বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

নতুন স্বাভাবিকতায় আদালত ও বিচার ব্যবস্থা

কোভিড-১৯ বা করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশও করোনা মোকাবেলায় অসহায়ত্বের পরিচয় দিয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশেই কম বেশি জীবন হানি হয়েছে। এমন একটা কঠিন ও সঙ্কটজনক অবস্থা বর্তমান বিশ্বের কোন মানুষ তাদের জীবদ্দশায় দেখেননি। জীবন ও জীবিকা দুটোই থমকে গেছে।

একদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ভীতি অন্যদিকে আর্থিক সংকটে পড়ে অনাহারে মৃত্যু ভীতি এ উভয় সংকট অবস্থা মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। আইনজীবীরাও এই অবস্থার বাইরে নয়। বিগত চারটি মাস আদালত বন্ধ, চেম্বার বন্ধ, কাজকর্ম বন্ধ সুতরাং আয়-রোজগারও বন্ধ। এত কিছুর পরও আমরা সবাই নিরাপত্তার কারণে কিছু কিছু নিয়ম কানুন, বিধি বিধান, পদ্ধতি মেনে যার যার মত করে জীবন কাটাচ্ছি, যা আমাদের দীর্ঘদিনের স্বাভাবিক জীবন যাপনের মধ্যে একটি নতুনত্ব যোগ করেছে। এই পরিবর্তিত অবস্থাকে নতুন স্বাভাবিকতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ করোনা পরিস্থিতি মানুষের জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা পাল্টে দিয়ে এক নতুন স্বাভাবিকতায় দাঁড় করিয়েছে। জীবনাচার পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই নতুন স্বাভাবিকতায় মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে।

উন্নত বিশ্ব সহ অনেক দেশে নতুন স্বাভাবিকতায় প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে করণীয় নির্ধারণ করার কাজে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যেহেতু করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারছেন না তাই আমাদেরকেও নতুন স্বাভাবিকতার সাথে খাপ খাওয়াতে হবে এবং এ জন্য সর্ব প্রথম দরকার পেশা নির্বিশেষে প্রত্যেক পেশার নীতি নির্ধারকরা যার যার পেশার কর্ম সম্পাদনের জন্য কর্ম পদ্ধতি নির্ধারণ করা এবং সেভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং অন্য পেশার সাথে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, কিভাবে ডেলিভারী বা আউটপুট দেয়া যায় সেসব বিষয় নিয়ে গবেষণা, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় বের করা।

অন্যান্য সকল পেশা বা বৃত্তির মানুষের মধ্যে যেমন অস্থিরতা চলছে তেমনি আইন অঙ্গনেও চলছে এক অস্থির অবস্থা। যদিও ভার্চুয়্যাল কোর্ট চালুর মাধ্যমে বিচার বা আদালত কার্যক্রমের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র চলছে তাও আবার বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ আইনজীবীরা হতাশা, উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের মধ্যে আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে নতুন স্বাভাবিকতায় আদালত বা বিচার প্রক্রিয়া চালানো যায়, কতটুকু ভার্চুয়্যাল করা যায়, কতটুকু রেগুলার আদালতে করা যায়, স্বাস্থ্য বিধি কিভাবে মেনে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখা যায়, আদালতের সময় কি হওয়া উচিত, দৈনিক মামলা সংখ্যা কত রাখা যায়, কি কি বিষয় প্রাধিকার দেওয়া যায়, সর্বোপরি কিভাবে আইনের শাসন চালু রেখে সব পক্ষকে সুবিধা প্রদান করা যায় এবং নতুন স্বাভাবিকতায় জীবন ও জীবিকার মধ্যে সেতু বন্ধন রচনা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা, পরামর্শ ও সমাধান করা একান্তই জরূরী।

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি মনে করি মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি, আইন কমিশন, জেলা জজদের প্রতিনিধি, বার কাউন্সিল, সকল বার প্রতিনিধি, সিনিয়ার আইনজীবী, আইনমন্ত্রী সহ সকল পক্ষকে নিয়ে কার্যকর আলোচনা সভা করে এর উপায় নিরূপণ করা উচিৎ। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

ইব্রাহিম খান: আইনজীবী; জজ কোর্ট, ঢাকা।