মোঃ রায়হানুল ইসলাম: আইনজীবী; সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ।

অবৈধভাবে স্থাবর সম্পত্তি জবর দখল ফৌজদারী অপরাধ কেন নয়?

মোঃ রায়হানুল ইসলাম

মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে একটি ভূ-সম্পত্তির মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরনে একজন মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এক খন্ড ভূমি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ক্রয় পরবর্তী সময়ে ঐ সম্পত্তি নিয়ে যখন কোন বিপত্তি দেখা দেয়, তখন-ই দেখা দেয় মামলা করার প্রয়োজনীয়তা। ভূমি সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধনের বা প্রতিকারের আশায় মানুষকে যখন আদালতের দারস্ত হতে হয়, তখন সে জানে না তার ঐ ভূমির ত্রুটি সংশোধনে বা সমস্যা সমাধানে কতদিন সময় লাগতে পারে। অনেক সময় কয়েক যুগ পরও এই ধরণের মামলা নিষ্পত্তি হয় না। নিঃস্ব হয়ে বাদী একসময় মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশরাও এর সমাধান দেখে যেতে পারেন না। জমির সংক্রান্ত যে সকল ত্রুটি সংশোধনের বা প্রতিকারের জন্য একজন ভুক্তভোগীকে কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়, এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয় আছে কম জটিল, যা সহজেই সমাধানযোগ্য, আইনের দুর্বলতার কারনে সেগুলো কয়েক যুগ পরও সমাধান হয় না।

কিছু কিছু ত্রুটি বা প্রার্থীত প্রতিকার তেমন কোন জটিল বিষয় না হলেও সমাধান ভুক্তভোগীর কপালে সহজেই জুটে না। সমাধানের এই কাল বিলম্ব মামলার পক্ষগণের কারনে হতে পারে, আবার প্রচলিত কোর্ট ব্যবস্থার কারনেও হয়ে থাকে কিংবা অন্য কোন কারনে হতে পারে। মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের কারনে যদি মামলা বিলম্বে নিষ্পত্তি হয়, সেখানে অবশ্যই কোর্টের ভূমিকা থাকা উচিত। পক্ষগণের কারনে যদি মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়, সেটার জন্য প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা কম অংশে দায়ী নয়। এমনও অনেক বিষয় চলমান আছে বাদীর আরজি আর বিবাদীর জবাব বিশ্লেষনে একটি মামলার প্রকৃত ঘটনা বুঝে বিচারককে সমাধানে উপনীত হতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। সেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে কেন ১৫/২০ বছর সময় লাগবে? সেখানে কোন অনুসন্ধানের দরকার নাই, প্রয়োজন নাই রহস্য উদঘাটনের, কোন পক্ষ যদি আবেদন করেনও।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল – আইনে বিশেষ করে দেওয়ানী কার্যবিধিতে এমন এমন কিছু বিষয়কে প্রশ্রয় বা গুরুত্ব দেয়া হয়, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং আইনের শাষনের বিপরীত। এর মধ্যে অন্যতম হল বিরুদ্ধে দখল বা জবর দখল। বাংলাদেশর বিভিন্ন আদালতে জমি সংক্রান্ত যে সকল দেওয়ানী মামলা চলমান আছে, প্রায় সকল মামলাই জবর দখল বা বিরুদ্ধ দখলী সত্ব, বেদখল এই শব্দ গুলো জড়িত। যেখানে বাদীর মালিকানার পক্ষে শক্ত ভিত্তি রয়েছে, অন্যদিকে বিবাদীর মালিকানার কোন ভিত্তি নাই কিন্তু বিবাদীর দখল আছে বলে দাবী করেন, সেখানে দখলী সত্বের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পক্ষগণকে মারামারিতে এমনকি খুনাখুনিতে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। বাদী একটি সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হওয়া সত্ত্বেও একজন অগন্তুক ভূমি দস্যু কিংবা সন্ত্রাসীকে তাকে মোকাবেলা করতে হয়। বাদীর দূর্বলতা হল, তিনি সম্পত্তির মালিক হলেও তিনি সন্ত্রাসী নন, অসহায়, অস্থানীয়, অর্থবিত্তহীন কিংবা কবজির বল তার নাই। কোন ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ক্রয়কৃত তার বেদখলকৃত জমি উদ্ধারে তাকে অনিশ্চিত কঠিনতর যুদ্ধে অবতীর্ন হতে হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ মহামারী প্রার্দুভাবের সময়েও সিভিল কোর্ট বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, বসে নেই অবৈধ দখলদার ভূমি দস্যূরা। আইনের ফাঁকফোকরে বা জবর দখল গুরুতর বা স্বীকৃত কোন অপরাধ হিসেবে গণ্য না হওয়ার সুযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমি দস্যুরা অসহায় মানুষের শেষ সম্বলটুকু দখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। পরবর্তীতে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী কোর্টে মামলায় গেলে ভূমিদস্যুরা হয়তো বলবে তারা (ভূমি দস্যুরা) ১২ বছর ধরে দখলে বা কথিত জবর দখলে আছে!

