স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা হলে কি করবেন!
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

তালাক প্রাপ্তির পর অন্যত্র বিয়ের আইনী প্রক্রিয়া ও বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক:
তালাকের পর স্বামী বা স্ত্রী কতদিন পর অন্যত্র বিয়ে করতে পারে অর্থাৎ নতুন স্বামী বা নতুন স্ত্রী পেতে আইনগতভাবে কতদিন ইদ্দত পালন করতে হয় আর স্বামী মারা গেলে কতদিন পর বিধবা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করতে পারে কিংবা অন্যত্র বিয়ের পরও মৃত স্বামীর সহায় সম্পত্তি কতটুকু পাবে, না বঞ্চিত হবে-এসকল বিষয়ে আজকের আলোচনা।

একজন স্বামী যেমন তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, তেমনি একজন স্ত্রীও তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে। তালাকের পর ইদ্দতকালীন সময় অর্থাৎ ৯০ দিনের খোরপোশ দেয়া ছাড়া স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। তবে গর্ভাবস্থায় একজন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীলোকের জন্য পরিষ্কার নির্দেশনা হলো-তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সে ভরণপোষণ পাবে।

তালাক দেবার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে যে, স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক দিতে চাইলে যাকে তালাক দেয়া হবে তিনি যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/সিটি কর্পোরেশন মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিবেন। সেই সাথে তালাক গ্রহীতাকে অর্থাৎ যাকে তালাক দেয়া হচ্ছে তাকে তালাকের উক্ত নোটিশের নকল কপি প্রদান করতে হবে।
তালাকের নোটিশ লেখা বা পাঠানোর কাজটি তালাকদাতা নিজেও করতে পারেন, আবার অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারেন। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিষ্ট্রি করে এডি সহযোগে পাঠালে ভাল হয়। তাহলে প্রাপক রিসিভ করলে প্রাপ্তি স্বীকার আপনার কাছে ফিরে আসবে।

প্রাপক রিসিভ না করলেও কেন রিসিভ করেনি মন্তব্য সম্বলিত মূল চিঠিখানা আপনার নিকট ফিরে আসবে। অনেকেই প্রশ্ন করেন স্ত্রী কিংবা স্বামী চিঠি গ্রহন না করলে তালাক হবে কি-না? সহজ উত্তর-আপনার দায়িত্ব যাকে তালাক দিচ্ছেন তিনি সর্বশেষ যে ঠিকানায় বসবাস করেন বা করছেন, সেই ঠিকানায় চিঠি পাঠালেই আপনার দায়িত্ব শেষ। চিঠি গ্রহন করুক বা না করুক, তাতে কোনো যায় আসে না। আর চিঠি ডাক যোগে না পাঠিয়ে সরাসরি পাঠালে নোটিশের এক কপি করে রিসিভ করে নেয়া ভাল।

চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক বলবৎ হবে না। কারন নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপোষ বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবে এবং উক্ত সালিশী পরিষদ এ জাতীয় সমঝোতার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই অবলম্বন করবে। উল্লেখ্য, নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর হবে।

কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোনরুপ শালিশী পরিষদ বা আপোষ সমঝোতার চেষ্টা না করেই থাকে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, চেয়ারম্যান বা মেয়রদের উপর এ বিষয়ে বাধ্যতামূলক কোন নির্দেশনা নেই। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। কাজেই তালাক কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী ৯০ দিন সময় পেয়ে থাকে। এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপোষ মীমাংসা হলে বা নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।

নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই যদি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে উক্ত বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে। কারণ তালাক সম্পূর্ণ কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত পক্ষগন আইনসম্মতভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই থেকে যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইদ্দত চলাকালে যদি কেউ বিবাহ করে থাকে, তাহলে কি হবে, সহজ উত্তর ১. ইদ্দত চলা অবস্থায় বিবাহ করলে সে বিবাহ অনিয়মিত বিবাহ হিসেবে গণ্য হবে। ২. সন্তান জন্মিলে বৈধ হবে। তবে পক্ষগণের মধ্যে দায়-দায়িত্ব সীমিত হবে। ৩. স্বামী বা স্ত্রীর যে কোন একজনের মৃত্যু হলে কেউ কারোর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে না।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।        ইমেইল:seraj.pramanik@gmail.com