মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সোশাল ভিডিও অ্যাপ টিকটক

মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করল টিকটক

অবশেষে মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি মামলা দায়ের করেছে টিকটক কর্তৃপক্ষ। খবর নিউইয়র্ক টাইমস।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটক বন্ধের যে নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন তার মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, টিকটকের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও, মার্কিন আইন প্রণেতারাও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন – টিকটকের চীনা মালিক বাইটড্যান্সের কাছে মার্কিন ব্যবহারকারীদের ডেটা চেয়ে বসতে পারে চীন সরকার। কিন্তু, এ ব্যাপারে এখনও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তারা কেউই। পুরো ব্যাপারটিকেই নিরাপত্তা শঙ্কা হিসেবে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, টিকটকের ব্যাপারে দুইটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। প্রথমটিতে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক, উইচ্যাটসহ অন্যান্য আরও বেশ কিছু চীনা অ্যাপকে ব্যবসা গুটানোর জন্য ৪৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশে টিকটকের মার্কিন ব্যবসা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেওয়া জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে, টিকটক তাদের মামলায় প্রথম নির্বাহী আদেশের বিরোধীতা করলেও দ্বিতীয় আদেশের ব্যাপারে কিছু জানায়নি।

এ ব্যাপারে টিকটকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে মামলা লড়া হালকা কোনো বিষয় নয়। টিকটকের ব্যবসায়িক অধিকার, পাঁচ শতাধিক কর্মীদের মৌলিক অধিকার এবং ব্যবহারকারীদের অধিকার সুরক্ষায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো পথও খোলা ছিল না।

টিকটক আরও বলছে, তাদের প্রধান নির্বাহী, প্রধান আইনী পরামর্শক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ সব শীর্ষ কর্মকর্তাই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। তারা কেউ চীনা আইনের অধীনে নেই। এমনকি টিকটকের কনটেন্ট মডারেশনের কাজে কর্মরত দলটিও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। তারা সবাই স্বাধীনভাবে চীনের বাইরে থেকে নিজ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এবং তাদের ওপর চীনের কর্তৃত্ব নেই।

অন্যদিকে, মার্কিন বিচার বিভাগ টিকটকের মামলা প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যালসটন অ্যান্ড বার্ড -এর অংশীদার জেসন এম. ওয়েটে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আদালত সম্ভবত প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী হবে না। বিশেষ করে, যেখানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কারণ হিসেবে এসেছে। কিন্তু, আদালত যদি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েই ফেলে তাহলে এটি আসলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে নতুন করে নির্ধারণ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের তিক্ততা বেড়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারি, ভৌগলিক রাজনীতি, প্রযুক্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে চীনের সঙ্গে বিতণ্ডতা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের। সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তাই চীনের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন এমনটা প্রমাণ করে ভোট টানতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

উল্লেখ্য, টিকটকের মার্কিন ব্যবসা কিনতে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনায় বসেছে মাইক্রোসফট। সোশাল ভিডিও অ্যাপটির ব্যবসা কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওরাকল। এছাড়াও, টুইটারেরও টিকটকের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়ার খবরও গণমাধ্যমে এসেছিল।