সাব্বির এ মুকীম
সাব্বির এ মুকীম

ধর্ম অবমাননা: লালমনিরহাটের ঘটনা এবং ইলমুদ্দিন বনাম ভারত সম্রাট মামলার রায়

সাব্বির এ মুকীম: পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় আইনি মিথ হচ্ছে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জীবনে কেবল একটি মাত্র মামলাতেই পরাজিত হয়েছিলেন- ইলমুদ্দিন বনাম ভারত সম্রাট মামলায়। এআইআর ১৯৩০ লাহোরের ১৫৭ নং পৃষ্ঠা হতে সে মামলার রায়টি ছাপা রয়েছে। খুবই নাতিদীর্ঘ রায়, মাত্র ২পৃষ্ঠার রায়। সে রায়ের প্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালের ৩১শে অক্টোবর ইলমুদ্দিনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। দাবী করা হয় জানাযার নামাজে ৬ লক্ষ মানুষ অংশ নেয়। দাফন কালে কবরের ভেতরে নেমেছিলেন আল্লামা ইকবাল। শোনা যায় মন্তব্য করেছিলেন “ আমরা শুধু কথাই বলি, এই কাঠমিস্ত্রির বেটা করে দেখিয়েছে”। ছুরি দিয়ে কুপিয়ে বই প্রকাশক এবং বইয়ের দোকানদার মাহাষে রাজপাল হত্যার দায়ে ইলমুদ্দিনের মৃত্যুদন্ড হয়। ভিক্টিম রাজপালকে হত্যা করার আগে ব্যাক্তিগতভাবে চিনতো না ইলমুদ্দিন। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিগণকে জিজ্ঞেস করে সে রাজপালকে চিনেছিলো।

অখন্ড ভারতের অখন্ড পাঞ্জাবে গত শতকের ২০ এর দশকের শেষভাগে ইসলাম ধর্ম বনাম সনাতন ধর্ম নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচন্ড রকম বাগ-দ্বৈরথ শুরু হয়, যা দাঙ্গার দিকে গড়াতে থাকে। সেসময় কয়েকজন মুসলিম “সীতা কা ছিনালা” নামের হিন্দুদের শ্রদ্ধেয় সীতা দেবী (দেবতা রাম এর স্ত্রী) কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক পুস্তিকা প্রকাশ করে। পাল্টায় হিন্দু ধর্মীয় আর্য সমাজের আয়োজনে পন্ডিত এম এ চামুপতি ওরফে কৃষ্ণপ্রশাদ প্রতাব “রঙ্গিলা রসূল” নামে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) কে ব্যাঙ্গ করে পুস্তিকা প্রকাশ করে। [সূত্র: থট্স অন পাকিস্তান, বাবা সাহেব ভিম রাও আম্বেদকর, বোম্বে, ১৯৪১]

রঙ্গিলা রসূল পুস্তিকা প্রকাশের এবং আলোচ্য বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রকাশ করে ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকার ১৯শে জুন, ১৯২৪ তারিখের সংখ্যায় ব্যারিস্টার মোহন দাশ করমচাঁদ গান্ধী একটি আর্টিকেল লিখেন।

পরবর্ত্তী ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে মিঃ গান্ধী ১০ই জুলাই, ১৯২৭ সালে লেখা এক চিঠিতে লিপি করেন:

So far as I am aware there is nothing to choose between this class of writers [যারা রঙ্গিলা রসূল বা সীতা কি ছিনালা টাইপ লেখা লেখেন], whether Hindu or Mussalman, and both are equally worthy of condemnation. But the remedy against this evil, so far as I am concerned, is not through a court of law, certainly not through violence, but through cultivation of healthy Hindu Muslim opinion in which will make the publication of sheets inflaming religious passions against one another an impossibility. But I am aware that my views are just now out of fashion.

সারমর্ম হলো এধরণের ব্যাঙ্গকারীদের আসলে কোনো ধর্ম নাই। তবে এই রোগের ওষুধ আদালতের কাছে নাই, অতি অবশ্যই সহিংস আচরণে তো নাই-ই। কেবল মাত্র হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যই এ রোগের চিকিৎসা হতে পারে।

উদ্ধৃতকৃত প্যারার শেষ লাইনটি ই হলো সবচে মর্মস্পর্শী,- “আমার এই চাওয়া যুগের সাথে মানানসই নয়, আমি সেটাও জানি”

