আটকের পর এসএম সারোয়ার আলমকে বুকে ‘আমি টাউট’ লেখা কাগজ লাগিয়ে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনজীবী সমিতির সভাপতির কার্যালয়ে রাখা হয়

আদালতে মামলার শুনানি করতে এসে ধরা খেলেন ‘শিক্ষানবীশ আইনজীবী’

আইনজীবী পরিচয়ে ময়মনসিংহের আদালতে মামলার শুনানি করতে এসে ধরা পড়লেন গাজীপুরের এক ‘শিক্ষানবীশ আইনজীবী’। গতকাল সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, সনদপ্রাপ্ত আইনজীবী না হয়েও বিচারকের সামনে মামলার শুনানি করতে যান এসএম সারোয়ার আলম (৩৮)। তার শুনানির ধরন দেখে সন্দেহ তৈরি হয় উপস্থিত আইনজীবীদের। ওই সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সত্য স্বীকার করেন সারোয়ার আলম। এজলাস থেকে পালানোর সময় অন্য আইনজীবীরা তাকে সেখান থেকে ধরে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কার্যালয় নিয়ে যান। সেখানে বুকে ‘আমি টাউট’ লেখা কাগজ লাগিয়ে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আয়শা হকের আদালতে সোমবার দেওয়ান বাগী পীরের দরবার শরীফ নিয়ে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য্য ছিলো। শুনানির জন্য দেওয়ানবাগী পীরের দরবার শরীফের পক্ষে অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামানসহ অন্তত ৪০ জন আইনজীবী অংশ নেন। বাদি পক্ষের হয়ে গাজীপুর আদালতের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে এসএম সারোয়ার আলম শুনানিতে অংশ নেন।

সারোয়ার আলম গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। তার সাথে ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির কিছু সদস্যও অংশ নেন। শুনানির এক পর্যায়ে প্রবীন আইনজীবীদের সন্দেহ হয় সারোয়ার আলমের শুনানির ধরনে। ওই সময় তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে সত্য স্বীকার করে এজলাস থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় তাকে উপস্থিত আইনজীবীরা আটকে ফেলেন।

অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান জানান, জেলার ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে দেওয়ানবাগী পীরের দরবার শরীফের দেখভাল করতেন তার বড় মেয়ে সৈয়দা তাহমিনা হক ও স্বামী সাইদুর রহমান। কিন্তু নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে দরবারের অর্থ সরিয়ে সম্পত্তি, বাড়ি ও সিএনজি ফিলিং স্টেশন করায় সম্প্রতি সৈয়দা তাহমিনা হক ও সাইদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বহিস্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা ও স্থিতাবস্থা ১৪৪ ধারা জারির জন্য দুটি মামলা করা হয় আদালতে। মামলার বাদি হন মো. মোতালিব মিয়া। মোতালিব ত্রিশালের কাশিগঞ্জ এলাকাকে নিজের ঠিকানা হিসেবে দিলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা।

তিনি আরো জানান, দেওয়ানবাগী পীরের দেশজুড়ে ১১টি দরবারে নিয়োগের মাধ্যমে কর্মীরা কাজ করে। মোতালিব নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী না হয়েও মামলার বাদি হয়েছেন। নিয়োগের প্রকৃত কোনো কাগজও দেখাতে পারেননি মোতালিব। তবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ না হলেও সৈয়দা তাহমিনা হক কর্তৃক একটি নিয়োগপত্র দেখিয়ে তাদের (তাহমিনা হকদের) পক্ষে মামলার বাদি হন মোতালিব। গত মার্চের দিকে করা ওই মামলায় দরবারের ওপর ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিলো সোমবার। শুনানিতে এসএম সারোয়ার আলমসহ গাজীপুর আদালত থেকে এসেছে পরিচয় দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন আইনজীবী নিয়ে শুনানিতে অংশ নেয়। শুনানির এক পর্যায়ে সন্দেহ হলে চ্যালেঞ্জের মুখে পালানোর চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি।

অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান বলেন, উদ্ধুত পরিস্থিতে আইনজীবীরা ওই যুবককে ধরে ফেলে। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে বিচারক কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে চলে যান। পরে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে নিয়ে বুকে কাগজে ‘আমি টাউট’ লিখে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

‘ভূয়া’ আইনজীবী আটকের খবরে দিনভর আদালত পাড়া সরগম ছিলো। দিনভর কথিত আইনজীবী আটক থাকার পর সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষানবীশ আইনজীবীর একটি কার্ড দেখানো হয়। শিক্ষানবীশ আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও সারোয়ার আলম তা করে বসেন।

সারোয়ার আলম ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদের রেফারেন্সে অংশ নেন শুনানিতে। আটক হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদের রেফারেন্সে সারোয়ার আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘একটি মামলার তদবির করতে এসেছিল সে। কিন্তু ভুল করে ফেলেছে।’

ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল হক বলেন, ওই ব্যক্তি শিক্ষানবীশ একটি কার্ড তাদের দেখিয়েছেন। তারা সেটি যাচাইও করেছেন। শিক্ষানবীশ হলে শুনানিতে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওই অবস্থায় আটকের পর সাবেক সাধারণ সম্পাদকের রেফারেন্সে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সূত্র- সমকাল