাওয়া এবং একই হোটেলে একই কক্ষে থাকা মোটেও ভিকটিমের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ নয় বরং তা ভিকটিম রিয়ার বিশৃংখল জীবনযাপন (promiscuity) এবং অবাধ মেলামেশাকে (free mixing) নির্দেশ করে। কাজেই হোটেলের একই কক্ষে ভিকটিম রিয়ার সহিত আসামী জাস্টিনের যে যৌনসঙ্গম হয়েছে তাতে ভিকটিম রিয়ার সম্মতি ছিল বলেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান।

সুতরাং মামলার এজাহার, ভিকটিমের জবানবন্দি, মেডিকেল রিপোর্ট এবং আইনানুগ পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, অত্র মামলার ভিকটিম রিয়া কর্তৃক আসামী ফয়েজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ধর্ষণের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন যার ফলসরূপ আসামী ফয়েজ অত্র মামলার দায় হতে বেকসুর খালাস পাওয়ার অধিকারী।

লেখক: আইনজীবী; জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।