রঙ্গিলা রসূল পুস্তিকার প্রকাশক ছিলো আলোচ্য রায়ের অপরাধের ভিকটিম মাহাষে রাজপাল। লাহোরের হাসপাতাল রোডে রাজপালের বইয়ের দোকান ও প্রকাশনালয় ছিলো। রাজপালের বিরুদ্ধে দন্ড বিধির ১৫৩-এ ধারার মামলায় সাজা হয়। সাজার বিরুদ্ধে রাজপাল আপিল করে রাজপাল বনাম ভারত সম্রাট এআইআর ১৯২৭ লাহোর ৫৯০ পৃষ্ঠায় ছাপা হওয়া রায়ে খালাস পায়। [সূত্র: দ্য স্টোরি অব সেকশন ২৯৫-এ: এ ল’ এন্ড লিটারেচার এপ্রোচ, এরিক ম্যাকলাহলান, ক্যালঘেরি বিশ্ববিদ্যলয়, মাস্টার্স থিসিস (মাস্টার্স প্রোগ্রাম ইন রিলিজিয়াস স্টাডিজ) ২০১৭]

১৮৬০ সালে যখন দন্ডবিধি প্রণয়ন হয় তখন আন্তধর্মীয় বিরোধ সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে একমাত্র ধারা ছিলো ২৯৫ নং ধারা। যাতে বলা ছিলো কোন শ্রেণীবিশেষের ধর্মের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন করা বা উহা অপবিত্র করার শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আদি দন্ডবিধিতে দাঙ্গায় প্ররোচনা নিয়ে ছিলো ১৫৩ নং ধারা যাতে দাঙ্গার প্ররোচনার সাজা ৬ মাস কারাদন্ড করা হয়েছিলো।

কিন্তু এই ধারায় ছাপার মাধ্যমে দাঙ্গায় প্ররোচনার কোনো স্পষ্ট বিবরণ না থাকায় এবং সে বিবরণ সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রয়োজন হয়ে পড়ায় ১৮৯৮ সালে দন্ডবিধি (সংশোধন) আইন এর ৫ ধারার মাধ্যমে নতুন ১টি ধারা তথা ধারা ১৫৩ (এ) সংযোজন করা হয়। নতুনে এ ধারায় লিখিতভাবে দাঙ্গায় প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ প্ররোচনা দেয়া হলে ২ বছরের কারাদন্ড সাজার বিধান করা হয়।

রাজপালের বিরুদ্ধে সেই ১৫৩ (এ) ধারায় মামলা করা হয়েছিলো। লাহোর হাইকোর্ট এই যুক্তিতে রাজপালকে খালাস দেয় যে রাজপালের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ এর মধ্যে ১৫৩ (এ) ধারার উপাদান উপস্থিত না থাকায় ১৫৩ (এ) ধারায় রাজপালকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাচ্ছে না।

রাজপালের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায় আন্দোলন শুরু করে। রাজপাল রায়ের অথর জাজ দিলীপ সিং এর অপসারণ দাবী করা হয়। যদিও বিচারপতি দিলীপ সিং তাঁর রায়ে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত নতুন আইন করার জোর সুপারিশ রেখেছিলেন যেনো ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজকে অপরাধ গণ্য করে বিচার করে সাজা দেয়া যায়।

এমন বাস্তবতায় রাজপাল কান্ডের পর ব্রিটিশ সরকার পুনরায় দন্ডবিধি সংশোধনের প্রয়োজন বোধ করে। ক্রিমিনাল ল’ (এমেন্ডমেন্ট) এক্ট ১৯২৭ প্রণয়ন করে যার ২নং ধারা বলে বিদ্যমান দন্ডবিধিতে ২৯৫(এ) ধারা সংযোজিত হয়। ২৯৫(এ) ধারা সার সংক্ষেপ হলো- কোন শ্রেণী বিশেষের ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে উহার অনুভূতির কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কার্যসমূহের শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইন প্রণয়নের পূর্বে সিলেক্ট কমিটি (আমরা যাকে বর্তমানে সংসদীয় কমিটি হিসেবে চিনি) ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক শব্দ ২টির উপর বিশেষ জোর প্রয়োগ করেন। সিলেক্ট কমিটির মত ছিলো এই বিধানে কোনো সংস্কার চাওয়া কাজকে সাজা দেয়ো যাবে না, এই বিধান মতে কোনো কাজকে সাজা দিতে হলে নালিশী কাজকে অবশ্যই ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক হতে হবে। (সূত্র: সোলি সোহরাবজি, সাবেক এটর্ণি জেনারেল অব ইন্ডিয়া, ইনসাল্ট টু রিলিজিয়ন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২০০৬)

