শিশু অহনার চিকিৎসায় অবহেলার রুলের রায় মঙ্গলবার

শিশু অহনার চিকিৎসায় অবহেলার রুলের রায় মঙ্গলবার

সাড়ে চার বছরের শিশু মির্জা অরুনিমা শাহপারের (অহনা) চিকিসায় অবহেলা জনিত মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলায় স্কয়ার হাসপাতাল ও এর দুই চিকিৎসককে অব্যাহতির আদেশ বহালের বিরুদ্ধে করা আবেদনে জারি করা রুলের রায় ঘোষনা করা হবে আগামী মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)।

বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজিব সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় দিবেন।

এর আগে রুলের ওপর কয়েক কার্যদিবস চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রায়ের এ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

শুনানিতে আবেদনকারী স্থপতি মির্জা শাহপার জলিলের পক্ষে অংশ নেন ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান। অন্যদিকে স্কয়ার হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট বাকির উদ্দিন ভূইয়া।

ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান জানান, মির্জা অরুনিমা শাহপার (অহনা) ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট অকাল মৃত্যুবরণ করে। অহনার বাবা স্থপতি মির্জা শাহপার জলিল তার মেয়েকে বাঁচাতে চিকিৎসককে দেখান। পরে ওই বছরের ১৫ আগস্ট দেশের প্রথিতযশা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। এক পর্যায়ে অবস্থার অবনতি হলে ১৭ আগস্ট তাকে ব্যাংককের সামিতিভেজ শ্রীনাকারিন শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। স্কয়ার হাসপাতালে অহনার ভিপি শান্ট অপারেশনের পর আড়াই দিনেও তারা শিশুটির ব্রেইনের পোস্ট অপারেটিভ অবস্থা জানার জন্য সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই করেনি| অথচ অহনাকে ব্যাংককের হাসপাতালে ভর্তির পরপরই লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তারা সিটি স্ক্যান করেছিল যাতে অহনার দুটি ব্রেইন হেমোরেজ সংঘটনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় | যদিও পরবর্তীতে অহনাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপের পর অহনার বাবা বুঝতে পারেন যে অহনার চিকিৎসাতে অবহেলায় মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনায় মির্জা শাহপার জলিল বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী নওশাদ উন-নবী, ডা. মো. মাসুদুর রহমান, অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন এবং স্কয়ার হাসপাতালকে আসামি করে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ক/৩৪ ধারায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

ডা. মো. মাসুদুর রহমান ওই সময়ে স্কয়ার হাসপাতালের শিশু বিভাগ এবং পিআইসিইউ কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বিভাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বাদীর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তৎকালীন ভিসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এই আদেশের প্রায় দেড় বছর পর সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয় উল্লেখিত কারণে ভিকটিমের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী বা আদৌ দায়ী কি না তার পূর্ণাঙ্গ মতামত দেয়া সম্ভব নয়।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট ডা. কাজী নওশাদ উন-নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বাকীদের অব্যাহতি প্রদান করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে বাদী মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করলে, তা খারিজ করে দেন আদালত। ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ২০১৭ সালে একটি আবেদন করেন তিনি।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি মাহমুদুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ আবেদনের শুনানি শেষে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বহাল রাখা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

ওই রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় ঘোষনার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।