মো.সামিউল আলম
মো.সামিউল আলম

গণপিটুনি: মানবাধিকার, সংবিধান ও প্রচলিত আইন

মো.সামিউল আলম: বর্তমান সময়ের এক আতংকের নাম গণপিটুনিতে মেরে ফেলা। আপনি পত্র-পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় প্রায়ই এই নিউজটা দেখবেন। ধরুন ফেসবুকে স্ক্রল করছেন তো হঠাৎ ফেসবুকের নীল দুনিয়ায় দেখলেন ভেসে উঠল দেশের কোথাও একজনকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হলো। আর, এখন আবার নতুন এক সংস্করণ যোগ হয়েছে। শুধুমাত্র গণপিটুনিতেই থেমে থাকছেনা বিষয়টি। গণপিটুনির পর আবার আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

কিছুদিন আগে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ধর্মীয়গ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা একব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে মর্মে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়। পরে গণপিটুনির ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

এভাবে গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপিটুনিতে বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার কোনোটায় ছেলে ধরা বা ডাকাত সন্দেহে, আবার কোনো কোনো ঘটনায় সামান্য চোর সন্দেহেও পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব বলছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারাদেশে গণপিটুনিতে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা জেলায় ৯ জন। ২০১৮ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬৫জন। ওই বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রথম সাত মাসেই নিহত হয়েছেন ৫৩ জন। সে বছর গণপিটুনিতে হত্যার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। ২৫ জন মারা গেছেন সেখানে। ঢাকায় নিহত হয়েছেন ২২ জন।

গত বছরের ২০ জুলাই সকালে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তাসলিমা বেগম রেণু। তার দুই সন্তানের ভর্তি বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে স্কুলের গেটে কয়েকজন নারী তাসলিমার নাম-পরিচয় জানতে চান। পরে লোকজন তাসলিমাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে কয়েকশ লোক একত্র হয়ে তাসলিমাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়। স্কুলের ফাঁকা জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর জখম করে। পরে উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পরিসংখ্যানটা নিশ্চয় আঁতকে উঠার মতো। কিন্তু আরো আঁতকে উঠার মতো বিষয় হচ্ছে এই ঘটনা গুলো ঘটানো হচ্ছে শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে। কখনো চোর সন্দেহে, কখনো ডাকাত, কখনো ছেলে ধরা। পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে। এক সময় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। এরপর শুরু হয় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি। এ থেকে সাধারণ পথচারী, নিরপরাধ ব্যক্তি, ভবঘুরে ও নারী কেউই রক্ষা পাননি। শুধু তারাই নয় রক্ষা পায়নি মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পর্যন্ত!

উদাহরণস্বরূপ নারায়ণগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজ নামে এক ব্যক্তির। গণপিটুনির আতঙ্কে গ্রামাঞ্চলে রাতে চলাচল সীমিত হয়ে আসে। কমে যায় স্কুলের উপস্থিতিও। অভিভাবকদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয়। সন্তানদের স্কুলে পাঠানোও বন্ধ করে দেন কেউ কেউ।

এখন প্রশ্ন হলো কেউ যদি চুরিও করে, কেউ যদি ডাকাতিও করে, কেউ যদি ছেলেধরা হয়েও থাকে তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। আপনি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছেন হঠাত করে পাশে হইহই আওয়াজ পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখলেন চোর সন্দেহে একজনকে পেটানো হচ্ছে আপনিও সেখানে দুইটা কিল-ঘুষি দিয়ে সামিল হলেন।

এই যে যাচাই-বাছাই ছাড়া একজনকে পিটানো হলো এটি তার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া ছাড়া আর কিছুই না। চোর, ডাকাত কিংবা ছেলেধরার শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ, প্রশাসন রয়েছে। যদি সাধারণ মানুষ কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলে সেটা আইনের ব্যতায় ঘটানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

আসুন বিষয়টিকে সংবিধানের আলোকে দেখি। আমাদের, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। কিন্তু যাকে আপনি চোর, ডাকাত বা ছেলেধরা সন্দেহে মেরে ফেললেন সে তো আইনের আশ্রয় লাভ থেকে বঞ্চিত হলো। যার মানে দাঁড়ায়, সংবিধানের স্পষ্ট লংঘন।