রাজপাল খালাস পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ মুসলিম সম্প্রদায়ের ১টি অংশ জীবননাশের উদ্দেশ্যে রাজপালের উপর পর পর ২বার হামলা করে। ফলে রাজপালের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা নিযুক্ত করা হয়। ঘটনার কিছুদিন আগে রাজপাল হরিদ্বার গমন করে। রাজপালের পুলিশ প্রহরীকে আপাতত সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯২৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাজপাল লাহোরে ফেরৎ আসে। তাৎক্ষণিকভাবে তার পুলিশ প্রহরা বলবৎ করা হয়নি। ২দিন পর তথা ৬ই এপ্রিল রাজপালের দোকানে অভিযুক্ত কাঠ মিস্ত্রি ইলমুদ্দিন সার্জিক্যাল নাইফ বা অস্ত্রপচারের ছুরি দিয়ে রাজপালকে মোট ৮টি আঘাত করে যার মধ্যে ৪টি কোপ রাজপালের হাতে লাগে, ১টি কোপ রাজপালের মাথার ডানদিকে খুলি ভেদ করে, বাম কাঁধ হতে মেরুদন্ড অবধি ২টি কোপ, ১টি কোপ বুকের বাম পাশে ৪নং পাঁজর কেটে বুকে ঢুকে হৃদপিন্ড ছেদন করলে রাজপালের মৃত্যু ঘটে।

যুক্তিতর্কে ব্যারিস্টারর জিন্নাহ বলেছিলেন,

[T]hat the sentence of death (নিম্ন আদালতের মৃত্যুদন্ড) was not called for and urged as extenuating circumstances, that the appellant is only 19 or 20 years of age and that his act was prompted by feelings of veneration for the founder of his religion and anger at one who had scurrilously attacked him.

তাঁর মতে অভিযুক্ত খালাস পাবে কারণঃ

(১) যেহেতু অভিযুক্তের বয়স মাত্র ১৯/২০ বছর,

(২) যেহেতু অভিযুক্ত তার নবীর (সাঃ) প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ অপরাধটি করেছে,

(৩) এবং যেহেতু ভিকটিম অভিযুক্তর প্রিয় নবী (সাঃ) কে ভয়াবহ আক্রমণ করে অভিযুক্তের মধ্যে প্রচন্ড ক্রোধের উদ্রেগ করেছে।

ব্যারিস্টার জিন্নাহ মূলত মানুষ খুন সংক্রান্ত দন্ডবিধির ৩০০ ধারার ১নং ব্যাতিক্রম ও ৪নং ব্যাতিক্রমের আওতায় সাডেন এন্ড গ্রেইভ প্রভোকেশন এলংগ উইথ হিট অব প্যাশন গ্রাউন্ড দেখাতে চেষ্টা করেছিলেন।

কোনো ব্যাক্তি প্ররোচনার মাধ্যমে উত্তেজিত করে আপনাকে প্রচন্ড ক্ষেপিয়ে তোলার ফলে আপনি যদি তাকে জিদের বশবর্তী হয়ে হত্যা করেন তবে তা দন্ডবিধির ৩০২ ধারার আলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে না। ইলমুদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো এই ৩০২ ধারাতেই।

যুক্তি অগ্রাহ্য করে বিজ্ঞ আদালত লিখেন,

‘The fact that Ilam Din is 19 or 20 years of age is not, therefore, a sufficient reason for not imposing the extreme penalty and I am unable to see that the other reasons advanced by Mr. Jinnah can be regarded as affording any excuse for a deliberate and cold blooded murder of this type.’

যার সারমর্ম বঙ্গানুবাদ হচ্ছে, অল্প বয়স কিংবা অন্য যেকোনো গ্রাউন্ডে এধরণের এমন ঠান্ডা মাথার হত্যাকান্ডকে ক্ষমা করা যায় না।

অবশ্য ২০১১ সনের ২রা এপ্রিল ব্যারিস্টার ফারুক হাসান লাহোর হাইকোর্টে এক আবেদন করে যেনো ইলমুদ্দিনের মামলা পুণরুজ্জীবিত করা হয়। ইলমুদ্দিনের সাজাকে অবৈধ ঘোষণার প্রার্থনা যেসব যুক্তিতে করেছিলেন তা হলো:

(১) যে ইলমুদ্দিন মামলার ১৯২৭ সালের রায় প্রদানকারী বিচারকগণ খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী ইংরেজ আইনের বিচারক,

(২) রায়ে অভিযুক্ত পক্ষে যুক্তিগুলো লিপি করা হয়নি এবং খন্ডন করা হয়নি,

(৩) রায়ে ইলমুদ্দিনের অপরাধের কারণ তথা ইলমুদ্দিনের প্রিয় নবী (সাঃ) কে অবমাননার ঘটনাকে বিবেচনা করা হয়নি।