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ধারা ৯ এ বলা আছে- ‘স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যূত ব্যক্তি কর্তৃক মামলার বিষয়ে বলা আছে- যথাযথ আইনগত পন্থা ব্যতিরেকে যদি কোন ব্যক্তি তার অসম্মতিতে স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যূত হয়, তবে সে অথবা তার মাধ্যমে দাবিদার কোন ব্যক্তি মামলার মাধ্যমে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে, যদিও তেমন মামলায় অপর কোন স্বত্ব খাড়া করা হতে পারে, তথাপিও।’ ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের সিডিউল ১৪২ এ বলা আছে দখল পুনরুদ্ধারের মামলা কতদিনের মধ্যে করতে হবে। Schedule 142 Limitation Act-198 .  For possession of immovable property when the plaintiff, while in possession of the property, has been dispossessed or has discontinued the possession.Period of limitation:Twelve years. অন্যদিকে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ১৪৫ উপধারা ৬ এ বলা আছে, আইনসঙ্গতভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দখলে থাকা পক্ষ দখল বহাল রাখিবে।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ধারা ৯ এ আইনগত পন্থা ব্যতিরেকে দখলের কর্মকান্ডটাই অবৈধ। এই ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড কোন মতেই বৈধতা পেতে পারে না। অবৈধভাবে মালিকানা দাবীদার ব্যক্তি, একজন বৈধ মালিকের সাথে লড়াই করার অধিকার আইনে দেওয়া হয়েছে। আইনগত পন্থা ব্যতিরেকে দখলটাই একটা অপরাধ। এটা অবশ্যই ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। আমরা জানি সিভিল মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম। অন্যদিকে ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ১৪৫ এ সম্পর্কিত বর্ননা থাকলেও জেল-জরিমানার তেমন কোন সুযোগ নাই। এই সম্পর্কিত অনেক সিদ্ধান্ত আছে, ঐ সকল সিদ্ধান্ত বিভিন্ন কোর্ট থেকেই এসেছে।

উচ্চ আদালতের তেমনি কয়েকটি সিদ্ধান্ত হল-

‘দখল সব সময় বৈধ সত্বকে অনুসরন করে। ইহা সর্বজনবিদিত যে, প্রকৃত মালিকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধ দখল হয় না। বৈরি দখল-এর মাধ্যমে উহা প্রয়োগ করাহয়। একভাবে দখল করিলেই আইন বিরুদ্ধ দখল সুষ্টি হয় না। (৩৮ ডিএলআর (এডি) ২২)। ‘Adverse possession is not adverse where original occupation is preferable to lawful title (20 BLD (HC) 407) . অন্যত্র বলা আছে- ‘আসল বা প্রকৃত মালিকের যদি বৈধ সত্বাধিকারের অস্তিত্ব থাকে, তবে দখল করিলেই বিরুদ্ধ দখল সৃষ্টি হয় না (২০ বিএলডি (হাইকোট) ৪০৭)।’

উচ্চ আদালতের এই সকল সিদ্ধান্তে এটা বুঝা যায়, জবর দখল স্বীকৃত কোন পন্থা হতে পারে না, সেটা ১২ কেন ১০০ বছর হলেও। উচ্চ আদালতের এই সকল সিদ্ধান্ত অবৈধ জবর দখলের বিষয়ে অগ্রহনযোগ্যতাকেই ইঙ্গিত করে।

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) এ বলা আছে, আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে সম্পত্তি অর্জন, ধারন, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতিত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাবে না।  ৪২(২) এ বলা আছে- এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবেক গ্রহণ, রাষ্ট্রায়াত্তকরণ, দখলের বিধান করা যাইবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২ এর আলোকেও বলা যায়, একমাত্র আইনের বলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে কেউ কারো সম্পত্তি দখলে বা মালিকানা অর্জন করতে পারে। অন্য কোন ভাবে দখলে বা মালিকানায় যাওয়া কোনভাবেই সংবিধান সম্মত নয়। অর্থ্যাৎ অবৈধ জবর দখল একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়, যেহেতু সংবিধানে বলা আছে আইনের কর্তৃত্ব ব্যতিত কোন সম্পত্তি কোন সম্পত্তি দখল/অর্জন করা যাবে না।