তারপর দেখুন অনুচ্ছেদ ৩১ বলছে আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনামে বা সম্পত্তির হানি ঘটে। এই যে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয় এটা নিশ্চয় কোন আইনানুযায়ী হয় না। সুতরাং, আরো একবার সংবিধানের নির্দেষ অমান্য করে একজন ব্যক্তির দেহ এবং জীবনের অধিকার কেড়ে নেয়া হলো।

অনুচ্ছেদ ৩৩ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির অবশ্যই তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ এবং নিজেকে সমর্থন করার অধিকার রয়েছে। যাকে আপনি চোর সন্দেহে আটক করলেন তাকে পুলিশে দিয়ে দেন। সেতার আইনজীবী দ্বারা নিজেকে সমর্থন করবে তারপর যদি প্রমাণিত হয় সে চোর তাহলে তার শাস্তি হবে কিন্তু আপনি এর আগেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন। সুতরাং, এখানেও সংবিধানের স্পষ্ট লংঘন।

এবার, যদি একটু আন্তর্জাতিক কিছু দলিল থেকে রেফারেন্স দেখাই তাহলে আমরা বুঝব গণপিটুনির মতো ঘটনা কিভাবে আন্তর্জাতিক দলিলগুলোকে লংঘন করছে।

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা-১৯৪৮, এর ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে “Everyone has the right to life, liberty and security of person” এই অনুচ্ছেদ একজন মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে তার জীবন যাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি- ১৯৬৬ এর অনুচ্ছেদ ৬ একই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছে।

ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের অনুচ্ছেদ ২ মানুষের জীবনের অধিকার নিয়ে আলোকপাত করেছে তেমনিভাবে অনুচ্ছেদ ৫ নিরাপত্তার কথাটি তুলে ধরেছে।

শুধু তাই নয় আমাদের পাশের দেশ ভারতের সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদেও জীবনের অধিকারের কথা বলা আছে। আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদেও বিষয়টি আলোকপাত করা হয়েছে। সুতরাং, গণপিটুনির ঘটনাটি স্পষ্ট একটি আন্তর্জাতিক দলিলের লংঘন।

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা-১৯৪৮ এর অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী – “No one shall be subjected to torture or to cruel, inhuman or degrading treatment or punishment”. অর্থাৎ, আপনি কারো প্রতি নির্যাতন, অত্যাচার, নিষ্টুরতা, অমানবিক আচরণ প্রদর্শন করতে পারবেন না।

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি- ১৯৬৬ এর অনুচ্ছেদ ৭ একই বিষয় ধারন করে মানে নির্যাতনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

তাছাড়া, ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস এর অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী কারো প্রতি নির্যাতন প্রদর্শন নিষিদ্ধ। সুতরাং, গণপিটুনির ঘটনাটি আরো একবার আন্তর্জাতিক দলিলের বিধানকে লংঘন করলো।

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা- ১৯৪৮ এর অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সবাই আইনের আশ্রয় লাভ করতে পারে। যেটি কিনা
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি- ১৯৬৬ এর ২৬নং অনুচ্ছেদেও বলা হয়েছে। ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪তেও এই বিষয়টি বলা হয়েছে। সুতরাং, এখানেও গণপিটুনির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সকল দলিলকে লংঘন করছে।

এবার, আসা যাক গণপিটুনির শাস্তি নিয়ে আইন কি বলে। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের কোন আইনেই গণপিটুনির জন্য কোন বিধান নাই। তবে, গণপিটুনিতে যদি কেউ মারা যায় আর সেটা যদি খুন হিসেবে আদালতে প্রমাণ করা যায় তাহলে দন্ডবিধি- ১৮৬০ এর ২৯৯ ধারায় উল্লিখিত খুনের অপরাধে অপরাধীকে ৩০২ দ্বারার অধীনে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তদুপরি জরিমানা দন্ডেও দন্ডিত করা যায়।

আর, যদি ৩০০ ধারায় উল্লিখিত শাস্তিযোগ্য নরহত্যা প্রমাণ করা যায় তাহলে ৩০৪ ধারার অধীনে ১০ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা যাবে। গণপিটুনিতে শুধু আঘাত করার দায়ে ৩১৯ ধারায় উল্লিখিত আঘাতের অপরাধে অপরাধীকে ৩২৩ ধারার অধীনে ১ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা করা যাবে।