দরখাস্তে ইলমুদ্দিনের জন্য আয়ারল্যান্ড এর স্যার রবার্ট কেইসম্যান্ট মামলায় প্রদত্ত সন্মাননার মতো আদেশও প্রার্থনা করা হয়। মহামান্য রাজা বনাম কেইসম্যান্ট [১৯১৭] ১ কেবি ৯৮ এ প্রকাশিত ব্রিটেনের প্রধান বিচারপতি এভরির নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের কিংস বেঞ্চ এর রায়ের ফলে ১৯১৬ সালে স্যার রবার্ট কেইসম্যান্টকে দেশদ্রোহীতার অপরাধে ফাঁসি দেয়া হয়। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস, নাট্যকার জর্জ বানার্ড শ তাঁকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তবে ১৯৬৫ সালে বৃটেনের কারাগারের কবর স্থান হতে উত্তোলন করে কেইসম্যান্ট এর দেহাবশেষ আয়ারল্যান্ডে নেয়া হয়। আনুমানিক ৩০ হাজার লোকের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁকে আয়ারল্যান্ড এ পুনরায় তথা মৃত্যুর ৫০ বছর পরে কবর দেয়া হয়।

অবশ্য পাকিস্তানেই ইলমুদ্দিনের বিরোধীতাকারীরাও তাঁদের মত প্রকাশ করেন। বিশেষ করে পাঞ্জাবের সাবেক গভর্ণর সালমান তাসিরের হত্যাকারী মমতাজ কাদরির ফাঁসি কার্যকরের সময় মমতাজের বিপুল জনসমর্থনের জোয়ারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে ইলমুদ্দিনের বিরোধীতাকারীরা ইলমুদ্দিনের সমালোচনা আবার সামনে টেনে আনেন।

লালমনিরহাটের ঘটনার সাথে রাজপাল-ইলমুদ্দিনের ঘটনার মিল ২টি- ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ এবং অবমাননার অভিযুক্তকে হত্যা। তফাৎ হলো লালমনিরহাটের ঘটনায় অবমাননা প্রমানিত হয়নি কিন্তু রাজপালের অবমানান আদালতে প্রমাণিত এবং রাজপাল অবমাননার অভিযোগে নিম্ন আদালতে সাজা প্রাপ্তও ছিলো। আরেকটি তফাৎ হলো রাজপাল ঘটনায় হত্যাকান্ডের শিকার হন একজন অমুসলিম ব্যক্তি। অন্যদিকে লালমনিরহাট ঘটনায় নিহত ব্যক্তি একজন নামাজী মুসলিম। কোনো যুক্তিতেই আইন বহির্ভূত হত্যাকান্ডকে এমনকি পরোক্ষ সমর্থন করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে না যে রাজপালের হত্যাকান্ড ঠিক আছে যেহেতু সে হিন্দু কিংবা ধর্ম অবমাননা প্রমাণ হলেই তাকে হত্যা করা ন্যায্য। বরং এটুকুই বলা হচ্ছে, রাজপালের হত্যাকান্ডের বিচার করতে পারলে আশা করি লালমনিরহাটে ২০২০ সনের ইদে মিলাদুন্নবীর রাতে নিহত শহীদুন্নবী হত্যাকান্ডের বিচার ও হবে।

সব ধর্মেই ন্যায় বিচারের প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের ৫৫নং সুরার ৭নং হতে ১১নং আয়াতসমূহের বঙ্গানুবাদ হলো-

(৭) তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড। (৮) যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদন্ডে।(৯) তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না। (১১) তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্যে।

স্পষ্টভাবেই এখানে তুলাদন্ড মানে দ্য স্কেল অব জাস্টিস আর ওজন কায়েম করো মানে যার যার আইনগত পাওনা তাকে তাকে তার তার প্রাপ্য অনুসারে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। শেষ আয়াতকে বাকী আয়াতগুলোর আলোয় এভাবেই অনুভব করা যায় যে, ন্যায় বিচার শুধু মুসলমানের জন্য নয় বরং ন্যায় বিচার সকল সৃষ্টির জন্য- সকল সৃষ্টিতে মুসলিম, হিন্দু, শিখ, ইহুদী, প্রাণ, পরিবেশ গয়রহ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত।

সাব্বির এ মুকীম: আইনজীবী; কুমিল্লা জজ কোর্ট। ই-মেইল: samukim1@gmail.com