নাগরিক স্বাস্থ্য ডেটাবেজ তৈরীসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও বীমা প্রণয়ন সময়ের দাবি

ফারজানা কাশেমী: স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের উদ্যোগে গত ১৪ নভেম্বর ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় আইনের সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়বস্তু ছিল “স্বাস্থের রাজনীতি, রাজনীতিতে স্বাস্থ্য।” এতে বাংলাদেশ থেকে মতামত দেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, যুক্তরাজ্য থেকে সমাজবিজ্ঞানী  ড. তানভীর আহমেদ ও কানাডা থেকে জাতিসংঘের ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্টে কর্মরত তরুণ অর্থনীতিবিদ গালীব ইবনে আনোয়ারুল আজিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এবং জনস্বাস্থ্য গবেষক লুবনা ইয়াসমিন।
আলোচনার শুরুতেই সঞ্চালক বাংলাদেশের  স্বাস্থ্য সেবায় আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে গত ৪টি ওয়েবিনার সিরিজে  বাংলাদেশের চিকিৎসা অবহেলা  ও আইনের সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহনকারীর অধিকার ও সমস্যা সমুহ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্হাপনায় বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে  আলোচনা হয়েছে, এত সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা  স্বত্তেও বাংলাদেশে সর্বজনিন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব বর্তমান ও অতীত কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন ড. তানভীরকে।
উত্তরে ড. তানভীর বলেন, বাংলাদেশে সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, একটি দেশের নাগরিক হিসাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নাগরিকদের অধিকার এবং তা রক্ষা করতে পারে একটি রাষ্ট্র। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবায় গর্ব করার মতন অনেক  বিষয় আছে যা  জনস্বাস্থ্য নীতিতে সাফল্যের সাথে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে স্বাধীনতার পর প্রথম  বিরাট অর্জন হয় গত ১৯৭৬-৭৭ সালে, সেই সময়ে বাংলাদেশ “গুটি বসন্ত” নিরাময়ে এক কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭৮ আলমা আটা ঘোষণা করা হয় তখন বাংলাদেশ সেই চুক্তিতে সাইন করে, ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে এসে পড়ে। সেই সুত্রধরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাতে সহজ হয় সেই লক্ষ্যে ১৯৮২ সালের ঔষুধ নীতি অনুমোদন করা হয়েছিল। সেখানেও জনস্বাস্থ্য খাতের সাফল্য বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। তখন তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশ হিসাবে, জনগনের কাছে ঔষধপ্রাপ্তি  যেন সহজলভ্য হয় এই বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল। ড. তানভীর জোর দিয়ে বলেন এছাড়াও আমাদের স্বাস্থ্যখাতে  পরবর্তীতে যুগান্তকারী উদ্ভাবন ঘটে, বিশেষকরে ডায়েরিয়ার  প্রতিরোধে ওরস্যালাইন জীবন রক্ষাকারী প্রতিশেধক  উদ্ভাবনে। স্বল্প খরচে এমন যুগান্তকারী উদ্ভাবনে ডায়েরিয়া জনিত রোগ প্রতিরোধে  মানুষের  মাঝে  পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের এক মাইল ফলক হিসাবে পরিগণিত হয়ে আছে।
১৯৮০র শেষের দিকেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু হয় তা  HFA -Health For All  “সকলের জন্য স্বাস্থ্য” আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা  দেওয়া প্রয়োজন, সবাই যেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে এই বিষয়টি ছিল এই আন্দোলনের মূলকথা। সেই সূত্র ধরে ১৯৯০ সালের শেষের দিকে UHC (Universal Health Care) এর স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে অর্থনৈতিক ক্ষতি না করে খুব ভালোমানের স্বাস্থ্য সেবা যেন মানুষ পেতে পারে। মাত্র ৫০ বছরে স্বাধীনতার পর হতে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে  অদ্যাবধি স্বাস্থ্যসেবা খাতে দেশের অনেক অর্জন এবং গর্বের জায়গা থাকলেও এ নিয়ে সংগ্রাম চলতেই থাকবে যতক্ষণ না স্বাস্থ্যকে সাংবিধানিক অধিকারের মর্যাদা দেয়া হবে।
ড. তানভীর আরো বলেন আমরা অনেক কিছু দেখেছি এবং শিখেছি, এখন শুধু প্রয়োজন  রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা। স্বাস্থ্যখাতকে সরকারি পরিচালনায়  রাখা হলে আইন প্রয়োগ অনেকবেশী সহজ হবে, যদি কেনো আইনগত সমস্যা থেকেও থাকে  এবং তখন কোনো ধুসর এলাকা থাকবেনা। সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের কাছে, যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে  সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া হয়।
তরুণ অর্থনীতিবিদ গালীব  ড. তানভীরের কথার সূত্র ধরে বলেন, যে কোনো কাজ করার জন্য প্রয়োজন  আইন এবং নীতিমালা, বাস্তবায়ন এবং সেইজন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। রাজনৈতিক মেনিফেস্টোতে সবাই শিক্ষাখাত ও স্বাস্থ্যখাতকে সামনে রাখে, কিন্তু সেই তুলনায় স্বাস্হ্যখাতে  সবসময়ই জিডিপির  অনুপাতে বিনিয়োগ বেশ কম ছিল। গত দশকে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ ধারাবাহিক  ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েও প্রয়োজনীয় জায়গায় পৌঁছাতে এখনো সক্ষম হয় নাই। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের মাথাপিছু ব্যায় এসে দাড়িয়েছ ২৬ মার্কিন ডলারে এবং ৬৩ শতাংশ  স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে একজন গ্রাহকের খরচ হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়।
স্বাস্থ্যখাতে গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে বড় আকারে বিনিয়োগ হয়েছে মূলত তিনটি জায়গায়- এক. অবকাঠামো তৈরীতে; দুই. যন্ত্রপাতি  কেনাকাটায় এবং  তিন. আরো একটি বিশেষ  অংশ বিনিয়োগ হয় স্বাস্থ্যখাতে যে জনবল  আছে তাঁদেরকে  ভরণপোষণ দিতে গিয়ে যেমন বেতন ভাতা ইত্যাদি সুবিধার ক্ষেত্রে।
স্বাস্থ্যখাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে  বাংলাদেশের কি কৌশল কি অবলম্বন করা উচিত প্রশ্নের উত্তরে গালীব বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিগত দুই দশকে ধোয়াশা ছিল, সরকারে যারাই ছিলেন তাদের মধ্যে দ্বিধা ছিল কতটুকু সরকার করবে আর কতটুকু বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হবে। সেই সাথে বহির্মুখী স্বাস্থ্য অর্থনীতি তৈরি হয়েছে, বহু রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। করোনা বিধিনিষেধের কারণে অনেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশে না যেতে পেরে এখন তুরস্ক, দুবাইতেও যাচ্ছেন৷
তিনি স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল তিনটি  ধারার বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করেন যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত; সরকারি বিনিয়োগ, সরকারি প্রচেষ্টা যা সবসময়ই বিদ্যমান ছিল, দ্বিতীয়ত; বেসরকারি খাতে উন্নয়ন সহযোগী আমাদের প্রান্তিক উন্নয়ন সংস্হাগুলোর বিনিয়োগ এবং তৃতীয়ত; বিদেশী উন্নয়ন সংস্হার বিপুল পরিমাণে উল্লেখযোগ্য  বিনিয়োগ। সম্মিলিত ভাবে পুষ্টি, নারী ও শিশুর  স্বাস্থ্য উন্নয়নে যথেষ্ট শ্রম ও বিনিয়োগ করা হয়, যার ফলাফল আমরা এখন লক্ষ্য করছি।
বাংলাদেশের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও  স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নে কি কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে প্রশ্নের উত্তরে গালীব বলেন, স্বাস্থ্য সেবায়  নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেতন, সুযোগ ও সুবিধা বাড়াতে হবে। সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রান্তিক উন্নয়ন সহযোগী  প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী বাড়াতে হবে। বেসরকারিকরণ খাতে সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। বহির্মুখী স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস করতে হবে।
তিনি আরে বলেন, বর্তমানে বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে বিপুল বিস্তৃতি ঘটেছে। সকল নাগরিককে  প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগের সক্ষমতা বেড়েছে। তিনি ড. তানভীরের কথার সাথে সহমত পোষণ করে  বলেন স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হওয়া দরকার। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে। বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারী কাঠামোর আওতাধীন থাকতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব চালু করতে হবে।
বাংলাদেশের নাগরিকের স্বাস্থ্য বীমা কার্ড ও  ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যাদী লিপিবদ্ধকরণ প্রশ্নে গালীব বলেন ভোটাধিকার প্রয়োগের অলরেডি ডাটাবেইজ আছে শুধু সেই ডাটা আপগ্রেডের মাধ্যমেই স্বাস্থ্য বীমা কার্ড করা সম্ভব।  বাংলাদেশের জনগন এই বিষয়গুলো নিয়ে অন্যান্য দেশের ডাটাবেইজ তৈরীতে কাজ করছেন সুতরাং রাষ্ট্র তাদের কাছে  স্বাস্হ্যসেবা ব্যবস্হার তথ্যসমুহ নিয়ে কাজ করার জন্য বলতে পারেন। চাইলেই কাজ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির রূপ তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু বিনিয়োগ করলেই হবেনা সেই সাথে প্রয়োজন সুশাসন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ। তাছাড়া শুধু বিত্তবানেরাই কি ভালো বেসরকারি হাসপাতাল বা বিদেশে গিয়ে সুচিকিৎসা নিতে পারবে নাকি সব শ্রেণীর মানুষের সুচিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের সুসমন্বয় করা হবে সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
তিনটি ধারার বিনিয়োগকে একিভুত করণ সাপেক্ষে  রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে  ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে  একটুকু মনে হচ্ছে  বাংলাদেশের  বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় ১৭ কোটি জনগনকে একই মানের  প্রাইমারী স্বাস্থ্য সেবা দিতে সক্ষম।
বিনিয়োগ করার সক্ষমতা দেশের জনগনই তৈরী করেছে। দেশের সব মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় ভাবা যেতেই পারে।কারণ বাংলাদেশের জিডিপির ক্রমবৃদ্ধির  পিছনে সাধারণ নাগরিকের পরিশ্রমই একটি বিরাট ভুমিকা রেখে আসছে গত কয়েক দশক থেকে।সুতরাং  রাষ্ট্র দেশের নাগরিকদের  প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে সেই উপকারের ঋণ শোধ করতে পারে।স্বাস্থ্যবীমা করা আশু প্রয়োজন।
ব্যারিস্টার শামীম (এমপি) তার বক্তব্যের শুরুতেই অন্য দুই আলোচকের সাথে একমত হয়ে বলেন, আমাদের মূল সমস্যা মানসিকতায়। সারা পৃথিবীর মধ্যে যে চারটি দেশ স্বাস্থ্যখাতে জিডিপিতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয় তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এত কমের মধ্যেও  যা দেয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি। তাছাড়া স্বাস্থ্য-অর্থনীতিবিদদের বাজেট দেয়ার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হয়না। দেশের স্বাস্থ্যখাতের সমস্যাগুলো দূর করতে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। পাশাপাশি নাগরিকদেরও হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন।
স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ বরাবরই কম ছিল। এক্ষেত্রে শুধু বিনিয়োগ করলেই হবেনা সেই সাথে প্রয়োজন সুশাসন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ। সবার জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সকলের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা। স্বাস্থ্য খাতে পৃথক ক্যাডার সার্ভিস চালু করা এখন সময়ের দাবি। ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ এর আগে ইউনিভার্সেল হেলথ ড্যাটা প্রয়োজন বলেও তিনি মত দেন।
দেশের সব মানুষের জন্য একটি হেলথ কার্ড থাকবে যেখানে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের একেবারে মৌলিক জিনিসগুলো যেমন রক্তের গ্রুপ, ডায়াবেটিস আছে কিনা, প্রেশার রয়েছে কিনা এসব উল্লেখ থাকবে। এই হেলথ কার্ড দেখে চিকিৎসক রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সহজেই প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে পারবেন।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালকে একটা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শুধু বিত্তবানেরাই সুচিকিৎসা পাবে আর দরিদ্ররা নিম্নমানের হাসপাতেলে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হবে, তা হতে পারে না। এছাড়া অনেক বেসরকারি হাসপাতালে চাকচিক্য থাকলেও সেগুলো মানসম্পন্ন নয়। চিকিৎসক যেখানেই রোগী দেখেন না কেন তার জন্য একটা ফি নির্ধারণ করে দিতে হবে, প্রয়োজনে সরকার তাকে অর্থ দেবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করলেই যে সব সমাধান হয়ে যাবে তা নয়। কারণ অনেক মৌলিক অধিকারই লংঘনের নজির রয়েছে। এখানে সরকারের সদিচ্ছাই মূল বিষয়। দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি যেমন করতে হবে তেমনি ভবিষ্যতে রোগীর সংখ্যা কমাতে হবে। জনগণের সুস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা নিশ্চিতে সব এলাকায় সরকারি সহযোগিতায় খেলার মাঠ, ব্যয়ামাগার প্রস্তুত করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের জন্য শুধু আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় নির্ভর না থেকে যোগব্যায়াম, আয়ুর্বেদ এসবের দিকেও ঝুঁকতে হবে।
টেলিমেডিসিন বা ভিডিওকলে চিকিৎসা সেবা দেয়ার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, সরকার জোর গলায় এসব নিয়ে সাফল্যের কথা বললেও বাস্তবে সেরকম প্রভাব ফেলেনি। বিশেষ করে, চরাঞ্চল বা পাহাড়ি এলাকায়। বিদেশ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার নামে সরকারি বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়৷ বাংলাদেশ ডক্টর সার্ভিস বা মেডিক্যাল সার্ভিস নামে পৃথক ক্যাডার সার্ভিস চালু করা এখন সময়ের দাবি। করোনাকালে শুরু থেকে চিকিৎসকদের কথা শুনলে অনেক মানুষকে হারাতে হতো না। সব কিছু মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন করার চেয়েও জরুরি সরকারের সদিচ্ছা। প্রত্যেক এমপির উচিত স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ভাবা, অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারী সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা।
রেফারেল সিস্টেম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ড. তানভীরও ব্যারিস্টার শামীমের মতো একটি ড্যাটাবেজ তৈরির উপর জোর দেন যেখানে প্রোভাইডার, কমিউনিটি সহ সংশ্লিষ্ট সবার ড্যাটা থাকবে। তিনি বলেন, রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডাক্তারী পাশ করার সাথে সাথে সরকারের এই জনশক্তিকে কাজে লাগানো দরকার। সময় নষ্ট করার আর সময় নাই।স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে  পরিচালিত হওয়ার জন্য আলাদা স্বাস্থ্য ক্যাডার এবং দক্ষ জনশক্তি দরকার, আর দরকার সরকারের সদিচ্ছার।
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন করার চেয়েও জরুরি সরকারের সদিচ্ছা। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের উচিত জনগুরুত্বপূর্ণ খাতটি নিয়ে ভাবা, অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারী সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা।
ফারজানা কাশেমী: আইনজীবী; বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।