জিশান মাহমুদ এবং পারিসা ফাইজা

নব উদ্দীপনায় জাগো মাতা, কন্যা, বধূ, জায়া, ভগ্নী!

জিশান মাহমুদ: ব্রাক বিশ্বাবদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পারিসা ফাইজা আমাকে তার লেখাটি দিলেন।

“I grew up in a society hearing things like –
“It’s better to get married early and to have kids otherwise no one will marry you”
“A girl should be at home within evening”
“Omg you are too dark you should use skin lightening products or else no one will marry you”
“Why your makeup is too dark? I mean you are dark so maybe you should use a little lighter foundation?”
“Her nudes got leaked!”
“She is a whore.”
“Did you see what she was wearing??I am not gonna be surprised if she gets raped.”
“Where is your orna (scarf)?”
“A proper lady does not sit like that”

We live in a society where we constantly get blamed for everything.
The way we dress, the way we sit, the way we want to live our life.
It’s 2020 but people still prioritize getting married and to have kids rather than have a career.
It’s 2020 but people still gonna bash you for your skin tone.
It’s 2020 but people still gonna judge you for what you wear.
We live in a patriarchal society. If we can’t learn to stand up for ourselves from now on, then this society will never change.
Let’s change this society for good. For real good.
Let’s do it together.
You are the start.
WE CAN DO IT!!”

আমি ভাবছি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর কথা। তিনি ১৮৮০ সালে জন্মেছিলেন। এই ক্ষণজন্মা মহীয়সী নারী মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা গিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়াকে বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলা ভাষাভাষী নারী সমাজ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর পুরোটা সময় কাল অতিবাহিত করেছেন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বেগম রোকেয়া’র মৃত্যুর পর আজ অবধি তাঁর মানের আশেপাশের কোন নারী লেখক আমার দৃষ্টিতে আসেনি।

আজ ২০২০ এ এসেও একজন বেগম রোকেয়াকে খুব প্রয়োজন। কিছু কিছু নারী সংগঠন মাঝেমধ্যে নারীবাদ নারীবাদ বলে গলা ফাটান কিন্তু প্রকৃত নারীর স্বাধীনতা টা কি? নারীর ক্ষমতায়নটা আসলেই কিভাবে আসা উচিৎ? এগুলো ঠিকঠিক পথে এগুচ্ছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।

এই যে দেলোয়ার গং রা যে ধর্ষণ কান্ডটা করে বসলো, আমি ফেসবুকসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি অনেকেই পিতা-মাতা সহ চৌদ্দগুষ্ঠি ধরে গালাগাল দিচ্ছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, ধর্ষকদের মা-বাবা’রা কিন্তু ছেলেদের এই কর্মকান্ডে খুবই মর্মাহত এবং লজ্জিত। ভাবছেন ধর্ষকদের পক্ষে সাফাই গাচ্ছি কিনা? আসলেই না। ৭০, ৮০ কিংবা ৯০ এর দশকে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও কম ছিল, তখন ধর্ষণও কম হত। বর্তমানে আজ ঘরে ঘরে মাস্টার্স পাশ ছেলে-মেয়ে পাওয়া যায়। আমার কথা হল, প্রকৃতভাবে আমরা কি আজ এত এত শিক্ষিত মানুষকে সুশিক্ষিত করতে পেরেছি? যারাই বা অল্প শিক্ষিত ধরুন ৩/৪/৫ ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে, তাদেরকে কি সঠিক জ্ঞান টা দিতে পেরেছি? আমরা তো ছোটবেলায় মানবিক মূল্যবোধগুলো শিখেছি। এখনকার প্রজন্ম তাহলে কি শিখছে? এখন সময় এসেছে এগুলো নিয়ে ভাবার। গোড়ায় গলদ রেখে নব নব প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করা যাবেনা। একজন পুরুষ নারীকে কিভাবে কিভাবে সম্মানের চোখে দেখবে, সেই শিক্ষাটা প্রতিটি ছেলেকে খুব ছোটবেলায় মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে। তাহলে হয়তো নারীর সঠিক সম্মান টা পরবর্তী প্রজন্ম দিতে পারবে। আইন কখনো মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। আমার ধর্ষণ করার ইচ্ছে জাগলে, আইন কিভাবে তা রোধ করবে? আইন হয়তো পারে সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সাজা দিতে। তাই আমাদের মাঝে সঠিক মূল্যবোধ জাগ্রত হউক।

পাশাপাশি পারিসা ফাইজা কে অনেক ধন্যবাদ। অনেক সুন্দর উপস্থাপনের জন্য। পারিসা ফাইজা‘র মত বাংলাদেশের সকল নারী যেন যার যার যায়গা থেকে লিখে যেতে পারে। ঘরে ঘরে প্রতিবাদ হউক। শেষ করছি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে দিয়ে-

জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।
জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা।।
দিকে দিকে মেলি’ তব লেলিহান রসনা,
নেচে চল উন্মাদিনী দিগ্‌বসনা,
জাগো হতভাগিনী ধর্ষিতা নাগিনী,
বিশ্ব-দাহন তেজে জাগো দাহিকা।।
ধূ ধূ জ্ব’লে ওঠ ধূমায়িত অগ্নি,
জাগো মাতা, কন্যা, বধূ, জায়া, ভগ্নী!
পতিতোদ্ধারিণী স্বর্গ-স্খলিতা
জাহ্নবী সম বেগে জাগো পদ-দলিতা,
মেঘে আনো বালা বজ্রের জ্বালা
চির-বিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা।।

জিশান মাহমুদ: আইনজীবী; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।