বৈধ দলিল ছাড়া শুধুমাত্র ১২ বছর বা ২০ বছর দখলে থাকলে রহিমের সম্পত্তির মালিক করিম হয়ে যাবে। এটা কোন আইন হতে পারে না। দখলের প্রশ্নে বাংলাদেশে প্রতিবছর জমি-জমার সংঘাতে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বৈধ সত্ব না থাকলে বেদখলকে কখনোই বৈধতা দেওয়া উচিত হবে না, এক মিনিটের জন্যও না। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে কোর্টের একটি নির্দেশেই অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করে দিতে হবে।

দুঃখজনক ব্যপার হল- ১৮৬০ সালে প্রনীত বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ‘দন্ডবিধি’র মোট ৫১১টি ধারার একটি ধারাতেও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবৈধ সম্পত্তি বেদখলকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কোন আলোচনা নাই। অথচ ওজনে কম দেওয়া কিংবা অশ্লীল পুস্তক বিক্রয় কিংবা অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন করার মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মকান্ডকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দন্ডবিধিতে উল্লেখ করে শাস্তির কথা বলা আছে, সেখানে একজন ব্যক্তির সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ক্রয়কৃত সম্পত্তি, শুধুমাত্র বাহুর বল না থাকার কারনে অন্য একজন ব্যক্তি যেনতেন ভাবে বেদখল করে রাতারাতি মালিক বনে যাবেন, আর এটা কোন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, এটা শুধু হাস্যকরই নয়, এটা অমানবিক, অযোক্তিক এবং অসভ্য ব্যাপার।

অবৈধভাবে কারো জমি দখলকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সুনির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা করে দন্ডবিধিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ভুক্তভোগীকে কেন পেশী শক্তি দেখিয়ে দখল করে নিতে হবে? একজন বৈধ মালিককে কেন অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে দখল পুনরাদ্ধারের মামলায় যেতে হবে? ব্রিটিশ আমলে আইনগুলো প্রণীত হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে। ব্রিটিশরা কখনোও এই অঞ্চলের মানুষকে স্বাধীনতা দিতে চাইত না, সম্পত্তি অর্জনের অধিকার তো অনেক পরের বিষয়। যে আইন প্রয়োগ করে প্রজাদের দমন করা যাবে, সেই আইন গুলো কেন এখনো এই দেশে বলবৎ থাকবে বা কেন সেই আইনগুলো পরিবর্তনযোগ্য নয়? মামলা নিষ্পত্তিতে কোর্ট তার স্ববিচেনামূলক ক্ষমতা ব্যবহার করার প্রবণতা আরো বাড়াতে হবে। তাছাড়া দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।

