ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে খসড়া নীতিমালা হাইকোর্টে দাখিল

তিন মাসের মধ্যে ওটিটি তদারকির খসড়া নীতিমালা দাখিলের নির্দেশ

ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম নির্ভর কনটেন্ট প্রকাশের ওপর তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে এর একটি খসড়া আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তথ্য সচিব ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এর আগে আদালতে এ বিষয়ে বিটিআরসি ও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বিটিআরসি ও সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজির পৃথক প্রতিবেদন দাখিলের পর ওই আদেশ দেওয়া হয়।

ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ওই সব প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ-তদারকিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ গত বছরের ১২ জুলাই হাইকোর্টের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে রিটটি দাখিল করেন।

রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই হাইকোর্টের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম থেকে অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট সরাতে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। নেটফ্লিক্সের মতো বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।

একই সঙ্গে ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব পেজ প্ল্যাটফর্ম থেকে দেশে অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন বিষয়ে অনুসন্ধান করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রিটটি নিয়মিত বেঞ্চে দাখিল করতেও বলা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় রিটটি হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে দাখিল করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ওটিটি–নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম থেকে অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধ বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এ ছাড়া ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম তদারকির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্যসচিব, সংস্কৃতিসচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এদিকে বিটিআরসি ও পুলিশের প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে।

শুনানিতে বিটিআরসির আইনজীবী জানান, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই নীতিমালার খসড়া তিন মাসের মধ্যে দাখিল করতে তথ্যসচিব ও বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পরে বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও এগুলো থেকে রাজস্ব আদায়ে নীতিমালা তৈরির জন্য গত বছরের জুন-জুলাইয়ে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়।

রিট আবেদনকারীর যুক্তি, ওটিটি-নির্ভর বিদেশি ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নেটফ্লিক্স, হইচই, আমাজন ও জি-ফাইভ রয়েছে। বঙ্গ, বিনস, বাংলাফ্লেক্স ও বায়োস্কোপ হচ্ছে দেশীয় ওটিটি-নির্ভর প্ল্যাটফর্ম।

এগুলোর মধ্যে শুধু নেটফ্লিক্স ও বিটিআরসির মধ্যে গত বছর ক্যাশ সার্ভিস নামে একটি চুক্তি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এসব প্ল্যাটফর্মে অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট আছে।

এ ছাড়া এমএক্স প্লেয়ার অ্যাপের মাধ্যমে ফি না দিয়েই ওই সব ওয়েব সিরিজ দেখার সুযোগ রয়েছে। এতে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে রিটটি করা হয়।