ফেনী জেলা জজ আদালত
ফেনী জেলা জজ আদালত

ধর্ষিতার পরিবারকে সমাজচ্যুতর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ, পত্রিকার খবর আমলে নিয়ে জনস্বার্থে আদালত

ফেনীর ফুলগাজীতে ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান জন্ম দেয়ায় কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সত্যতা তদন্ত করে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ফেনীর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুর রহিম জনস্বার্থে The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ২৫ ধারার অনুবলে জাস্টিস অফ দি পিস (Justice of the Peace) এর কর্তৃত্ব বলে মঙ্গলবার ২ মার্চ এই আদেশ জারি করেন।

দৈনিক ফেনীর তালাশ পত্রিকায় প্রকাশিত “পুলিশ সদস্য কর্তৃক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ- সমাজপতি কামরুল মাষ্টারের অবিচারে পরিবার সমাজচ্যুত” শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনটি অদ্য এ আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, “বিয়ে না হলেও সন্তান জন্ম দেওয়ায় কিশোরীর পরিবারকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দিলেন স্থানীয় মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার কথিত সমাজপতি কামরুল মাষ্টার ও স্থানীয় প্রভাবশালী মুসল্লীরা। পুলিশ সদস্যের ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সন্তান জন্ম দেওয়া নারীর পরিবারের সঙ্গে এমেন অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম বসিকপুর গ্রামের ১নং ওয়ার্ডে। ওই নারীর বড় ভাই বলেন, স্থানীয় মুরুব্বি কামরুল মাষ্টার ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িতে এসে আমাদের বিরুদ্ধে একটি সভার সিদ্ধান্তের কথা বলে যান। তিনি হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, পুকুরের পানি ছাড়া গ্রামের কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। গবাদিপশু ঘরের বাইরে বাঁধা যাবে না। গ্রামের কোনো দোকানে যাওয়া যাবে না। কারও সঙ্গে মেশা যাবে না। গ্রামের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে কেউ তোমাদের সাথে মিশতে আসবে না।

ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, স্থানীয় গ্রামের বাজারে আমার ইলেকট্রিক দোকান খুলতে দেয়া হয় নি। সমাজের লোকজন ঘটনার বিচার না করে আমাদের এক ঘরে করে দিয়ে অবিচার করলো। এখন আমরা অমানবিক জীবন যাপন করছি। কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না, কোথাও যেতে পারছি না। আমার আপন ভাই আমার ঘরে আসতে পারছে না, তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের উদ্বৃতি দিয়ে প্রেরিত ওই আদেশে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক দেশের প্রতিটি নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃত (Guaranteed)। কথিত সমাজপতি কর্তৃক কাউকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনী ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী। এমতাবস্থায় উক্তরূপ প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা আছে কিনা তাহা তদন্ত পূর্বক আগামী ০৩ (তিন) কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ফুলগাজী থানা-কে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

আদালত সূত্রে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম কে জানানো হয়, ফেনীতে জাস্টিস অব দি পিস এর কার্যালয় থেকে এটি প্রথম কোন আদেশ। এ ধরনের কোন আদেশ এর আগে ফেনীর আদালত থেকে হয়নি।

এর আগে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ওই কিশোরীর মায়ের করা ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি একই উপজেলার বশিকপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির ১নং ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত আমিনুল ইসলামের পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওনকে (২১) রাঙ্গামাটি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান এর আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দি দেন ভুক্তভোগী কিশোরী। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিয়ের প্রলোভনে জুসের সাথে চেতনা নাশক ঔষধ খাইয়ে একাধিকবার ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে শাওন। এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় কিশোরীটি। জন্মের তিন দিন পর পরিবারের সম্মতিতে নবজাতককে দত্তক দেওয়া হয়।”