আর, যদি গণপিটুনিতে মারা না যায় কিন্তু গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে ৩২০ ধারায় উল্লিখিত গুরুতর আঘাতের দায়ে অপরাধীকে ৩২৫ ধারার অধীনে ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা যায়।

যদি কেউ গণপিটুনিতে অংশগ্রহনের জন্য ১২১ ক ধারা অনুযায়ী অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে ১২০ খ ধারা অনুযায়ী গণপিটুনির অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করলে যেভাবে সাজা প্রদান করা হত এই ক্ষেত্রেও তাকে সেভাবে সাজা দান করা হবে।

এবার, প্রশ্ন আসতে পারে গণপিটুনি তো কেউ একা করেনা এখানে অসংখ্য মানুষ থাকে। তাহলে সবাইকেই কি আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে? হ্যা, যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে সবাইকেই শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

আমাদের দন্ডবিধিতে “সাধারণ অভিপ্রায় ” নামে একটি মূলনীতি রয়েছে ৩৪ ধারায়। যেখানে বলা আছে যে একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যদি কতিপয় ব্যক্তি একত্রিত হয় এবং সেই কাজটি যদি অপরাধমূলক কাজ হয় তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি একই অপরাধের জন্য দায়ী হবেন।

সুতরাং, কে গণপিটুনিতে আগে গিয়ে যুক্ত হলো আর কে পরে গিয়ে যুক্ত হলো সেটি দেখার বিষয় নয়। দেখার বিষয় একজন ব্যক্তি গণপিটুনিতে অংশ নিয়েছে কিনা। অংশ নিলেই সে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। মানে কেউ একটা থাপ্পড় অথবা ঘুষি মেরেও গণপিটুনির অপরাধের দায়ে সাব্যস্ত হতে পারে।

এতক্ষণ বললাম দন্ডবিধির আওতায় শাস্তির কথা। কিন্তু, গণপিটুনির জন্য আলাদা একটি আইন করা খুব জরুরি আমাদের দেশে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে ২০১৭ সালে “The Protection from Lynching Act-2017” নামে একটি আইনের খসড়া তৈরী করে কিন্তু আইনটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ঐ আইনের ৭ ধারায় গণপিটুনির সাজা নিয়ে বলা হয়েছে। পিটুনির সাজা হিসেবে যা বলা হয়েছে-

আঘাত করলে ৭ বছরের কারাদন্ড এবং ১ লাখ রুপি জরিমানা। গুরুতর আঘাত করলে ১০ বছরের জেল এবং ৩ লাখ রুপি জরিমানা। পিটুনিতে মেরে ফেললে- সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫ লাখ রুপি জরিমানা। ঐ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী কেউ যদি পিটুনিতে অংশ নিতে ষড়যন্ত্র করে অথবা সহায়তা করে তাহলে গণপিটুনিতে অংশগ্রহণ করলে যেরুপ শাস্তি হতো তার ক্ষেত্রেও সেরূপ শাস্তি হবে।

ঐ আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি এমন কোন ব্যক্তির বিচার কার্যে অথবা গ্রেফতার করতে শাস্তি প্রদানে বাধাদান করে তাহলে যে ব্যক্তি বাধাদান করবে তাকে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং জরিমানায় দন্ডিত করা হবে।

ভারতের, Tahseen S.ponawalla V. Union of India and others – মামলায় ভারতের সাবেক প্রধানবিচারপতি দীপক মিশ্র ভারতের সংসদকে গণপিটুনিকে আলাদা একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে নতুন একটি আইন তৈরী করার নির্দেষ দেয় যেটি কিনা গণপিটুনি কমাতে সাহায্য করবে। এখন, অবশ্য রাজস্থান এবং পশ্চিমবঙ্গে এই বিষয়ক আইন তৈরী করা হয়েছে।

The Rajasthan Protection from Lynching Bill-2019 এর ধারা -৮ অনুযায়ী গণপিটুনির সাজা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাজার মধ্যে রয়েছে পিটুনিতে আঘাতের শাস্তি হিসেবে ৭ বছরের জেল এবং ১ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। গুরুতর আঘাতের জন্য ১০ বছরের কারাদন্ড এবং কমপক্ষে ২৫০০০ রুপি জরিমানা যেটি ৩ লাখ রুপি পর্যন্ত হতে পারে।

