অগ্রক্রয় কি, কেন, কিভাবে?
আইন-আদালত (প্রতীকী ছবি)

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের কি সাজা?

ধর্ষণ একটি সামাজিক অপরাধ। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই এ অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান আছে। তারপরও এ অপরাধ পৃথিবীর অনেক দেশেই মহামরির আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ধর্ষণের অপরাধ করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে, যদি না ধর্ষিতা স্ত্রীলোকটি তার নিজ স্ত্রী হয় এবং সেই স্ত্রী ১২ বছরের কম বয়স্কা না হয়। আর যদি এমন হয় যে ধর্ষণের শিকার নারীটি তার স্ত্রী, যার বয়স ১২ বছরের কম, তবে সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ নম্বর ধারায়ও ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। তবে এ আইনে ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা আছে।

৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

এরপর ৯(২) ধারায় আছে, যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ-পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

এ ছাড়া ৯(৩) ধারায় আছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

আর ৯(৪) ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে-(ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন। এখানে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণের শাস্তি ও এর প্রয়োগ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

এবার পৃথিবীর অন্য কয়েকটি দেশে এই অপরাধের সাজা কী তা জেনে নেওয়া যাক। বিভিন্ন দেশের আইন অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ভারত, ইরান, চীন, গ্রিস, রাশিয়াসহ এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়েসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩০ বছর কারাদণ্ড।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০১৩ সালে ধর্ষণের শাস্তি আগের চেয়ে কঠোর করা হয়েছে। দেশটিতে বিশেষ ক্ষেত্রে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে সচরাচর সাত থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে যদি কারো বিরুদ্ধে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে দেশটিতে সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সৌদি আররে ধর্ষণে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে শাস্তি প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ। তবে তার আগে দোষীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়।

চীনে ধর্ষকের জন্য বরাদ্দ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। তবে এই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতাও রয়েছে। কারণ, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর অভিযুক্ত নির্দোষ ছিল এমনও দেখা গেছে। আরেকটি শাস্তি রয়েছে পুরুষাঙ্গচ্ছেদ।

ফ্রান্সে ধর্ষণের শাস্তি ১৫ বছরের কারাদণ্ড। তবে ঘটনায় ক্ষতি ও নৃশংসতার বিচারে তা ৩০ বছর পর্যন্ত বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। উত্তর কোরিয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুলি করে অপরাধীর বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। আফগানিস্তানে আদালত রায় দেওয়ার চারদিনের মধ্যে অভিযুক্তকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

মিসরে এখনও অনেক অপরাধে মধ্যযুগীয় শাস্তির প্রথা থাকলেও ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি। ইরানেও ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ফাঁসি অথবা প্রকাশ্যে পাথর মেরে তা কার্যকর করা হয়। ইসরায়েলে দোষ প্রমাণ হলে ১৬ বছরের কারাদণ্ড। সে দেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা কিছুটা বর্ধিত। অন‌্য যৌন নির্যাতনও এর অন্তর্ভুক্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ও ফেডারেল আইন অনুযায়ী ধর্ষণের বিচার ভিন্ন। ফেডারেল আইন অনুযায়ী দোষীর সাজা কয়েক বছরের কারাদণ্ড থেকে যাবজ্জীবনও হতে পারে।

ধর্ষকের তিন থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে রাশিয়ায়। তবে পরিস্থিতির বিচারে তা ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। যদি ধর্ষকের আচরণ অত‌্যন্ত নৃশংস হয়ে থাকে, তবে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

নরওয়েতে সম্মতি ছাড়া যে কোনো যৌনতা ধর্ষণের মধ্যে পড়ে। নৃশংসতা অনুযায়ী দোষীর তিন থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। এছাড়া মঙ্গোলিয়ায় ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

সূত্র- কালের কণ্ঠ