অভিযোগ ক‌রে সাড়ে ৬ হাজার ভোক্তা পুরস্কার হিসেবে পে‌য়ে‌ছেন এক কো‌টি টাকা

অভিযোগ ক‌রে সাড়ে ৬ হাজার ভোক্তা পুরস্কার হিসেবে পে‌য়ে‌ছেন এক কো‌টি টাকা

প্রতিদিন কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে ঠকছেন ভোক্তারা। আর তাই দিন দিন অভিযোগ জমে পাহাড় হচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরে। গত সাড়ে ৭ বছরে প্রায় ৪০ হাজার অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। এসব অভিযোগের প্রায় ৯৬ শতাংশ নিষ্পত্তি করেছে সংস্থাটি। আর অভিযোগ ক‌রে ৬ হাজার ৬৪৫ জন ভোক্তা পুরস্কার হিসেবে পে‌য়ে‌ছেন এক কো‌টি ১৬ লাখ টাকা।

‌রোববার (১৪ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে। ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপল‌ক্ষে এ সংবাদ স‌ম্মেল‌নের আ‌য়োজন করা হয়।

এসময় উপ‌স্থিত ছি‌লেন অধিদফত‌রের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বাবলু কুমার সাহা, প‌রিচালক শামীম আল মামুন, উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, আফ‌রোজা রহমান, শাহনাজ সুলতানা, মাসুম আরে‌ফিন, বিকাশ চন্দ্র দাস এবং সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল প্রমুখ।

অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চল‌তি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের অভিযোগ জমা পড়েছে ৬ হাজার ৮২৭টি। অথচ ৭ বছর আগে ২০১৩-১৪ বছ‌রে ১৬ কোটি ভোক্তার মধ্যে অভিযোগের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭৯টি। ৭ বছরে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে ৫১ গুণের বে‌শি।

ভোক্তা অধিকার অধিদফতর জানায়, ২০০৯-১০ সাল থে‌কে ২০১৩-১৪ অর্থবছ‌রে ভোক্তাদের অভিযোগের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭৯টি। পর্যায়ক্র‌মে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯৫টি।

অধিদফত‌রের কার্যক্রম শুরুর পর থে‌কে থে‌কে সব‌শেষ চল‌তি বছ‌রের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৩৯ হাজার ৮০১টি অভিযোগ জমা প‌ড়ে‌ছে। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৯০৯টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তিহীন এবং তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে ১৮৯২টি অভিযোগ। আলোচিত সম‌য়ে অভিযোগের নিষ্পত্তি ক‌রে জ‌রিমানা করা হ‌য়ে‌ছে ৪ কো‌টি ৭০ লাখ ৮৬ টাকা। এর ম‌ধ্যে ৬ হাজার ৬৪৫ জন ভোক্তা পুরস্কার হিসে‌বে পে‌য়ে‌ছেন এক কো‌টি ১৬ লাখ ২৫২ টাকা।

চল‌তি বছ‌রের ফেব্রুয়া‌রি‌ পর্যন্ত বাজার অভিযান পরিচালনা ক‌রে ৯৭ হাজার ৩০৯টি প্র‌তিষ্ঠান‌কে ৬৮ কো‌টি ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৪২ টাকা জ‌রিমানা ক‌রা হ‌য়ে‌ছে। সব মি‌লি‌য়ে এ পর্যন্ত মোট ৭২ কো‌টি ৮৪ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা জ‌রিমানা ক‌রা হ‌য়ে‌ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করার অপরাধে (ধারা ৪৩)। এ অপরা‌ধে ২১ কো‌টি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা জ‌রিমানা ক‌রা হ‌য়ে‌ছে।

পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করায় জ‌রিমানা করা হ‌য়ে‌ছে ১৩ কো‌টি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করায় ১০ কো‌টি ৭৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বি‌ক্রির অপরা‌ধে ৫ কো‌টি ১২ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং ওজন বা পরিমাপের কারচুপির অপরা‌ধে ৫ কো‌টি ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা জ‌রিমানা ক‌রা হ‌য়ে‌ছে।

অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, সীমিত সংখ্যক জনবল ও সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে দেশব্যাপী ভোক্তা-অধিকার সুরক্ষিত করতে নিরলসভাবে আমরা কাজ কর‌ছি। অধিদফতরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিক হয়ে দায়িত্ব পালনের কারণে পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় এ অধিদফতরের ওপর মানুষের আস্থা ও প্রত্যাশা বহুগুণ বে‌ড়ে‌ছে। আমরা নিয়‌মিত অভিযান কর‌ছি। পাশাপা‌শি ব্যবসায়ী ও ভোক্তা‌দের স‌চেতনতা বাড়া‌তে পরামর্শ দি‌য়ে যা‌চ্ছি। জরিমানা নয়, আমাদের উদ্দেশ্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তা‌ উভয়‌কে স‌চেতন করা।‌ প্রয়োজনীয় লোকবল পেলে আমাদের এ কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হবে।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে জানা‌নো হয়, ১৫ মার্চ সোমবার বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- মুজিব বর্ষে শপথ করি, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি।

দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার বিকেল ৩টায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠা‌নে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া শিল্পস‌চিব কে এম আলী আজম, এফবিসিসিআই সভাপ‌তি শেখ ফজলে ফাহিম, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি গোলাম রহমান উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য স‌চিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।

অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করা হয়েছিল। এ আইনে ভোক্তারা অভিযোগ করতে পারেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শাস্তি হিসেবে জরিমানা বা কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। জরিমানা হলে ভোক্তাকে মোট জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া হয়।