কেস স্টাডি

ফারুক সাহেব তার সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি সম্পত্তি ১৯৯৮ সালে ক্রয় করেন। ক্রয় পরবর্তী সময়ে অর্থ্যাৎ ২০০৫ সালে ক্রয়কৃত জমির খাজনা পরিশোধ করতে ভূমি অফিসে গেলে তিনি জানতে পারেন- জরিপ কর্মকর্তাদের গাফিলাতির কারনে তার ক্রয়কৃত সম্পত্তির বিএস দাগ ভুলক্রমে একটি সরকারী সংস্থার নামে রেকর্ড হয়ে আছে। ভূমি অফিস থেকে বলা হয়- ‘বিএস রেকর্ড এর ভুলজনিত ত্রুটি সংশোধন করতে হলে কোর্টে মামলা দায়ের করতে হবে। এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য ফারুক সাহেব ঐ সরকারী সংস্থার অফিসে দ্বারস্থ হলে সংস্থা থেকে বলা হয়, ‘সংস্থা যেহেতু আপনার ক্রয়কৃত জমির দাগটি একওয়ার করে নাই, সুতারং আপনি মামলা করেন আমরা কনটেষ্ট করবো না। আপনি একতরফা রায় পেয়ে যাবেন।’ এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে জনাব ফারুক, বাদী হয়ে বিএস সংশোধনী মামলা দায়ের করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই মামলা ২০০৫ সাল থেকে অদ্যবধি কোর্টে চলমান আছে। কারন ঐ সংস্থার ঐ সময়ের প্রশাসন বার বার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারনে অসাধু কর্মকর্তাদের কূট-কৌশল এবং দূর্নীতির কারনে ঐ মামলা নিষ্পত্তি হয় নাই। বাদীর অসহায়ত্বের সুযোগে, সংস্থাটির ভূ-সম্পত্তি দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা এষ্টেট কর্মকর্তা জাকের আহমেদ ভুক্তভোগীর পাশ্ববর্তী অন্য একটি দাগের জমি ক্রয় করার দাবী করে জাল দলিল সৃজন করে ভুক্তভোগীর নালিশী জমি দখল করার উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগীর মামলাটি নিষ্পত্তিতে বাধা প্রদান করেন। সংস্থাটির পক্ষে ভুক্তভোগীর মামলাটিতে জাকের সাহেবই প্রধান স্বাক্ষী, শুধু তাই নয় উল্লেখিত সংস্থাটির নাম ব্যবহার করে কিছু কর্মকর্তা লক্ষ লক্ষ টাকার মামলা পরিচালনার বিল বানিয়ে নিজেদের স্বার্থে ফারুক সাহেবের মামলাটি পরিচালনা করছেন। সংস্থার নামে মামলা চললেও সংস্থাটির ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা তার নিজের আত্মীয়স্বজন দ্বারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ফারুকের মামলা নিষ্পত্তিতে বাঁধা দিয়ে নিজেই বাদীর জায়গা বে-দখলে লিপ্ত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের নামে জাকের তার দখল প্রচেষ্ঠাকে হালাল করার জন্য কোর্টে গিয়ে জাকের এটা বলার চেষ্টা করছেন যে, ফারুক তার নিজের জমিতে দখলে নাই। বিভিন্ন অত্যাচার নির্যাতনে নিঃস্ব বাদী/ফারুক ২০০৮ সালে কোর্ট থেকে ফেরার পথে হার্ট এ্যার্টাকে অকালে মৃত্যবরণ করেন। সরকারী টাকা খরচ করে সংস্থার নামে মামলা পরিচালনার নামে ঐ সংস্থারই ঐ কর্মকর্তার দ্বারা বাদীর পরবর্তী ওয়ারিশরা অদ্যবধি ১৫টি বৎসরেও এই সাধারণ মামলায় কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। অথচ এখানে একটি মাত্র আইনগত প্রশ্নের উত্তরই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য যথেষ্ট। বাদীর নালিশী জমির দাগটি সরকার বা সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অর্থ্যাৎ ১৯৬৫ সালে বা তৎপরবর্তী সময়ে একোয়ার করেছে কিনা? যদি সরকার জনাব ফারুকের নালিশী জমিটি একোয়ার করে থাকে, তাহলে এই জমির মালিক সরকার বা সংস্থাটি। আর যদি সরকার একোয়ার করে না থাকে তাহলে নালিশী জমির মালিক অবশ্যই ফারুক সাহেব। এই একটি সিদ্ধান্ত নিতে কেন ১৫ বছর সময় লাগবে? ১৫ টি বৎসরে বাদীর পরিবারের উপর করা হয়েছে অমানুষিক অত্যাচার, দখলচ্যূতির জন্য করা হয়েছে নির্যাতন, ফারুকের পুরো পরিবারকে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে চারটি বৎসর, ঐ সংস্থা মিঃ আলিম নামক একজন ওয়ারিশকে সরকারী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তসহ এমনভাবে মানষিক অত্যাচার করা হয়েছে, যিনি বর্তমানে পাগল প্রায়।

উপরোক্ত কেস স্টাডি থেকে এটা অনুমেয় যে, তথাকথিত দখলের বিষয়টি সামনে এনে একজন ব্যক্তির স্বার্থে সরকারী অর্থ অপচয় করে চলমান মামলার কারনে একটি পরিবার ধ্বংসের প্রায় দ্বার প্রান্তে। কেউ কি পারবেন ঐ পরিবারের অভিভাবককে ফিরিয়ে দিতে?

এভাবে বাংলাদেশের হাজার লক্ষ পরিবার সামান্য একটি আইনত সমস্যার জন্য কোর্টের দারস্ত হয়েছেন, অথচ তাদের কাঙ্ক্ষিত সেই প্রতিকার অনেক দূরে। সঙ্গে আছে অত্যাচার নির্যাতন। সময় এসেছে বাংলাদেশের মানুষকে প্রকৃত আইনগত সুরক্ষা প্রদান করার। ব্রিটিশদের প্রণয়ন করা আইন পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী। মামলার দীর্ঘসূত্রীতা দূরীকরণে বাংলাদেশ আইন কমিশনের কিছু সুপারিশের মধ্যে একটি হল- দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তিতে অনেকগুলো স্তর পার হওয়া। এই জন্য অনেক সময় লেগে যায়। এই স্তরগুলো সংক্ষিপ্ত এবং সহজ সরল হওয়া বাঞ্চনীয়। এই জন্য আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলার দীর্ঘসূত্রীতা দূরীকরণে বাঁধা হিসেবে কমিশন সুপারিশে উল্লেখ করেন।

মোঃ রায়হানুল ইসলাম: আইনজীবী; সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ।