মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে বিনাদোষে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে থাকা আরমানকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদোলত।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আরমানের মায়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে আরমানকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণসহ অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে যুক্ত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার কর্মকর্তা হলেন- পল্লবী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির ও মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম খান ও মো. রাসেল।
ক্ষতিপূরণ ও পুলিশের চার সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার বিষয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশারকে বলা হয়।
এছাড়া আরমানকে বেআইনি আটকের ঘটনায় দায় নিরূপনে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়ে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে পিবিআইয়ের উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) আগামী ১১ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
পরে ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে এ ঘটনায় পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যর বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়েও আবেদন করেছিলেন ওই চার পুলিশ সদস্য।
চার পুলিশের বিষয়ে ১০ জানুয়ারি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, চেম্বার বিচারপতির আদালত চার পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। তাদের সিপি (লিভ টু আপিল) করতে বলেছেন।
সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২৬ মামলার ভুল আসামি পাটকল শ্রমিক জাহালম প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের নজরে আনার পর মুক্তি পান।
একটি জাতীয় দৈনিকে গত ১৮ এপ্রিল এ রকম আরেক জাহালমের ঘটনা প্রকাশিত হয়। মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে কারাগারে ‘নির্দোষ’ আরমান।
প্রকাশিত এ প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আরমানের মা বানু। পরে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদককারবারী শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু ওই পরিচয়ে তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান।
শুধু বাবার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।