চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি

সীমিত পরিসরে কোর্ট খুলতে প্রধান বিচারপতিকে চট্টগ্রাম বারের চিঠি

করোনা ভাইরাসের আপদকালীন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে পূর্বের ন্যায় আদালতের কার্যক্রম শুরু করার দাবী জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।

সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোক্তার আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম যিয়াউদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান করোনা ভাইরাসের আপদকালীন পরিস্থিতিতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ফলে দেশের সকল আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সাংবিধানিক শূন্যতা ও বিচারহীনতার সৃষ্টি হলে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর পদক্ষেপের কারণে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে শুধুমাত্র জামিন শুনানির জন্য গত ৯ মে থেকে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করা হয়।

তিন মাস যাবত আদালত সমূহে নিয়মিত দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলাসমূহ বন্ধ থাকায় এবং দেশের প্রশাসন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকার সুযোগে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি বেড়েছে। পাশাপাশি থানায় মামলা না নিলে আদালতে সিআর মামলা করার সুযোগ থেকে বিচারপ্রার্থী জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। এডিএম কোর্টের মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৫ ও ১৪৪ ধারার মামলাগুলো হচ্ছে না বিধায় ভূমিদস্যুরা নিরিহ জনগণের জায়গা দখল করে নিচ্ছে এবং এসি ল্যান্ডের নামজারি আদেশের বিরুদ্ধে এডিসি (রেভিনিউ)-এর কাছে আপীল করতে না পারার ফলে এসি ল্যান্ডের আদেশ নিয়ে ভূমিদস্যুরা জায়গা রেজিস্ট্রি করে চলেছে। এছাড়া যেসকল মামলার রায়, চূড়ান্ত শুনানি, জেরা পর্যায়ে রয়েছে তা যথযসময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় বিচারপ্রার্থী জনগণ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নিয়মিত উচ্চ ও নিম্ন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক নিরীহ মানুষ বিনা বিচারে জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। একইসঙ্গে তিন মাস কোর্ট বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় ৫০ হাজারের বেশি আইনজীবী পরিবার পরিজন নিয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আইনজীবীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষানবীশ আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী, টাইপিস্টসহ অন্যান্যরা এবং তাদের পরিবার পরিজন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পতিত হয়েছে।

ভার্চ্যুয়াল কোর্টের নানা সমস্যা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ভার্চ্যুয়াল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতি অনেক ধীর গতির। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, ধীরগতি, অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, যথাযথভাবে শুনানী করতে সমস্যা হওয়া ও জটিল সিস্টেমের কারণে অধিক সংখ্যক কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছেন না। এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র শুনানি ভার্চ্যুয়ালি হলেও অন্যান্য কার্যক্রম যেমন ওকালতনামা প্রদান, মামলার নথিপত্র দেখা, বেইল বন্ড নেওয়া ও জেল খানায় জমা দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে সশরীরে সম্পন্ন করতে হয়। এছাড়াও অনেক সময় অনলাইনে জামিনের আবেদন করার পর শুনানির জন্য তালিকায় না আসলে সেক্ষেত্রেও সরাসরি গিয়ে তদবির করতে হয়। অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মামলা পরিচালনায় অনভ্যস্ত।

এমতাবস্থায় করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে আদালতসমূহের নিয়মিত কার্যক্রম সীমিত পরিসরে অর্থাৎ ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে জামিন শুনানি, আত্মসমর্পণ এবং দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে নতুন মামলা ফাইলিং, নিষেধাজ্ঞা শুনানি পূর্বের ন্যায় চালু করার নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হয়। এক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ করে মামলা শুনানির শিডিউল করা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে এবং এজন্য জেলা আইনজীবী সমূহের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।