বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মানববন্ধন
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মানববন্ধন

কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা: দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি মহিলা পরিষদের

রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ধানমন্ডিতে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সম্মুখে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।

বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক মাকছুদা আক্তার, নির্যাতনের শিকার স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষে তার মা শাহনূরী আমিন ও সহপাঠীবৃন্দ।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সহিংসতার শিকার নারীদের পাশে থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রাজধানীর কলাবাগানে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং মর্মান্তিক। নারীর প্রতি সমাজের নেতিবাচক যে দৃষ্টিভঙ্গি চলমান তার কারণে মেয়েটি এ ঘটনার শিকার হলো। ঘটনাটি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে অত্যন্ত সংক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। এখনো বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে দেশ আটকে আছে। এই ঘটনায় একজন অভিযুক্তকে কেবল আটক করা হয়েছে কিন্তু বাকি তিনজনের বিষয়ে প্রশাসনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছেনা। ছাত্রীর শরীরে থাকা জখমের কথা বলা হলেও বিষয়টিকে বারবার উপেক্ষা করে কেবল ‘সম্মতি’ তে ঘটনাটি ঘটেছে এমন বলার চেষ্টা হচ্ছে। সম্মতির বিষয়ে এখনো অনেকের জানার অভাব আছে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে, মিথ্যা ছবি ব্যবহার করে ঘটনার শিকার ছাত্রীর পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ছাত্রীকে দোষারোপ করা হচ্ছে।

এছাড়া অপরাধ আড়াল করতে অভিযুক্ত দিহানের বয়স কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দিহানের দীর্ঘসময়ের আচার-আচরণ, চলাফেরা কেমন সেসব নিয়ে কোন তথ্য প্রকাশ হতে দেখা যাচ্ছে না। প্রভাবশালীদের আধিপত্য, ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ঘটনার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায্য বিচার প্রাপ্তি বাধাগ্রস্থ হতে পারে এমন আশংকা থেকে মহিলা পরিষদের নেত্রীবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ সকল ধরণের নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

এসময় সকলে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া এবং ছাত্রীর পরিবারের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন। কেননা এধরণের ঘটনার সঠিক বিচার না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকবে,নির্যাতনের শিকার নারীদের বিচারপ্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্থ করবে।

এসময় নেত্রীবৃন্দ নারীর প্রতি সকল ধরণের সহিংসতা প্রতিরোধ করতে সামাজিকভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠুবিচারের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এসময় ৪টি দাবি তুলে ধরেন।

মানববন্ধন শেষে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শ্লোগান শ্লোগান দিতে দিতে জাতীয় সংসদ ভবন পর্যন্ত গিয়ে কর্মসূচী সমাপ্ত হয়।

মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে সংগঠনের ঢাকা মহানগরের লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন, আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুন-নেসা খান, আইনজীবি ফাতেমা খাতুন, অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী, সাংবাদিকবৃন্দ এবং সংগঠনের কর্মকর্তাসহ আনুমানিক ১০০ জন উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন কর্মসূচির সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র আইনজীবি দীপ্তি সিকদার।