দীর্ঘ ৭৮ বছর ধরে চলছে মামলা, বেঁচে নেই বাদী-বিবাদীও
জেলা জজ আদালত, বগুড়া

বিচারক-আইনজীবী বিতর্ক, বগুড়া আদালত অঙ্গনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ

হত্যা মামলার আসামিকে জামিন না দেয়ার জের ধরে বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বগুড়া জেলা জজ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকারকে গালি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বার সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম মন্টুর বিরুদ্ধে।

তবে গালি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতি ওই বিচারকের আদালত গত ১৭ জানুয়ারি থেকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও বেশির ভাগ আইনজীবী বার সমিতির সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিয়মিত কাজকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।

অপরদিকে ব্যক্তিগত বিষয়ে বার সমিতি কেন কোর্ট বয়কটের কর্মসূচি দিয়েছে সেই বিষয় জানতে চেয়ে সিনিয়র আইনজীবী সদরুল আনাম রনজু বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বগুড়া জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন এবং নারী ও শিশু নির্যাত দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জ্জী বলেন, গত ১১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলায় আসামির জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু। বিচারক তার আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।

তখন রেজাউল করিম মন্টু জজ সাহেবের উদ্দেশে বলেন, কেন জামিন মঞ্জুর করলেন না? তখন জজ সাহেব বলেন আমরা অর্ডার দেয়ার পরে কোনো ব্যাখ্যা দেই না। তখন তিনি (রেজাউল করিম মন্টু) জজের ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

পরে তারা বার সমিতির একটি তলবি মিটিং ডাকেন। সেই মিটিংয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু এবং আরেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুল জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

তারা আরো বলেন, রেজাউল করিম মন্টু ওই ঘটনায় তার কাছের কিছু লোকজন নিয়ে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এভাবে প্রকাশ্যে গালি দেয়ায় ওই কোর্টের ৮০ জন হিন্দু আইনজীবী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে। সিভিল রুল ৫৭১/১২। এমন তথ্যও দিয়েছেন ওই দুই পিপি।

এ দিকে বগুড়া বার সমিতি একজন আইনজীবীর ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য কেন কোর্ট বয়কটের মতো কর্মসূচি দিলো তার কারণ জানতে চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ করেছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সদরুল আনাম রনজু।

তিনি জবাব দেয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন বার সমিতির নেতৃবৃন্দকে। তার মতে বার সমিতি কোনো ব্যক্তির হয়ে কর্মসূচি দিতে পারে না। বারের ওই কর্মসূচি গঠনতন্ত্রবিরোধী।

এ বিষয়ে বগুড়া বার সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম টুকুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, লিগ্যাল নোটিশটি সংবিধানবিরোধী। তবে তিনি নিজে ওই নোটিশের জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বগুড়া জেলা জজ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকার মাঝেমধ্যেই আইনজীবীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন। রেজাউল কমির মন্টুর সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছেন। ওই সময় মন্টুর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। গতকাল ২৬ জানুয়ারি বার সমিতির সভায় আদালত বর্জন কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট রেজাউল কমির মন্টু বলেন, আমি তাকে গালি দেইনি। কেউ যদি এমন কথা বলে সেটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার একজন মক্কেল হত্যা মামলায় জেলে আছে। সে হত্যার সাথে জড়িত নয়। সরাসরি হত্যার সাথে জড়িত এমন আসামিদের জামিন দিলেও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। আমি শুধু আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে তার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলেছি। তিনি জোর দিয়ে বলেন ওই দিন তিনি কাউকে গালি দেননি।