মোঃ জিশান মাহমুদ: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

বার কাউন্সিলের প্রতি খোলা চিঠি…

বরাবর, চেয়ারম্যান/ভাইস-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।

বিষয়- আপিল বিভাগের মতামত অনুযায়ী প্রতি বছর এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, লিখিত পরীক্ষার খাতায় OMR শিট সংযুক্তিকরণ ও রিভিউ পদ্ধতি চালু করে স্বচ্ছ এনরোলমেন্ট পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চ মান সম্পন্ন আইনজীবী নিয়মিত ভাবে অন্তর্ভূক্তির আবেদন।

জনাব,

শুভেচ্ছা নিবেন। সংবিধানের আধিপত্য রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে এবং আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ তথা আইন পেশার মান মর্যাদা এবং অখণ্ডতা বজায় রাখার শপথ নিয়ে আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের একজন আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হই।

আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে পর্যবেক্ষণ করছি যে, আইনের ছাত্র-ছাত্রী যারা আইন পাশ করে “পিউপিল” বা “শিক্ষানবিশ” হিসেবে বিভিন্ন বিজ্ঞ সিনিয়রের সাথে আছেন, তারা দীর্ঘ প্রায় এক বছর যাবৎ পরীক্ষার দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রেরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল। তারা ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে আপিল বিভাগের রায় কার্যকর করার জন্য আমরণ অনশন ও করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গত ২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ খ্রিঃ তারিখে তাদের এমসিকিউ পরীক্ষা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশরা সরাসরি গেজেটের মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির দাবিতে গত ৬ই জুন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে গত ৭ই জুলাই, ২০২০ থেকে কয়েকদিন আমরণ অনশন ও করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ নির্ধারন করেন, পরীক্ষার হল প্রাপ্তি সাপেক্ষে। পরীক্ষার তারিখ পেয়ে বেশিরভাগ শিক্ষানবিশরা এখন পড়াশুনায় মনোযোগী হয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষানবিশরাও পরীক্ষার পক্ষে। তাই এখন তারা সরাসরি গেজেট করে আইনজীবী হওয়ার দাবি থেকে সরে এসেছেন। বর্তমানে তাদের দাবি সমুহের মধ্যে ”আপিল বিভাগের মতামত অনুযায়ী প্রতি বছর এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, লিখিত পরীক্ষার খাতায় OMR শিট সংযুক্তিকরণ ও পরীক্ষার খাতা রিভিউ করার সুযোগ” অন্যতম।

আমি মনে করি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষা যদি নিয়মিত ভাবে অনুষ্ঠিত হত তাহলে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্তির জন্য তাদের আন্দোলন করবার প্রয়োজন হত না। পাশাপাশি এনরোলমেন্ট পরীক্ষার খাতা চুরি হওয়ার মত অভিযোগ আসা বা পরীক্ষার খাতা রিভিউ চাইতে না পারা দুঃখজনক।

অনেক শিক্ষানবিশ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি বিষোদগারও করেছে। চলমান আন্দোলন কিছু অপ্রিতিকর ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিক অবস্থায় শিক্ষানবিশদের আন্দোলনে সংঘঠিত ঘটনাসমুহ পাশাপাশি এনরোলমেন্ট পরীক্ষার খাতা চুরি হওয়ার মত অভিযোগ আসা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সৃষ্ট ঘটনাসমুহের আলোকে আইন পেশার মর্যাদা এবং অখন্ডতা “Dignity and Integrity” হুমকির মুখে। সর্বোপরি খাতা চুরির অভিযোগ খুবই গুরুতর অভিযোগ। এটা শুধু বার কাউন্সিলের জন্য লজ্জাকর নয়, এটা বাংলাদেশের সকল আইনজীবীর জন্য লজ্জাজনক।

শিক্ষানবিশরা কেন খাতা চুরির অভিযোগ করছে তা জানতে চাইলে কয়েকজন ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এনরোলমেন্ট পরীক্ষার ফলাফল দেখার অনুরোধ করেন। বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এনরোলমেন্ট পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ২১৭৬৫ রোল থেকে ২১৮৮৮ রোল পর্যন্ত একই সিরিয়ালে ১১৮ জন প্রিলিমিনারি ও লিখিত উত্তীর্ণ হয়েছে। একটি পাবলিক পরীক্ষার দুইটি ধাপেই একই সঙ্গে ১১৮ জন উত্তীর্ণ হলে স্বাভাবিকভাবেই যে কারো মনে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। একজন আইনজীবী হিসেবে আমার মনেও এই বিষয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে কেন তারা পরীক্ষার খাতা রিভিউ করতে চায় জানার চেষ্টা করে শুনলাম, ২০১৭ সালের এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী ফেইল করে রিভিউ চেয়েছেন। কিন্তু বার কাউন্সিল তাদের সে সুযোগ দেয় নাই।

আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, আইনের শাসন সভ্য সমাজের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য এবং আদর্শ বিচার উপলব্ধি করবার জন্য একটি পূর্ব শর্ত। একজন দক্ষ আইনজীবীই সমাজের সকল নাগরিককে আইনের সমান সুরক্ষা দেয় এবং এর ফলে নাগরিকগণ তাদের জীবন, সম্পত্তি এবং সম্মান উপভোগ করে।

আজকে যারা শিক্ষানবিশ তাদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ আগামীতে বড় আইনজীবী হবে। আমি বিশ্বাস করি, হয়তো কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নিয়মিত পরীক্ষা নিতে পারেনি। এখন করোনা ভাইরাসের সময়েও আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করাও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

এমতাবস্থায়, আইন পেশার মান মর্যাদা বজায় রাখার নিমিত্তে উচ্চ মান সম্পন্ন আইনজীবীকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভূক্ত করার অবশ্যই আবশ্যকতা আছে। উচ্চ মান সম্পন্ন আইনজীবী তালিকাভূক্তির নিমিত্তে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি আমার আহবান ”আপিল বিভাগের মতামত অনুযায়ী প্রতি বছর এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিমিত্তে একটা যুগোপযোগী ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করা এবং প্রতিবছর নিয়মিতভাবে পরীক্ষার নেয়ার ব্যবস্থা করা, লিখিত পরীক্ষার খাতায় OMR শিট সংযুক্ত করে খাতা চুরির মত ন্যাক্কারজনক অভিযোগ থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠান কে রক্ষা করা ও রিভিউ পদ্ধতি চালু করে দিলে একজন ছাত্র-ছাত্রী তার ফেইল করার কারণ ও জানতে পারবে- এভাবে স্বচ্ছ এনরোলমেন্ট পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চ মান সম্পন্ন আইনজীবী নিয়মিত ভাবে অন্তর্ভূক্তির করার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি আমার উদাত্ত আহবান রইলো। অন্যথায় শিক্ষানবিশ, আইনের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও তাদের অভিভাবদের কাছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তার স্বীয় মর্যাদা হারাবে। যা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের একজন তালিকাভূক্ত আইনজীবী হিসেবে আমাকে আহত করে যাচ্ছে।

ধন্যবাদান্তে,

আপনার বিশ্বস্ত,

মোঃ জিশান মাহমুদ, তালিকাভূক্ত আইনজীবী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।