হাইকোর্টের আদেশ গোপন করে জামিনে মুক্ত ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ

দুর্নীতি মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশের তথ্য গোপন করে বিচারিক আদালত থেকে কারা অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) বজলুর রশিদের জামিন নেয়ার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে, বিচারিক আদালতের জামিন আদেশ বাতিল করার আর্জিও জানিয়েছেন দুদক।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে রোববার (১ নভেম্বর) বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।

পরে দুদককে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট এবং বিচারিক আদালতে সংশ্লিষ্টপক্ষকে দ্রুত নথিপত্র সরবরাহের জন্য নির্দেশনা দেন।

তথ্য গোপন করে জামিন নেয়ার ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা।

এর আগে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় কারা অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) বজলুর রশীদকে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন জামিন দেন।

গত ২২ অক্টোবর একই আদালত এই মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন। একইসঙ্গে, এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

ওই দিনই আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেছিলেন। কিন্তু ওই দিন হাইকোর্টের দেয়া আদেশের তথ্য গোপন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত থেকে ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর রোববার ঘটনাটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আনেন দুদকের আইনজীবী।

গত ২৬ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দীন বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ওই আদালতে বদলির আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বজলুর রশীদ রূপায়ন হাউজিং স্টেট থেকে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডের ৫৫/১ (পুরাতন) ৫৬/৫৭ (নতুন) নির্মাণাধীন স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পের ২৯৮১ বর্গফুট আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ তিন কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। এই অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বাবদ বজলুর রশীদ যে টাকা পরিশোধ করেছেন, এর সপক্ষে কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি।

এমনকি তিনি অ্যাপার্টমেন্টের ক্রয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য তার আয়কর নথিতে দেখাননি। পরিশোধিত ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা জ্ঞাত আয় উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক আইন ২৭ (১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শে‌ষে দুপুরে দুদক পরিচালক মো. ইউসুফের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে।