পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন

অক্টোবরের মধ্যেই পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালা চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেপ্টেম্বর মাসের সমন্বয় সভায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে সভায় পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালা প্রণয়নের আলোচনার সময় জানানো হয়, এ বিষয়ে একটি খসড়া বিধিমালা করা হয়েছে। খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করতে হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অক্টোবর মাসের মধ্যে বিধিমালা চূড়ান্ত করতে হবে। অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও আইন), সংস্থা প্রধানরা ও উপসচিব (আইন ও সংস্থা) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ অধীনে ২০১৭ সালে পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালা করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরে ওই খসড়াটিতে সংশোধন আনা হয়।

এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইন ও সংস্থা অধিশাখা) মো. গিয়াস উদ্দিন মোগল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী ২০ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, সেই সভায় বিধিমালার খসড়াটি চূড়ান্ত করতে পারব।’

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার যথোপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান নিজে উপস্থিত থাকতে না পারলে তার স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে মা-বাবার উপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।

কোনো মা-বাবার একমাত্র ছেলে সস্ত্রীক চাকরি নিয়ে দূরে বা প্রবাসে থাকলে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধির’ মাধ্যমে তাদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধি’ বলতে সন্তানের কোনো নিকটাত্মীয় চাচা, চাচি, ফুপা, ফুপু, মামা, মামি, খালা, খালু, ভাই, ভাবি, ভগ্নি, ভগ্নিপতি, শ্যালক, শ্যালিকা বা এ ধরনের রক্ত-সম্পর্কীয় কেউ, বিশ্বস্ত কর্মী বা প্রতিবেশীকে বোঝানো হয়েছে।

প্রত্যেক সন্তান মা-বাবাকে সঙ্গে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। একাধিক সন্তান থাকলে মা-বাবা কোন সন্তানের সঙ্গে বসবাস করবেন, তা তাদের ইচ্ছানুযায়ী হবে।

সন্তান বা তার স্ত্রী-সন্তান মা-বাবার সেবা ঠিকমতো করছে কি-না তা যাচাই করতে সারা দেশের ওয়ার্ড পর্যায়ে সহায়ক কমিটি থাকবে। এছাড়া ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় পর্যায়ে এজন্য কমিটি থাকবে বলে খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়, কোনো সন্তান বা তার স্ত্রী মা-বাবার উপযুক্ত ভরণপোষণ ও সেবা নিশ্চিত না করলে সে বিষয়ে সহায়ক কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন মা-বাবা। অভিযোগ পাওয়ার পর কমিটি সরেজমিনে গিয়ে মা-বাবা ও সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করবে। আলোচনার ভিত্তিতে তা সুরাহা না হলে কমিটি মা-বাবাকে অভিযোগ দাখিল করতে বলবে। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালত তা নিষ্পত্তি করবে। এছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ বা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করতে পারবে।