আর, পিটুনিতে মৃত্যুর শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং কমপক্ষে ১ লাখ রুপি জরিমানা যেটি ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত হতে পারে। আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী কেউ যদি পিটুনিতে অংশ নিতে ষড়যন্ত্র করে অথবা গণপিটুনিতে সহায়তা করে তাহলে গণপিটুনিতে অংশগ্রহণ করলে যেরুপ শাস্তি হতো তার ক্ষেত্রেও সেরুপ শাস্তি হবে।

ঐ আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি এমন কোন ব্যক্তির বিচার কার্যে অথবা গ্রেফতার করতে অথবা শাস্তি প্রদানে বাধাদান করে তাহলে যে ব্যক্তি বাধাদান করবে তাকে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ১ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানায় দন্ডিত করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গে, The West Bengal (Prevention of lynching) Bill-2019 তৈরী করা হয়। এই আইনের ৭ ধারায় পিটুনিতে কাউকে আঘাত করার জন্য ৩ বছরের কারাদন্ড এবং ১ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে।

গুরুতর আঘার করার শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১০ বছরের কারাদন্ড অথবা কমপক্ষে ২৫হাজার রুপি জরিমানা যেটি সর্বোচ্চ ৩ লাখ রুপি পর্যন্ত হতে পারে। আর, পিটুনিতে কাউকে মেরে ফেললে তার শাস্তি হিসেবে ফাঁসি হতে পারে অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে এবং জরিমানা হবে যেটি সর্বনিম্ন ১ লাখ রুপি এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত হতে পারে।

আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী কেউ যদি পিটুনিতে অংশ নিতে ষড়যন্ত্র করে অথবা গণপিটুনিতে সহায়তা করে তাহলে গণপিটুনিতে অংশগ্রহণ করলে যেরুপ শাস্তি হতো তার ক্ষেত্রেও সেরুপ শাস্তি হবে।

ঐ আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি এমন কোন ব্যক্তির বিচার কার্যে অথবা গ্রেফতার করতে অথবা শাস্তি প্রদানে বাধাদান করে তাহলে যেব্যক্তি বাধাদান করবে তাকে ৩ বছরের কারাদন্ড এবং ১ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানায় দন্ডিত করা হবে।

অন্যদিকে আমাদের বাংলাদেশে, আইনজীবী ইশরাত হাসানের দায়ের করা একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত গণপিটুনি রোধে পাঁচ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। পাঁচ দফা নির্দেশনা হলো–

১. পুলিশের প্রত্যেক সার্কেল অফিসার তার অধীনের প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ছয়মাসে অন্তত একবার গণপিটুনি প্রবণতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বৈঠক করবেন।

২.গণপিটুনির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার প্রচার কার্যক্রম গণমাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত রাখবে।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অডিও, ভিডিও, মেসেজ যা গুজব সৃষ্টি বা গণপিটুনিতে মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে দুষ্কৃতকারীরা একাজে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৪. যখনই গণপিটুনির কোনো ঘটনা ঘটবে, কোনো রকম দেরি না করে তখনই থানার ওসি এফআইআর নিতে বাধ্য থাকবেন এবং তা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে অবহিত করবেন।

৫. গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম হত্যার ঘটনায় ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তর বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অবহেলার ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

এক্ষেত্রে পঞ্চম দফার নির্দেশনা শুধু তাসলিমা বেগম রেণু হত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাকি চারটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যার তিনটি প্রতিরোধমূলক হিসেবে এবং একটি প্রতিকারমূলক।

আমাদের দেশে এখন গণপিটুনি বিরোধী একটি আইন প্রণয়ন করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন গুজব যেন ছড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে এবং হাইকোর্টের উপরোক্ত দফাগুলো মেনে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করলে গণপিটুনি কমানো সম্ভব।

মো.সামিউল আলম: শিক্ষার্থী; আইন বিভাগ; নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।

তথ্যসূত্র
মানবাধিকার ভাষ্য; গাজী শামছুর রহমান,
দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন,
blog.ipleaders.in, Firstpost.com.