উচ্চ আদালত
উচ্চ আদালত

‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনা পুরো পুলিশ বাহিনীর গাঁয়ে মাখানোর দরকার নেই’

হাইকোর্ট বলেছে, নারায়ণগঞ্জের এই একটি ঘটনাকে পুরো পুলিশ বাহিনীর গাঁয়ে মাখানোর দরকার নেই। বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবেই তাদের দেখা উচিত। যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তা থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, সেটা পুলিশ বাহিনীকে ভেবে দেখা উচিত।

নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ শেষে হত্যা ও মৃত কিশোরীর ফিরে আসার ঘটনায় বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির উপর শুনানির এক পর্যায়ে আজ বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

হাইকোর্ট বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যদি পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তিকে একটা কটু কথাও বলা হয় তাহলে সেটা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনায় তিন আসামি রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, তারা ধর্ষণ শেষে ঐ কিশোরীকে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার ৫১ দিন পর ঐ “মৃত” কিশোরী ফিরে আসায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। এরপরই হাইকোর্ট বিচারিক অনুসন্ধানের আদেশ দেয়। ঐ অনুসন্ধান রিপোর্টে বলা হয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন তিন আসামিকে নির্যাতন করে ঐ ধরনের জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে।

আজ এই অনুসন্ধান প্রতিবেদনের উপর শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, বিচারিক তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পুলিশ বাহিনীর ওপর একটা দোষ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরঞ্জিত কিছু করেননি। তিনি তার আওতার মধ্যে থেকেই আসামি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়েছেন। আসামিদের কোনও নির্যাতন করা হয়নি। কারণ আসামিরা জুডিসিয়াল কমিটির বাইরে আর কারো কাছে নির্যাতনের কথা তুলে ধরেননি।

আদালত বলেন, তাহলে আমরা কি ধরে নেব জবানবন্দিতে আসামিরা যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা সত্য নয়। ভিকটিমকে মেরে নদীতে ফেলার যে জবানবন্দি তাতে আসামিদের স্বার্থ কি? বেঞ্চের জোষ্ঠ বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, দেশের মানুষ ক্ষুদিরামের ফাঁসি দেখতে চেয়েছিল। এইজন্য কি সকলেই ফাঁসিতে যেতে চায়! এ বিষয়ে আমাদের একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

আদালত বলেন, আমরা এ মাটির সন্তান। আমরা সব কথা কোর্টে বলতে পারি না। এখানে সাংবাদিকরাও থাকেন। ফাঁসি হবে জেনেও আসামিরা কি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য। জবানবন্দিতে আসামিরা মেয়েটি হত্যা করার কথা তাহলে কি শখ করে বলেছে? এটা দুর্ভাগ্যজনক। অভাগা তো হলো এদেশের জনগণ।

মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ভিকটিম বিচারিক কমিটির কাছে বলেছে আসামি আবদুল্লাহ তাকে ধর্ষণ করেছে। আদালত বলেন, ২২ ধারা জবানবন্দিতে মেয়েটি আদালতে কি বলেছে? দুটো জবানবন্দির ভিতরে কোনটাকে আমরা সঠিক মনে করবো?

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, আসামিরা রিমান্ডের পর দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঐ জবানবন্দি দেওয়ার সময় তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতনের কথা বলে নাই।

আদালত বলেন, আপনাদের দুইজনের শুনানি গ্রহণ করলে আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য বলে ধরে নিতে হয়।

মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে সেজন্য জুডিসিয়াল রিপোর্টে তার প্রশংসাও করা হয়েছে। এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।

এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেন, ভারতে কোন আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া হলে সেখানে আইনজীবী রাখার সুযোগ আছে। সেজন্য তারা সিআরপিসি সংশোধনও করেছে। আমরা তো কোর্ট থেকে আইন সংশোধনের কথা বললে নানা প্রতিক্রিয়া হয়।

বাংলাদেশ বনাম ব্লাস্ট মামলার উদাহরণ তুলে ধরে মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, এই মামলায় বলে দিয়ে রিমান্ডে আইনজীবী রাখার সুযোগ আছে।

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মামলাটির রিভিউ এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। আপনারা (হাইকোর্ট) পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন।

আদালত বলেন, হাইকোর্টের কাজ কি তাহলে রুল মঞ্জুর বা খারিজ করা আর জামিন দেওয়া?

এ পর্যায়ে রিভিশন মামলার আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ব্লাস্ট বনাম রাষ্ট্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে রিভিউ চাওয়া হয়েছে সেখানে রিমান্ডে আইনজীবী রাখার বিষয়ে কোন বিরোধিতা করা হয়নি।

এরপরই হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জের মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করেন। ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনবে আদালত।